কলকাতা ও সন্দেশখালি, 23 ফেব্রুয়ারি: ফের উত্তপ্ত সন্দেশখালি ৷ এবার এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে আটক করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তজনা ছড়াল উত্তর 24 পরগনার এই এলাকায় ৷ স্থানীয় বেড়মজুর গ্রামের বাসিন্দারা পুলিশের গাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়েও বিক্ষোভ দেখালেন ৷ সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির কয়েকজন মহিলা নেত্রী ৷ তাঁরাও স্থানীয়দের বিক্ষোভে সামিল হন ৷ পরে তাঁদের ও এলাকার মহিলাদের সরিয়ে চলে যায় পুলিশের গাড়ি ৷ যদিও পুলিশের একটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে যে কোনও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর তাঁদের কাছে নেই ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে যে ঘটনার সূত্রপাত, শুক্রবার কাছারি এলাকায় শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতাদের ভেড়ির আলাঘরে আগুন ও বাড়িতে ভাঙচুর চালানোকে কেন্দ্র করে । ভাঙচুরের সময় শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ । নিগৃহীত হন তাঁর স্ত্রী লতা মাইতিও । এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা হুঁশিয়ারি দিতে দেখা গিয়েছিল রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকারকে । এরপরই অভিযুক্তদের ধরতে বেড়মজুর গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ । সেখান থেকে পাঁচ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয় । আর তারপরই পুলিশের গাড়ি আটকে ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামের মহিলারা ।
তাঁদের দাবি, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে ধৃতদের কোনও যোগ নেই । এরা নিরীহ গ্রামবাসী । অধিকাংশই কাজ থেকে সবে বাড়ি ফিরেছিল । তখনই কোনও কিছু না দেখে পুলিশ এদের তুলে নিয়ে যায় । যদিও এই বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তথ্য প্রমাণ ও নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে যখন বাড়ি ফিরছিল, সেই সময় তাকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় । এই অবস্থায় অভিযোগ জানাতে পুলিশের গাড়ি আটকে বেশ কয়েকজন মহিলা বিক্ষোভ দেখান ৷ পুলিশের গাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের মহিলারা ।
সেই সময় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গ্রামেই ছিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ফাল্গুনি পাত্র । তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন বিজেপি ঘনিষ্ঠ দুই আইনজীবীও । তাঁরাও পুলিশের এই ধরপাকড়ের প্রতিবাদ করে গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হন । শুয়েও পড়েন পুলিশের গাড়ির সামনে । এই নিয়ে রীতিমতো পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে ফাল্গুনি পাত্রদের । শেষমেশ জোরজবরদস্তি সরিয়ে দেওয়া হয় বিজেপি নেত্রী-সহ গ্রামের মহিলাদের । এরপরই পুলিশের গাড়ি দ্রুত চলে যায় ঘটনাস্থল থেকে । ফাল্গুনি পাত্র পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো সরব হয়েছেন ৷
অন্যদিকে আরও অভিযোগ, এক মহিলার পায়ের উপর দিয়ে পুলিশের গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয় । এর পর কাঠ ফেলে রাস্তা আটকে দেওয়া হয় ৷ পাতা দিয়ে আগুন ধরানো হয় ৷ পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ৷ তবে এই আবহে বেড়মজুর 1 ও 2 নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার পরিস্থিতি শান্ত করতে নতুন করে গোটা বেড়মজুরজুড়ে 144 ধারা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে । সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুর 12টা থেকে 26 ফেব্রুয়ারি দুপুর 12টা পর্যন্ত সেখানে 144 ধারা বলবৎ থাকবে ।
এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ফের সন্দেশখালিতে যান ৷ তিনি এলাকায় টহল দেন ৷ সঙ্গে ছিলেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার-সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা । পুলিশ বলছে যে তারা এলাকায় শিবির করবে এবং প্রত্যেক গ্রামবাসীর অভিযোগ-অভাব তারা শুনবে এবং সেই মতো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন । কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের আইন হাতে তুলে না নেন, সেই আরজিও জানিয়েছে পুলিশ ৷ ঠিক সেই সময় নতুন করে একবার উত্তেজনা ছড়াল সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ এলাকায় ।
আরও পড়ুন: