কুমোরটুলি, 24 সেপ্টেম্বর: একাধিক নামজাদা শিল্পীর আগামী প্রজন্ম যখন মাটির কাজ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন তখন বছর বাইশের রিমা যেন বিকল্প। পরিবারের তিন প্রজন্মের পর তিনি হলেন চতুর্থ প্রজন্ম যে এই মাটির প্রতিমা গড়ায় এবছর হতে খড়ি দিলেন। তার সঙ্গেই কুমোরটুলি চত্বরে সব থেকে কনিষ্ঠ শিল্পীর তকমাও তাঁর নামের পাশে জুড়ল।
একদিকে বাবার সঙ্গে ছোট থেকে হাতে-কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে স্থাপত্য বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি তাঁর। দুই অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনেই এবার বাবার পেশায় পথচলা শুরু করলেন রিমা।
পালবাড়ির মাটির টান-
নদিয়ার শান্তিপুরে আদি বসবাস ছিল ভূপতিচরণ পালের। স্বাধীনতার আগে কুমোরটুলি এসে শুরু করেছিলেন মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ। তাঁর হাত ধরেই ছেলে অতীন্দ্র নাথপাল শুরু করেন প্রতিমা তৈরি। পরের প্রজন্ম বর্তমানে খ্যাতনামা শিল্পী মিন্টু পাল। এখন তাঁর হাতের তৈরি ঠাকুর শুধু কলকাতার বড় পুজো বা জেলায় নয় পারি দিচ্ছে বিদেশেও। আর তারপরের প্রজন্ম মিনটুবাবুর কন্যা রিমা পাল এবার এই পেশায় হাতেখড়ি দিলেন ৷
মৃৎশিল্পী রিমা বলেন, "ছোট থেকেই ঝোঁক ছিল এই কাজে। বাবার সঙ্গে স্টুডিয়ো এসে প্রতিমার পায়ে আলতা দেওয়া বা হাতে কারুকার্য করা, মাটি লাগানোর কাজ করতাম। এরপর আর্ট কলেজের কথা শুনলাম। ভাবলাম এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও পড়াশোনা করা যায়। এখানে ঐতিহ্যশালী কাজ দেখেছি ও শিখেছি। স্নাতকোত্তর পড়তে গিয়ে রবীন্দ্র ভারতীতে গিয়ে আরও বেশি এই সমস্ত সম্পর্কে জানতে পারি।"
একদিকে শিক্ষাগত-পুঁথিগত অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা দুইয়ের মেলবন্ধন আগামীতেও করতে চান তিনি। এবার তিনি উত্তর কলকাতার একটি সর্বজনীন পুজোর প্রতিমা গড়ছেন। পাশাপাশি হায়দরাবাদে চলছে রিমার তৈরি শিল্পকর্মের কর্মশালা। তাঁর প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের প্রতি রিমার বার্তা, বহু শিল্পীর ছেলে, মেয়ে এই পেশায় না-এসে চাকরি বা অন্য কাজ করছেন। এভাবে চললে একসময় কুমোরটুলি হারিয়ে যাবে। তাই ভালোবেসেই এই পেশায় থাকুন।"
