কলকাতা, 9 অগস্ট: প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আজ শেষযাত্রা ৷ সিপিএম দলের পূর্বসূচি মতোই তাঁকে শুক্রবার পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সকাল থেকেই বাইরে ভিড় জমান বাম কর্মী-সমর্থকেরা। ফুল দিয়ে সাজানো হয় বুদ্ধবাবুর শববাহী গাড়ি। শেষযাত্রায় বুদ্ধদেবের চোখে সেই কালো ফ্রেমের চশমা। আজ সকাল সাড়ে দশটার পর বুদ্ধদেবের দেহ বার করা হয় পিস ওয়ার্ল্ড থেকে ৷ ইতিমধ্যেই বুদ্ধবাবুর শববাহী গাড়ি বিধানসভায় পৌঁছেছেন ৷ রয়েছেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য ৷ বিধানসভায় থাকে 11.30টা পর্যন্ত ৷
বিধানসভায় বুদ্ধবাবুকে শ্রদ্ধা জানান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানসভার মুখ্যসচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ৷ এছাড়াও রয়েছেন একাধিক বিরোধী-শাসক দলের নেতা ও মন্ত্রীরা ৷ পুষ্পস্তবক দিয়ে এদিন শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা। বুদ্ধবাবুর একেবারে মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ৷ সন্তানও রয়েছেন ৷ রয়েছেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা সুজন ভট্টাচার্য, মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্ররা ৷
উল্লেখ্য, বামপন্থী আন্দোলনের প্রথা মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণ সম্মান গ্রহণ করেননি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ 2022 সালে তিনি এই সম্মান ফিরিয়ে দেন সিপিএমের বর্ষীয়ান এই নেতা ৷
বিধানসভায় বুদ্ধবাবুর মরদেহ শায়িত থাকার পর সেখান থেকে সাড়ে 11টা নাগাদ দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিপিএমের রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সেখানেই মরদেহ শায়িত থাকবে বিকেল 3টে পর্যন্ত। সিপিএমের দলীয় দফতরে ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা ।
- বিভিন্ন জায়গা থেকে বাম কর্মী-সমর্থকরা পৌঁছেছেন ৷ রাজ্যের শেষ বাম মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকে ভেঙে পড়েছেন তাঁরা ৷ অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, "ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন উনি ৷ আরও কিছুদিন চেয়েছিলাম তিনি থাকুন ৷ যৌবনের দিশারি ছিলেন তিনি ৷ তা তিনি বাস্তবায়িত করতে পারেননি ৷ আমরা সেই স্বপ্ন পূরণ করব ৷"
- ফুলের মালা, পুষ্পস্তবকে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাম নেতাকে ৷ তাঁর থেকে আর কোনও বার্তা আসবে না ৷ শেষবারের মতো দেখতে ভিড় উপচে পড়েছে ৷ লাইনে দাঁড়িয়েছেন আম জনতাও ৷ প্রায় ঘণ্টা তিনেক রাখা থাকবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃতদেহ ৷ চোখের জলে বিদায় জানাচ্ছেন, বাম কর্মী-সমর্থকরা ৷ তৃণমূল বিধায়ক তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয় বলেন, "অত্যন্ত বড় ব্যক্তিত্ব ৷ যে সাত মহারথীর কথা বাম নেতৃত্বে বলা হয়, তাঁদের মধ্যে বুদ্ধদেববাবু একজন ৷"
- সিপিএম নেতাকে রাজ্যের বাম যুব সংগঠনের কার্যালয় দীনেশ মজুমদার ভবনে নিয়ে যাওয়া হয় ৷
- আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে দীনেশ মজুমদার ভবনে পৌঁছতে হিমশিম খেতে হয়েছে, বলাই যায় ৷ রাস্তার দু'ধারে শুধুই কালো মাথা ৷ নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এজেসি রোডে মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল ৷ ভবনের সামনে তখন বিপুল জনস্রোত ৷ সেই স্রোত এতটাই যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শবদেহ মাটিতে নামানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি ৷ সেখান থেকেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হয় ৷
- জনস্রোত আছড়ে পড়ছে ৷ কাতারে কাতারে ভিড় ৷ 1962 সালে এখানে তিনি প্রথম পা দিয়েছিলেন ৷ ডিওয়াইএফআইয়ের কার্যালয়ে তিলধারণের জায়গা নেই ৷ এখানে তাঁর মরদেহ রাখা হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ৷ আলিমুদ্দিন থেকে দীনেশ মজুমদার ভবনের দূরত্ব 500 মিটার ৷ সেই জায়গা অতিক্রম করতে সময় লাগল প্রায় 1 ঘণ্টা ৷ মানুষের প্লাবন নেমেছে রাস্তাজুড়ে ৷ প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ৷ প্রত্যেকেই প্রয়াত নেতাকে একটি গোলাপ, ফুলের মালাটা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে চাইছেন ৷
- বিকেল পৌনে চারটের পর দীনেশ মজুমদার ভবন থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ দানের জন্য নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হয় ৷ 5টা নাগাদ শবদেহ নিয়ে গাড়ি প্রবেশ করে হাসপাতালে ৷ সেখানে তাঁর দেহদান পর্ব হয় ৷