কলকাতা, 2 অক্টোবর: দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার লেখায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে উঠে এল আরজি কর প্রসঙ্গ । এবারও উৎসব সংখ্যায় প্রতি বছরের মতোই কলম ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর লেখা প্রতিবেদনটির নাম, 'কেন এই আইনটা করলাম ? কেন ? কেন ? কেন ?' ৷ সেখানেই আরজিকর এবং অপরাজিতা আইনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
প্রসঙ্গত, আরজি করের চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল । প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে আন্দোলন আছড়ে পড়ছে শহরের রাজপথে । জুনিয়ার ডাক্তার থেকে শুরু করে বিশিষ্ট জন, এমনকি সাধারণ মানুষও এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন । আর এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য বিধানসভায় 'অপরিজিতা উওম্যান অ্যান্ড চাইল্ড বিল' পাশ করায় রাজ্য সরকার । এই বিলে এই ধরনের ঘটনায় ফাঁসির সংস্থান রাখা হয়েছে । দলীয় মুখপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কলমে লেখা প্রতিবেদন মূলত সেই প্রেক্ষাপটেই লেখা ।
নিজের প্রতিবেদনে আরজি কর প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, "আরজি কর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনায় আমার হৃদয় জ্বলে ছারখার হয়ে গিয়েছে । মনে হচ্ছিল, আমার পরিবারের কেউ যেন চলে গেল । কোনও মানুষই এটা মেনে নিতে পারবে না । আমারও বাড়িতে মেয়ে আছে, আমিও একজন অভিভাবিকা ৷ আমি বুঝি যন্ত্রণা কোথায় বিদ্ধ করে, কেন শাস্তির দাবিতে মানুষ উদ্যত হয় ।"
এখানেই শেষ নয়, এই প্রতিবেদনেরই আরও একটি অংশে আরজি কর প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । যেখানে তিনি লিখছেন, "তবে এটা মনে করবেন না, আমি এসব তথ্য দিয়ে আরজি করের ঘটনার বীভৎসতাকে হ্রাস করতে চাইছি । আমি এই তথ্যগুলি দিচ্ছি, শুধু এটা বোঝানোর জন্য যে, ধর্ষণ সত্যিই একটি জাতীয় সামাজিক সমস্যা । আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন একটি গুরুতর বিষয় নিয়েও বিরোধীরা রাজনীতি করে । আরজি করের মেয়েটার কথা ভেবে জ্বলে গেছি আমি । আমি চাইছি দোষীদের নিকৃষ্টতম শাস্তি ।"
একদম প্রতিবেদনের শেষে এসে মুখ্যমন্ত্রী লিখছেন, "আমরা যদি সত্যিই এই ভয়ংকর অপরাধের শিকার আমার মা-বোনেদের ন্যায়বিচার দিতে চাই, তাহলে এরকম একটি stringent, time-bound, anti-rape law চালু করা অপরিহার্য । সেই লক্ষ্যে আমরা 'অপরাজিতা' বিল পাশ করে আইন আনতে অগ্রণী হয়েছি । আমি আশা করব, আগামী দিনে বাংলার প্রতিটি মেয়ে এর ফলে আরও সুরক্ষিত থাকবে ।"
রাজ্যে আরজি করের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ মানুষের একটা অংশ সরকারের বিল আনার এই প্রয়াসকে আন্দোলনকে 'স্তিমিত করে দেওয়ার একটা কৌশল' হিসাবে দেখছিল । ঠিক তখনই নিজের দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যায় এই আইন নিয়ে নিজের অবস্থান, তাঁর আবেগকে তুলে ধরে আইন আনার পেছনে তাঁর মূল ভাবনা স্পষ্ট করার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷