জলপাইগুড়ি, 15 মে: এই ঘটনা সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে ৷ বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে এসেছিলেন ভুটানের এক নাগরিক । কোভিডের সময় কাজ হারিয়ে তিনি আবার মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন । স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে অবশেষে 13 বছর পর তিনি বাড়িতে ফিরলেন ৷ থিম্পুর বাসিন্দা শেওয়াং ওয়াংদি । ছেলেকে পেয়ে আপ্লুত শেওয়াংয়ের বাবা ।
জানা গিয়েছে, থিম্পুর এক বেকারিতে কাজ করতেন শেওয়াং ৷ 2011 সালে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে থিম্পু থেকে সামসি হয়ে ভারতে চলে আসেন তিনি । এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি । চেন্নাইতে একটি হোটেলে কাজ করতে থাকেন তিনি । তাঁর পরিবারও ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয় । এভাবেই চলছিল ৷ তবে কোভিডের সময় শেওয়াং কাজ হারান । এরপরই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান । এরপর তিনি মুম্বইয়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সান্নিধ্যে আসেন ৷ তাদের চেষ্টাতেই অবশেষে দেশে ফিরলেন শেওয়াং ।
মুম্বইয়ের শ্রদ্ধা রিহ্যাবিলিটেশন ফাউন্ডেশনের সদস্য সমর বসাক বলেন, "আমরা চেন্নাই থেকে ফেজকে উদ্ধার করি । তাঁর নাম ফেজ বলেই জানতাম ৷ এরপর তাঁকে মুম্বইতে নিতে আসি । সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলে । তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন । ধীরে ধীরে চিকিৎসা করিয়ে আমরা ওঁর কাউন্সেলিং করে । প্রথমে নিজের নামটা বলতেই পারছিলেন না । পরে ধীরে ধীরে তাঁর নাম বলেন ৷ তবে কোথায় তাঁর বাড়ি, সেটা বলতে পারেননি । এরপর আমরা ওর মুখ থেকে ভুটানের কথা জানতে পারি ৷ তখনই জানা যায়, তাঁর বাড়ি ভুটানের থিম্পুতে ।"
সমর বসাক আরও বলেন, "আমরা কয়েক বছর ধরেই তাঁকে ভুটানে ফেরানোর চেষ্টা করছিলাম ৷ তবে পারছিলাম না । আমাদের বলা হয়, সামসিতে ওর বাড়ি । এরপর আমরা ভারত-ভুটান সীমান্ত সামসিতে আসি । সেখানে খোঁজ করেও কিছু পাইনি । ওর বাড়ির ঠিকানা কোনও ভাবেই পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ কিন্তু বাড়ির যাওয়ার জন্য তিনি মুখিয়ে ছিলেন । এরপর তিনি আমাদের জানান যে, তাঁর বাড়ি থিম্পুতে । সেখানে এসএসবি-এর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি । ভুটানের ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে কথা হয় । স্থানীয় সমাজসেবী রেজা করিম, রাজেশ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ হয় । অবশেষে থিম্পুতে তাঁর বাবা নামগে ওয়াংদির খোঁজ পাওয়া যায় । তাঁর বাবা এসে দুই দেশের সরকারি নিয়মকানুন প্রক্রিয়া সারেন ৷ এরপর নিজের দেশ ভুটানে ফিরে যান শেওয়াং ওয়াংদি ।"
এত বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগে ভাসলেন শেওয়াংয়ের বাবা নামগে ওয়াংদি ৷ তিনি বলেন, 2011 সালে আমার ছেলে ভারতে আসে ।তারপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি । আমরা ভেবেছিলাম সে আর নেই । সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম । অবশেষ তাকে পেলাম । খুব ভালো লাগছে । 13 বছর পর ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি ।"
বাড়ি ফেরার আনন্দে উচ্ছ্বসিত শেওয়াং ওয়াংদিও ৷ তিনি বলেন, "বাবাকে পেয়ে খুব ভালো লাগছে । ভুটান ছেড়ে আমি আর কোথাও যাব না । আমার খুব ভালো লাগছে ।"
চামুর্চির সমাজসেবী রেজা করিম ও রাজেশ প্রধান জানান, "থিম্পুর বেকারিতে বাবা ও ছেলে কাজ করতেন । 2011 সালে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান । তিনি ভারতে চলে আসেন কাজের জন্য ৷ চেন্নাইয়ের হোটেলে কাজ করতে করতেই কোভিডের সময় তাঁর কাজ চলে যায় । ফলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন । এরপর মুম্বইয়ের নিখিলেশ সাংরার মুম্বই রিহ্যাবিলিটেশন ফাউন্ডেশন তাঁকে চিকিৎসা করিয়ে ভালো করে তোলে । মুম্বই থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় । আমাদের সঙ্গে ওরা যোগাযোগ করে । আমরাও এসএসবি ভুটান ইমিগ্রেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই । ভুটানের প্রশাসন শেওয়াংয়ের বাবার খোঁজ করে তাঁকে সামসিতে ডেকে আনা হয় । এসএসবি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট কেপি প্রসূন খুব সহযোগিতা করেছেন শেওয়াংকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে । আমাদের খুব ভালো লাগছে এই কাজের অংশ হতে পেরে ।"
আরও পড়ুন: