কলকাতা, 6 নভেম্বর: পোস্তা বাজারে 51তম জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে এসে সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিগত একের পর এক নির্বাচনে শহুরে ভোটারদের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কমেছে ৷ বিশেষ করে বড়বাজার-সহ হিন্দিভাষী এলাকায় শাসকদল তাদের সমর্থন হারিয়েছে ৷ সেই জায়গা থেকে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "পুরসভা, বিধানসভা হোক বা লোকসভা - পোস্তা-সহ বড়বাজার এলাকায় ভোট পাই না আমরা । তবে প্রত্যেক বছর আমি এখানে আসি । ভোট চাইতে আসি না । আসি আপনাদের ভালোবাসার টানে । আমরা জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে চলি । আপনারা যে ভাষায় কথা বলুন, যে ধর্মই পালন করুন, সকলে মিলে মিশে থাকুন । বাংলাকে নিজের ঘর ভাবুন ।"
প্রসঙ্গত, এদিন শুধু বড়বাজার নয়, এই মঞ্চ থেকেই চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের দশটি জগদ্ধাত্রী পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তারপরই বক্তব্য রাখতে উঠে একের পর এক বার্তা দিয়েছেন তিনি । এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে বড় বাজারে বারবার আগুন লাগার প্রসঙ্গও । একইভাবে উঠে এসেছে কলকাতার দীর্ঘদিনের পুরনো বাড়ি নিয়ে সমস্যার কথা ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বড়বাজারে আগে কী অবস্থা ছিল আপনারা জানেন । আমাদের জন্য যথা সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করেছি । কলকাতা পোর্টের সঙ্গে আপনাদের যে সমস্যা ছিল তা সমাধানের চেষ্টা হয়েছে । টাস্ক ফোর্সেও আপনাদের রাখা হয়েছে । আগে এখানে কেউ কেউ ভয় দেখালেও এখন ভয়ের পরিবেশ নেই । তবুও বলছি, কেউ যদি আপনাদের ভয় দেখায়, সরাসরি পুলিশে অভিযোগ করুন । ব্যবসা আপনাদের অধিকার । এখানে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না ।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "আমি ভোটের জন্য এখানে আসিনি । একমাত্র 42 নম্বর ওয়ার্ডে আমার একজন কাউন্সিলর জিতেছে । কিন্তু এখানে পুরসভার তিনটি আসনে বিজেপিই জেতে । এমনকি লোকসভার নির্বাচনে আপনাদের সমর্থন আমরা পাইনি । আমি ভোটের কথা বলতে এখানে আসিনি । সেটা আপনাদের দেখতে হবে কাকে দেবেন । কিন্তু বাস্তব যাচাই করে দেখবেন, যখন প্রয়োজন হয় তখন কাউকে পাওয়া যায় না । 365 দিন কাকের মতো আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকি । কোকিল আসে কুহু কুহু করে চলে যায় । কিন্তু কাক সারা বছর আপনাদের চোখের সামনে থাকে । তার ডাক আপনাদের পছন্দ নাও হতে পারে । কিন্তু সে তো সারা বছর ধরে আপনাদের সঙ্গে থাকে । প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তাকে আপনারা গালিও দেন ।"
এদিন এই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলকে মিলেমিশে থাকার বার্তা দেন । তিনি বলেন, "আপনারা কেউ বিহার থেকে এসেছেন, কেউ উত্তরপ্রদেশ থেকে অথবা কারও বাস অন্য কোনও রাজ্যে । কখনও এখানে তার জন্য আপনাদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে ? কখনও কি ভাষা জাতি ধর্মের নাম করে আপনাদের হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে ? আপনারা কী খাবেন, কী পরবেন আমরা তা নিয়ে কিছু বলেছি ? বাংলায় থাকলে সকলে মিলেমিশে থাকুন । বাংলাকে নিজের ঘর ভাবুন ।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বড়বাজারে আগুন লাগলে যে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে তার আশঙ্কার কথা শোনা গেল । তিনি বলেন, "আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, বড়বাজারে যদি আগুন লাগে তাহলে দমকলকে দোষ দেবেন না । কেন প্লাস্টিক-সহ দাহ্যবস্তু মজুত করেন আপনারা । আপনাদেরও ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে এই কারণে । জীবনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি । তাই আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যা যা পদক্ষেপ করার করতে হবে । এক্ষেত্রে সকলকেই সিস্টেম মানতে হবে । যদি আগুনের ঘটনায় কোনও মৃত্যু হয়, তাহলে পুলিশ তো এসে আপনাদেরই ধরবে ।"
এদিন বড়বাজারের আগুনের সমস্যা সমাধানে পুলিশকে পোস্তা বাজার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পুরনো বাড়ি নিয়েও এদিন একটি কমিটি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার একটা বড় সমস্যা ভগ্নপ্রায় পুরনো বাড়িতে দিনের পর দিন নাগরিকদের বসবাস করা । এই বিষয়টা নিয়েও এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, "অনেক ঘর পুরনো হয়ে গিয়েছে । আমরা পুরনোকে সম্মান করি । তাদের ছুড়ে ফেলে দিই না । যদি কোথাও পুরসভা নোটিশ দেয় যে, এই বাড়ি যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে, এতে জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে, সেই বাড়িতে থাকবেন না । আপনাদের বাড়ি কেউ নিয়ে নিতে পারবে না । নতুন বাড়ি তৈরি করুন । প্রয়োজনে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করে ব্যবসা করুন, আপনারাও থাকুন ।"