মেদিনীপুর, 7 ফেব্রুয়ারি: ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। মানে প্রয়োজনে কাউকে সাহায্য করার মতো ভালো কোনও অভ্যাসের শুরু হয় বাড়ি থেকেই। তবে সবসময় শুধ যে ভালোটার শুরু বাড়ি থেকে হবে তেমন ভাবার কোনও কারণ নেই। অপরাধের মানসিকতাও গড়ে উঠতে পারে চার দেওয়ালের মধ্যেই। ধীরে ধীরে সময়ের হাত ধরে অপরাধের সেই মানসিকতা বাড়তে বাড়তে বিরাট মহিরুহের চেহারা নেয়। তেমনই এক অপরাধির খোঁজ মিলল। কমবেশি 200টি চুরি করেছে বলে জেরায় জানিয়েছে সৌমাল্য চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। তবে এটুকু বললে কিছুই বলা হয় না। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক বেশি অবাক করে দেওয়ার মতো। সৌমাল্য ইংরাজিতে মাস্টার ডিগ্রি কমপ্লিট করেছে। রয়েছে এলএলবি'র ডিগ্রিও ৷ সম্প্রতি মেদিনীপুরে একটি চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয় সে। টানা জেরায় উঠে আসে এমএ পাস চোরের কীর্তি!
আসানসোলের বাসিন্দা সৌমাল্যকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বুধবার মেদিনীপুর কোর্টে তোলা হয় ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ক্লেপটোম্যানিয়ায় আক্রান্ত হয়েই চুরি করে বেড়ায় সৌমাল্য। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, পুলিশ হেফাজত পাওয়ার পর আরও তথ্য জানার কাজ হবে।এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ৷ ঘটনা ক্রমে জানা গিয়েছে, গত একমাস আগে মেদিনীপুর শহরের বিধাননগর এলাকায় একটি বাড়িতে চুরি হয়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে বাঁকুড়া থেকে সৌমাল্য চৌধুরী নামে এই যুবককে গ্রেফতার করে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। জেরায় স্বীকার করে চুরির ঘটনা । এরপর তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয় চুরি যাওয়া সোনার গহনা-সহ বেশ কিছু জিনিসপত্র । সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায় 200টি চুরির সঙ্গে যুক্ত বছর 35-এর সৌমাল্য। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি ৷ মা শিক্ষিকা ৷ পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও সে বিভিন্ন জেলায় একাধিক চুরি করেছে । জেরায় তা স্বীকারও করেছে ৷
সৌমাল্য ক্লেপটোম্যানিয়া রোগে আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে ৷ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি চুরি করার আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে পারে না । চুরি করার জন্য একপ্রকার উন্মাদ হয়ে যায় ৷ এই ধরনের ব্যক্তি ব্যক্তিগত বা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রচেষ্টায় চুরি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না। কখনও আবার চুরির নেশায় চুরিও করে সে । স্কুলজীবন থেকেই চুরির নেশা সৌমাল্যর ৷ কখনও বন্ধুদের বই, কলম বা আত্মীয়দের বাড়ি থেকে পছন্দের কোনও জিনিস চুরি দিয়েই শুরুটা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ক্রমে চুরির নেশা চেপে ধরে সৌমাল্যকে। সম্প্রীতি ঘাটালের আবাসনে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হন তিনি। পুলিশের কাছে সৌমাল্য জানিয়েছে, চুরি করার মানসিক রোগ ক্লেপটোম্যানিয়া রয়েছে তার ।
এই বিষয়ে মেদিনীপুরের কোতয়ালি থানার আইসি অমিত কুমার সিনহা মহাপাত্র ফোনে ইটিভি ভারতকে জানান, ছেলেটি এর আগে ঘাটালেও একাধিকবার চুরির ঘটনায় ধরা পড়েছে । এরই সঙ্গে চুরি হয়ে যাওয়া প্রচুর গহনা জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে ওর কাছ থেকে । তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ ওর সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন :