দার্জিলিং, 13 নভেম্বর: চায়ের সুনামকে বদনাম করার প্রচেষ্টা চলছে । বুধবার দার্জিলিংয়ের চা নিয়ে এমনই উদ্বেগের কথা খোলা মঞ্চ থেকেই প্রকাশ্যে জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নাম না-করলেও প্রতিবেশী দেশ নেপালের চা নিয়েই যে তাঁর এই উদ্বেগ, তা কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন তিনি ।
যেখানে ইংল্যান্ডের রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেকে দার্জিলিংয়ের চা জায়গা করে নিয়েছিল, সেই জায়গায় দার্জিলিংয়ের চায়ের বদনাম হওয়াটা যে আশঙ্কার, তা মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে এদিন ৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি যখন বিদেশে গিয়েছিলাম, তখন দার্জিলিং চা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল । কিন্তু এখন দার্জিলিংয়ের চা নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে । দার্জিলিংয়ের চাকে বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে । আমি সেটা কোনও জায়গায় হতে দেব না । তার জন্য পদক্ষেপ করা হবে ।"
এই প্রসঙ্গে বলাবাহুল্য, নেপালের চায়ের গুণগতমান নিয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছিল উত্তরের চা সংগঠনগুলি । নেপালের চায়ের গুণগতমান খারাপ থাকায়, তা বিক্রির জন্য দার্জিলিং চায়ের নামে খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল । এই নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রর কাছে বহুবার দরবার করেছে বিভিন্ন চা সংগঠনগুলো ।
এমনকি নেপালের চা যখন বিদেশে যাচ্ছে, তখন সেগুলোকে দার্জিলিং চায়ের নামে বিক্রি ও দার্জিলিংয়ের চায়ের মতো চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ । এতে দার্জিলিংয়ের চায়ের সুনাম খর্ব হচ্ছে । নেপালের চায়ের গুণগতমান পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা না থাকায়, এর মুনাফা সম্পূর্ণভাবে নেপাল লুঠ করছে বলে অভিযোগ ।
সেই অভিযোগই কার্যত তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দার্জিলিংয়ের টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য মহেন্দ্র বনসল বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্বেগ যথাযথ । কারণ, নেপালের চা এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । নেপালের চায়ের গুণগত মান খুবই খারাপ । অথচ বিদেশে সেগুলোকে দার্জিলিং চায়ের নামে বিক্রি করা হচ্ছে । নেপালের চা দার্জিলিংয়ের চায়ের ধারেকাছে নেই । নেপালের চায়ের অবিলম্বে গুণগত মান পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত ।"
দার্জিলিংয়ের চা এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা প্রতি কেজি দর পর্যন্ত বিক্রি হয় । সেখানে নেপালের চায়ের মান খারাপ হওয়ায় দেড়শো থেকে দুশো টাকা প্রতি কেজির বেশি দাম ওঠে না । নেপালে প্রতি বছর মোট 80 লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে । তার মধ্যে প্রায় 50 থেকে 55 লক্ষ কেজি ভারতে রফতানি হয়ে থাকে ।
অন্যদিকে, দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন প্রতি বছর 60 লক্ষ কেজি । নেপালের চা যাতে বিদেশে ও খোলা বাজারে দ্রুত বিক্রি হয়, তার জন্যই অসাধু ব্যবসায়ীরা দার্জিলিংয়ের চা বলে নেপালের চা বিক্রি করছে ।