কলকাতা, 4 জানুয়ারি: রেল লাইনে 'ট্রেসপাসিং' করলে কোনোভাবেই লোকাল ট্রেন সময়ে চলবে না ৷ আধিকারিকদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভের ঘটনায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে পূর্ব রেল ৷
শিয়ালদা শাখার জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, "শিয়ালদা শাখায় ট্রেসপাসিং অনেকদিনের সমস্যা ৷ যার সমাধান এখনও রেল হাতড়ে চলেছে ৷ বিভিন্ন জায়গায় এই ট্রেসপাসিং হয় ৷ তার ফলে ট্রেন চলাচলে দেরি হচ্ছে ৷ আমরা ট্রেসপাসিং বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর ৷ আমি করজোড়ে অনুরোধ করছি, ট্রেসপাসিং করবেন না ৷ ট্রেসপাসিং করলে লোকাল ট্রেন সময়ে চলবে না ৷"
বেআইনিভাবে রেললাইন পারাপার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ রেলের ভাষায় এই ধরনের পারাপার বা অতর্কিতে রেল লাইনের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়াকে 'ট্রেসপাসিং' বলা হয় । পূর্ব রেল জানিয়েছে, শিয়ালদা শাখার শান্তিপুর-কৃষ্ণনগর লাইনে এই ধরনের 'ট্রেসপাসিং'এর ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বেশি ঘটছে ৷ যা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ।
মূলত, লেভেল ক্রসিং বন্ধ হওয়ার পর দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে বেআইনিভাবে রেললাইন পারাপার করা হচ্ছে ৷ অর্থাৎ লেভেল ক্রসিংয়ের নিচ দিয়েই লাইন পারাপার করছেন মানুষজন ৷ কখনও আবার মোবাইলে কথা বলতে বলতে ট্রেন আসার শব্দ শুনতে না পেয়ে লাইন পারাপার করা হচ্ছে ৷ আর তাতেই ঘটছে বিপত্তি ৷
এমনকি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রেললাইন দিয়ে পার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৷ শুধু তাই নয়, বেশ কিছু জায়গায় রেললাইনের দু'ধার ধরেই গড়ে উঠেছে বসতি কিংবা বসেছে বাজার । আর এর ফলে সমস্যায় যেমন পড়ছে রেল, তেমনই সাধারণ মানুষ ৷ প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হচ্ছেন জনগণই ।
রেল জানিয়েছে, এই ধরনের 'ট্রেসপাসিং'য়ের সমস্যা একদিকে ট্রেনের গতি শ্লথ করছে ৷ ফলে সঠিক সময়মতো স্টেশনে পৌঁছতে পারছে না ট্রেন এবং ভুক্তভোগী হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ অন্যদিকে রেলের আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে । এছাড়াও প্রচুর মানুষ প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছেন । তাই এমন 'ট্রেসপাসিং' প্রবল 17টি জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে সুরক্ষিত করা হচ্ছে । তার জন্য এইসব জায়গায় লোহার গার্ড রেল বা লোহার তাঁর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে ৷ আবার কখনও ট্রেনের পরিত্যক্ত স্লিপার মাটিতে পুঁতে ফেন্সিং করা হচ্ছে । আর এতেই বিক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষজন ।
রেল সূত্রে খবর, সম্প্রতি শান্তিপুর কৃষ্ণনগর লাইনে 17টি জায়গায় ফেন্সিং করা হয়েছিল । এর ফলে 'ট্রেসপাসিং'য়ের অনেকটাই কমে এসেছিল । তবে বৃহস্পতিবার যখন রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ফেন্সিংয়ের কাজ পরিদর্শন করতে যান, তখন তাঁদের গাড়ি আটকে রেখে তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায় জনগণ । 20 মিনিট আটকে থাকেন রেলের আধিকারিকরা ৷ বিক্ষোভকারীদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, কেন ফেন্সিং করা হয়েছে ?
এর ফলে জনগণের ভালো করতে গিয়ে উলটে বিপদে পড়ছে রেল কর্তৃপক্ষই ৷ একরকম শাঁখের করাতের মতো অবস্থা তাদের । রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাইকিং পোস্টার ব্যানার নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হলেও ট্রেন দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না ৷ রেল লাইনে ধারাবাহিকভাবে 'ট্রেসপাসিং'য়ের ঘটনা কমানো সম্ভব হচ্ছে না । বিভিন্ন জায়গায় রেল পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছেন ৷ অবৈধভাবে পারাপার করার সময় ধরা পড়লে তাদের থেকে জরিমানাও নেওয়া হচ্ছে । কিন্তু তবুও হুঁশ ফিরছে না কারও ।