আলিপুরদুয়ার, 23 নভেম্বর: মাদারিহাট জয় করল তৃণমূল ৷ এই প্রথমবার আলিপুরদুয়ারের এই কেন্দ্রে ফুটল ঘাসফুল ৷ জয়ের হ্যাটট্রিক হল না বিজেপির ৷
বাম জমানায় আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বিধানসভা আসনের ভোটাররা বরাবর আরএসপির উপর ভরসা রেখেছেন ৷ এমনকী 2011 সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের ভোটেও তাঁরা বেলচা-কোদাল প্রতীকেই আস্থা রাখেন ৷ 2016 ও 2021 সালে অবশ্য তাঁদের পছন্দে বদল হয় ৷ বাম ছেড়ে রামে আস্থা রাখেন তাঁরা ৷ আট বছর পর আবার তাঁদের রাজনৈতিক পছন্দে বদল হল ৷
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জয়প্রকাশ টপ্পো 28 হাজার 168 ভোটে জয়ী হয়েছেন ৷ তিনি পেয়েছেন 79 হাজার 186 ভোট ৷ বিজেপির রাহুল লোহার পেয়েছেন 51 হাজার 18 ভোট ৷ অথচ 2021 সালে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় 90 হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির মনোজ টিগ্গা ৷ তিনি এখন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ ৷ সেই কারণেই এই আসনটিতে উপনির্বাচন হয় ৷ তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় 40 ভোট কমল বিজেপির ৷
আলিপুরদুয়ারে বিধানসভার আসন পাঁচটি৷ একুশের ভোটে পাঁচটিতেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি ৷ পরে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন ৷ এবার মাদারিহাটও হাতছাড়া হল গেরুয়া শিবিরের ৷ যা নিয়ে সরব হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ বিজেপির জন বারলা ৷
তিনি এদিন বলেন, ‘‘উপনির্বাচনে আমাকে ছাড়াই ভোট করল জেলা সভাপতি (মনোজ টিগ্গা)। চা-বাগানে যে সংগঠনই করেন না তিনি ৷ চা-বাগানের নেতাদের পাত্তা দিল না । আমাকেও পাত্তা দিল না । 2021 সালে আমি আমার লোকসভায় সাত বিধানসভাতেই জিতিয়েছিলাম । কিন্তু মনোজ টিজ্ঞার অহংকারের কারণে মাদারিহাট জেতা আসনও হেরে গেলাম । এবার বুঝুক । এমন ভাবে চলতে থাকলে আগামী 2026 সালে সাফ হয়ে যাব ।’’
পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাব্বিশের বিধানসভা ভোট নিয়েও ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ছাড়া 2026 সালে জিতে দেখাক । জেলা সভাপতি নিজেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন । কাউকে ডাকছেন না । আবার প্রচার করতে বলছেন । আমি ছাড়া রেজাল্ট কী হল, সবাই দেখল ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চা-বাগানের শ্রমিকদের 16 শতাংশ বোনাস চুক্তিতে সই করে চলে এল । যদি বোনাস চুক্তিতে আমাদের সংগঠন সই না-করত, তাহলেই চা-শ্রমিকদের আমরা বোঝাতে পারতাম যে আমরা এই চুক্তি মানিনি । আজ জেলা সভাপতি ও রাজ্য নেতৃত্বের এক সিদ্ধান্তের কারণেই আমাদের এমন হার হল । আমাদের দলের প্রার্থী খারাপ ছিল না । কিন্তু নেতাদের জন্যই আমরা হেরে গেলাম ।’’
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে এই ফলাফলে ফ্যাক্টর হয়েছে ৷ তার সঙ্গে ছিল আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের টিম ওয়ার্কই জিতিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেসকে । যে জয়ের অন্যতম কারিগর শাসক দলের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক ৷
মাসকয়েক আগে লোকসভা নির্বাচনে তিনিই ছিলেন আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের প্রার্থী ৷ 2016 ও 2021-এর ভোটে জয়ী বিজেপির মনোজ টিগ্গার বিরুদ্ধে লড়েও তিনি জিততে পারেননি ৷ ফলে এবারের ভোট তাঁর কাছে অনেকটা সম্মানরক্ষার লড়াই ছিল ৷ দিনের শেষে তাঁর মুখই হাসিতে উজ্জ্বল হল ৷ আর নিজে না-হারলেও গড় খুইয়ে কিছুটা হলেও ম্রিয়মান হলেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ ৷
মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন থেকেই মাদারিহাট বীরপাড়ার মানুষজন বিজেপিকে আশীর্বাদ করে আসছিলেন । এবার আমাদের আশীর্বাদ করেননি । আমরা এই রায় মাথা পেতে নিলাম ।’’ পাশাপাশি তিনি ভোট-সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলতেও ভোলেননি ৷ তিনি বলেন, ‘‘উপনির্বাচনে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে । ভোটের দিন কীভাবে প্রার্থীর ওপর চড়াও হয়েছে । সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল । ভয়ের রাজনীতি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ।’’
তাই তাঁর মতে, ‘‘মানুষ আমাদের কাছ থেকে সরে গিয়েছে আমরা ভাবছি না । মাদারিহাটের মানুষ সাময়িক সরে গিয়েছেন । আমরা সমীক্ষা করব বাড়ি বাড়ি । আগামীতে চলার পথ ঠিক করব । কোথায় অঘটন ঘটেছে, হঠাৎ করে লোকসভার ভোটের পর এত ব্যবধান কেন হল, তা খতিয়ে দেখতে হবে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বিধায়ক সাংসদ কোনও কাজ করেনি এটা তৃণমূল ভুল বুঝিয়েছেন সাধারণ মানুষকে । বিধায়ক সরকার নয় । ফলে উন্নয়নের সব কাজ একজন বিধায়ক করতে পারেন না । আগামী দেড় বছর পর বিধানসভা ভোট । 2026 সালে এই পরিবেশ থাকবে, এটা ভাবলে চলবে না । 2026 সালে পরিবর্তনের ভোট হবে ।’’
বিজেপির আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি মনোজ টিগ্গা যাই বলুন, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, ‘‘মাদারিহাট বীরপাড়ার মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন । 2016 সাল থেকে বিজেপিও বিধায়ক কোনও উন্নয়ন হয়নি । আমরা মাদারিহাটে প্রথমবার জিতলাম । 2011 সালের পর এই প্রথম জিতলাম আমরা । দু’বারের বিধায়ক কিছুই করেনি । 2026 সালে বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারের 5-0 তে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হবে । মাদারিহাট নির্বাচনে জয়লাম আমরা অক্সিজেন পেলাম ।’’