চন্দ্রকোনা, 17 সেপ্টেম্বর: শিলাবতী নদীর জল বিপদ সীমা ছাড়িয়েছে ৷ নদীর জল গ্রামের অলিতে-গলিতে বাড়িতে কড়া নাড়ছে ৷ বাড়ির উঠোন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে নদীর জল ৷ ডুবেছে বাড়ির উঠোনে থাকা রান্না করার উনুন ৷ বন্ধ দু'বেলার রান্না ৷ গ্রামের মহিলা থেকে পুরুষ সবাই নিজের নিজের উঠোনে মাটির বাঁধ দিয়ে বাড়ির ভিতর বন্যার জল প্রবেশ আটকাতে হিমশিম খাচ্ছে ৷ ইতিমধ্যে জলের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি মাটির বাড়ি ৷
যে হারে নদীর জল গ্রামে প্রবেশ করছে, তাতে বসতবাড়ি রক্ষা হবে কি না, পরিবারের সদস্যদের কোথায় ঠাঁই হবে, এনিয়ে দুশ্চিন্তায় খাওয়াদাওয়া থেকে রাতের ঘুম উড়েছে চন্দ্রকোনার ভবানীপুর গ্রামের 200 টি পরিবারের ৷ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন জলবন্দি বাসিন্দারা ৷
পুজোর মুখে বন্যার এমনই ভয়াবহ ছবি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা 1 নম্বর ব্লকের মানিককুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামের ৷ এই গ্রামে প্রায় 200টি পরিবারের বসবাস ৷ গত চার দিন একনাগাড়ে ভারী বৃষ্টির জেরে ফুলেফেঁপে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে শিলাবতী নদী ৷ ভবানীপুর গ্রাম শিলাবতী নদীর তীরবর্তী ৷ এতেই চরম বিপাকে পড়েছেন পরিবারগুলি ৷
শিলাবতী নদীর বাঁধ জলে ডুবেছে ৷ এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি বলে দাবি গ্রামবাসীদের ৷ চরম আশঙ্কায় ও আতঙ্কে বাসিন্দারা ৷ বাড়ির ভিতর জল ঢোকা আটকাতে ও বসতবাড়ি রক্ষায় গ্রামের মহিলা থেকে পুরুষ সবাই বাড়ির উঠোনের মাটির বাঁধ দিয়ে জল আটকানোয় প্রাণপাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন ৷
এমনকী নদীর জল ঝাঁপিয়ে ডুবেছে পানীয় জলের ট্যাপ, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার থেকে বাড়ির শৌচাগার ৷ এককথায় জলবন্দি চন্দ্রকোনার ভবানীপুর গ্রামের 200 টি পরিবার ৷ গ্রামে গিয়ে দেখা গেল মহিলা পুরুষ মিলে বাড়ির উঠোনে মাটির বাঁধ দিয়ে বাড়ির ভিতরে জল ঢোকা আটকানোর জোর চেষ্টা করছেন ৷ উঠোনে থাকা উনুন জলে ডুবে যাওয়ায় বন্ধ রান্নাবান্না ৷
বাড়ির গবাদি পশুদের সরিয়ে গ্রামের রাস্তায় রাখা হয়েছে ৷ শেষ সম্বল বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে নারাজ বাসিন্দারা ৷ তাঁরা জানান, যে হারে নদীর জল বাড়ছে তাতে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে রয়েছেন ৷ তবে এই অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের উপর ক্ষোভ উগরে দেন ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দারা ৷
তাঁদের অভিযোগ, গ্রামে এহেন পরিস্থিতিতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে প্রশাসনে জানিয়েও কেউ খোঁজ নেয়নি ৷ অন্যদিকে ভবানীপুর গ্রামের পাশ দিয়ে শিলাবতী নদী বয়ে যাওয়ায় নদীর জল ঝাঁপিয়ে গ্রামের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপর দিয়ে বইছে ৷ গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে সেইসব জায়গায় মাটি ফেলে জল আটকানোর চেষ্টা করলেও সোমবার বিকেল নাগাদ জলের তোড়ে সেই রাস্তা ভেঙে গিয়ে হুহু করে জলে ঢুকছে কৃষি জমি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামেও ৷ কৃষিজমিতে বন্যার জল ঢোকায় বিঘের পর বিঘে জমি জলের তলায় ৷ ফলে কৃষিকাজেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা গ্রামের কৃষকদের ৷ অস্থায়ী ভাবে বাঁধ মেরামতের জন্য প্রশাসনের সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে দাবি গ্রামবাসীদের ৷ নদীর জলস্তর কবে কমে, সেদিকে তাকিয়ে চন্দ্রকোনার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দারা ৷
শিলাবতী নদীর জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে প্লাবিত ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা, ঘাটাল ও দাসপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা, জানিয়েছেন ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস ৷ প্রশাসনের তরফে প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ-সহ সমস্ত রকম কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান ৷