কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: 'নির্যাতিতার পরিবারকে টাকা দেওয়ার কথা বলিনি।' সোমবার নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক থেকে এমনটাই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা রাজপথের আন্দোলন ও প্রতিবাদের পিছনে কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্র রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "আন্দোলনের পিছনে কেন্দ্রের ষড়যন্ত্র এবং বামপন্থীদের যোগ রয়েছে।"
এদিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, "প্রয়োজনে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।" গত 14 অগস্ট ম্যান্টনে প্রাক স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে 10 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে। মমতার সেই মন্তব্যের পর বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এদিন ঠিক তার উলটো অবস্থানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, নির্যাতিতার পরিবারকে তিনি টাকা দেওয়ার কথা বলেননি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "অনেকে বলছেন আমি টাকার কথা বলেছি। মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। এগুলি অপপ্রচার, চক্রান্ত। পরিবারকে কোনও টাকার কথা বলা হয়নি। মেয়ের স্মৃতিতে ভালো কাজ করতে হলে বলবেন- এই কথা বলেছিলাম । কোথায় টাকার কথা বলা হয়েছে তার প্রমাণ দিতে হবে ৷ " মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, "রেসিডেন্ট ডক্টরস ফোরামের তরফ থেকে আমার কাছে একটি দাবি পত্র দেওয়া হয়েছিল। সেখানে অন্য দাবির সঙ্গে আর্থিক সাহায্যের বিষয়টিও ছিল।" এদিন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তারদের উদ্দেশে বলেন, "একমাস হয়ে গেল, আমি অনুরোধ করব তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন ৷ সিবিআইকে বলব তাড়াতাড়ি বিচারের ব্যবস্থা করুন। আসল কেসটা যে নির্যাতিতার তাঁকে বিচার দিন।"
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, আন্দোলনকারীরা পুলিশকে এড়িয়ে আন্দোলন করেছেন। কোনও আন্দোলনের ক্ষেত্রেই পুলিশের অনুমতি ছিল না। তারপরেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারটা দেখে নিন। আমি খুশি বাংলার পুলিশ আন্দোলনে কিছু করেনি। এখানে যত আন্দোলন হয়েছে পারমিশন নেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আমিও বলছি আপনারা কাজে যোগ দিন। আপনারা যদি কথা বলতে চান 5-10 জন আসতেই পারেন। আপনারা স্বাস্থ্য ভবনে গিয়েছিলেন, আপনাদের যে দাবি ছিল সব পূরণ করা হয়েছে।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে তাঁরা যেসব দাবি জানিয়েছিলেন সেগুলি সব মেনে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই আন্দোলনের কারণে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে প্রভাবিত হয়েছে সে তথ্যও এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সেই তথ্য জানিয়েছেন। আন্দোলনের কারণে সাত লাখ মানুষ পরিষেবা পাননি বলে জানা গিয়েছে। 70 হাজার ভর্তি হওয়া রোগীকে পরিষেবা দেয়া যায়নি। সাত হাজার হাজার পরিকল্পিত সার্জারি পিছিয়ে দিতে হয়েছে। দেড় হাজারের মতো মানুষ ক্যাটল্যাব পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 23 জনের এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে এও বলা হয়েছে, সিনিয়র ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টার পরেও এই ঘটনা ঘটেছে।