মালদা, 7 মার্চ: কীর্তনে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ উঠল অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর বিরুদ্ধে ৷ তাঁর বদলে সেন্টারটি চালান তাঁর দিদি ৷ তিনি নাকি সেন্টারে শিশুদের পড়াশোনা করান না ৷ এই অভিযোগে বুধবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের সুলতাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোহরপুর গ্রাম ৷ এদিন ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে দেখতে পেয়ে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ ৷ যদিও ওই কর্মীর দাবি, স্থানীয় একটি ক্লাব কীর্তনের জন্য তাঁর কাছে চার বস্তা চাল চেয়েছিল ৷ তা না-দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে ৷ গোটা ঘটনায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন সিডিপিও ৷ তবে তিনি ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ৷
অভিযুক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর নাম লক্ষ্মী দাস ৷ গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, লক্ষ্মী দাস সেন্টারে আসেন না ৷ সেন্টারটি চালান তাঁর দিদি ভারতী দাস ৷ এর ফলে সেন্টারে শিশুদের লেখাপড়া হয় না ৷ শুধু তাই নয়, সরকারি নিয়ম মেনে শিশু, গর্ভবতী ও সদ্য মায়েদের খাবারও দেওয়া হয় না ৷ সেন্টারের নিজস্ব ভবন থাকলেও সেখানে খাদ্য সামগ্রী রাখা হয় না ৷ সে সবকিছু নিজের বাড়িতেই রাখেন লক্ষ্মী দাস ৷
এক গ্রামবাসী প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “এই সেন্টারে যিনি চাকরি করেন, তিনি আসেন না ৷ তাঁর দিদি ভারতীদেবী সেন্টার চালান ৷ তিনি কিন্তু এখানে চাকরি করেন না ৷ তিনিই রান্না করেন ৷ সেন্টারে একজন সহায়িকা রয়েছেন ৷ তিনি অবশ্য রোজই কাজে আসেন ৷ সেন্টারের দিদিমণি জীবনে কোনওদিন বাচ্চাদের পড়াননি ৷ সপ্তাহে তিনদিন গোটা, তিন দিন অর্ধেক ডিম দেওয়ার কথা ৷ কিন্তু তিন থেকে চারদিন ডিম দেওয়া হয় ৷ আমার স্ত্রী গর্ভবতী ৷ অসুস্থ হওয়ায় বাপের বাড়িতে রয়েছে ৷ ওর নাম দিদিমণি কেটে দিয়েছেন ৷ বলেছেন, স্ত্রী ডিম পাবে না ৷"
লক্ষ্মীদেবীর কাছে যে চার বস্তা চাল দাবি করা হয়েছিল তা মেনে নিচ্ছেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্য বিকাশ মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, "গ্রামে অষ্টপ্রহর কীর্তন হবে ৷ আজ সকালে ম্যাডামকে রাস্তায় দেখে তাঁর কাছে চার বস্তা চাল চাঁদা হিসাবে চাই ৷ তিনি জানান, সেন্টারে চাল নেই ৷ তিনি অন্য জায়গা থেকে চাল ধার করে আনছেন ৷ এখানে আইসিডিএস সেন্টারের নিজস্ব ভবন রয়েছে ৷ তিনি সেখানে চাল কোনওদিনই রাখেন না ৷ আমি তাঁকে সেন্টারেই চাল রাখতে বলি ৷ তাতে মানুষও সব দেখতে পাবে ৷ এতেই তিনি আমাকে চোর, গুণ্ডা বলে গালাগালি শুরু করেন ৷"
লক্ষ্মী দাসের বক্তব্য, "আমি রোজই স্কুলে আসি ৷ কোনও কোনওদিন আসি না ৷ মানুষের সমস্যা হতেই পারে ৷ সরকারি নিয়ম মেনে সবাইকে খাবার দিই ৷ আমার সেন্টারে অনেক গ্রাহক ৷ সহায়ক একা কাজ করতে পারে না ৷ তাই আমার দিদি তাঁকে সাহায্য করেন ৷ এই পাড়ার ছেলেরা কীর্তনের জন্য চার বস্তা চাল চেয়েছিল ৷ আমি প্রতিবার কীর্তনের জন্য 1 হাজার 100 টাকা চাঁদা দিই ৷ সেন্টারেই এখন চাল নেই ৷ ধার করে খাওয়াচ্ছি ৷ আপনি অফিসে খোঁজ নিতে পারেন ৷ চাঁদার চাল না পেয়েই এরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে ৷"
এই ঘটনায় লক্ষ্মীদেবীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের সিডিপিও অলোক মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, "মনে হচ্ছে পুজো কমিটির দাবি মতো চাল না দেওয়াতেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে ৷ আমি গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছি ৷"
আরও পড়ুন: