মালদা, 27 মে: এক কংগ্রেস নেতাকে থানায় কয়েক ঘণ্টা সম্পূর্ণ নগ্ন করে রাখল পুলিশ ! শুধু তাই নয়, এই অবস্থায় তাঁকে থানা চত্বরে ঘোরানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠল মানিকচক থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নেতার স্ত্রী ৷ অভিযোগ গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার ৷
প্রসঙ্গত নির্যাতিত কংগ্রেস নেতার স্ত্রী ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ৷ ঘটনাটি ঘটেছে 23 মে, বৃহস্পতিবার ৷ পুরনো একটি মামলার ভিত্তিতে সেদিন রাতে বন্ধুদের আসর থেকে শাহজাহান শেখ নামে ওই কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করা হয় ৷ গ্রেফতার করা হয় আরও এক কংগ্রেস নেতা ফিটু শেখকেও ৷ অভিযোগ, ওই রাতেই পুলিশ সাজাহান শেখকে কয়েক ঘণ্টা বিবস্ত্র করে থানায় ঘোরায় ৷ ব্যাপক মারধর করা হয় ফিটু শেখকেও ৷ পরদিন তাঁদের জেলা আদালতের তোলা হয় এবং ছয় দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয় ৷
শাহজাহান শেখের স্ত্রী কাদবানু বিবির অভিযোগ, রাজনৈতিক চক্রান্ত করে তাঁর স্বামীকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে ৷ 23 তারিখ রাতে এনায়েতপুর থেকে তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করেন মানিকচক থানার আইসি পার্থসারথি হালদার ৷ ঘটনাস্থল থেকেই মারতে মারতে তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে তাঁকে দু’ঘণ্টা সম্পূর্ণ নগ্ন করে রাখা হয় ৷ শুধু নগ্ন করে রাখাই নয়, সেই অবস্থায় তাঁকে বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ ৷ ঘোরানো হয় থানাতেও। সেই দৃশ্য থানার কনস্টেবল ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা ভিডিওগ্রাফি করেন ৷ এখন তাঁর স্বামীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেই ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে ৷ তিনি সম্পূর্ণ ঘটনার পুলিশি তদন্তের দাবি করছেন ৷ ঘটনায় মানিকচক থানার আইসি-সহ অন্যান্য পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজ্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করতে চলেছেন কাদবানু বিবি ৷
আরও পড়ুন: ভোটের জন্য বাড়ল গ্রীষ্মের ছুটির মেয়াদ, বাড়তি পাওনা স্কুল পড়ুয়াদের
এদিকে এই বিষয়ে ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মানিকচকের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেসের নেতা মোত্তাকিন আলম ৷ তিনি বলেন, "বিষয়টি আমরা পুলিশ সুপারের নজরে এনেছি ৷ তাঁকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে ৷ আমরা মানবাধিকার কমিশনেও এনিয়ে অভিযোগ জানাতে চলেছি ৷ পুলিশের উদ্দেশ্য, কংগ্রেসের দখলে থাকা ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত যেকোনও প্রকারে ভেঙে দেওয়া ৷ সেই চক্রান্তই করেছেন আইসি ৷ শাহজাহামের বিরুদ্ধে পুরনো কিছু মামলা থাকার কথা আমরা জানি ৷ কিন্তু ফিটুর শেখের নামে কোনও মামলা নেই ৷ তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হল? কেন বোমাবাজির মিথ্যে মামলা দেওয়া হল? জানি না ৷ এই নিয়ে আমরা কলকাতা হাইকোর্টেও যাবো ৷ পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে ভোটের ফল প্রকাশের পর আমরা থানা ঘেরাও কর্মসূচিও নিয়েছি ৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে শাহজাহান এখনও পর্যন্ত অনশন করে রয়েছেন ৷ তাঁর কিছু হলে সমস্ত দায় বর্তাবে মানিকচক থানার আইসির উপর ৷"
আরও পড়ুন: রেমালের জেরে নাগাড়ে বৃষ্টিতে নাকাল জনজীবন; ভোগান্তির শেষ কবে? জানাল হাওয়া অফিস
পুলিশের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন সিপিএম-র জেলা কমিটির সদস্য তথা সিটুর মালদা জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহাও ৷ তিনি বলেন, "গোপালপুর আর ধরমপুরকে তৃণমূল অশান্ত করে রেখেছে ৷ গোপালপুরের তৃণমূল নেতা নাসির সেখানে বোমের গুদাম তৈরি করে রেখেছেন ৷ তাঁরা ওই এলাকায় বাম-কংগ্রেসকে কোনও জায়গা ছাড়ে না ৷ পুলিশও তাঁদের মদত দিচ্ছেন ৷ এনিয়ে আমরা পুলিশ সুপারের কাছে ডেপুটেশনও দিয়েছি ৷ তৃণমূলের নির্দেশে ক’দিন আগে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে ৷ অভিযোগ থাকলে পুলিশ যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে ৷ কিন্তু এক অভিযুক্তকে পুলিশ সম্পূর্ণ নগ্ন করে থানায় ঘুরিয়েছে ৷ এটা মারাত্মক অভিযোগ ৷ এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে ৷ পুলিশ এটা করতে পারে না ৷ এই নিয়ে আমরা স্তম্ভিত ৷ বিষয়টি নিয়ে পুলিশি তদন্তের দাবি করেছি ৷"
আরও পড়ুন: রেমালেও অপরিবর্তিত প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি, মঙ্গলে কলকাতার মোদির রোড শো
পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর ধরমপুর সংলগ্ন গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বোমাবাজির ঘটনায় সাজাহান, ফিটু-সহ একাধিক কংগ্রেস নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে মানিকচক থানার পুলিশ ৷ ওই এলাকায় জমি দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল পরিচালিত গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী নাসিরুদ্দিন শেখের সঙ্গে সাজাহানের বিবাদ ৷ তার জেরে ধরমপুর ও গোপালপুর এলাকায় মাঝে মধ্যেই বোমাবাজির ঘটনা ঘটে ৷ মানিকচক ব্লকের মধ্যে একমাত্র ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতই কংগ্রেস পরিচালিত ৷ অনেকের অভিযোগ, শাসকদলের নির্দেশে ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ভেঙে দিতে তৎপর মানিকচক থানার পুলিশ ৷