বোলপুর, 10 ডিসেম্বর: দেউচা-পাচামিতে কয়লা খনির জন্য জমি দিয়েও প্রতিশ্রুতি মত মিলছে না চাকরি ৷ এই অভিযোগে অনুব্রত মণ্ডলের দ্বারস্থ হলেন এলাকার তৃণমূল নেতা ও জমিদাতারা ৷ তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা জমি নিয়ে চাকরি দিচ্ছেন না ৷ জমি একজনের অথচ চাকরি পাচ্ছে অন্যজন।
বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রত মণ্ডলের কাছে মহম্মদবাজার ব্লকের ভূমি আধিকারিক-সহ অন্যান্য আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বেশে কয়েকজন ৷ 10 দিনের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমুল নেতা অনুব্রত মণ্ডল।
আমেরিকার পর বীরভূমের দেউচা-পাচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলা মুখ কয়লা খনি হতে চলেছে ৷ তার জন্য ইতিমধ্যেই জমি অধিগ্রহণ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার ৷ আগেই জমিদাতাদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ-সহ চাকরি দেওয়া কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও বীরভূম জেলা শাসক বিধান রায়কে দেউচা-পাচামিতে কয়লা খনির জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷
5 হাজার জমিদাতাকে চাকরি দেওয়ার কথা হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র 1400 জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ বহু জমিদাতা এখনও চাকরির নিয়োগপত্র পাননি ৷ যাঁদের অল্প জমি আছে বা পাট্টা জমি আছে তাঁদের জমি সরকার অধিগ্রহণ করলেও পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। বহু বাইরের লোককে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে ৷ বৈধ জমিদাতারা বঞ্চনার শিকার ৷
এই সকল একাধিক অভিযোগ নিয়ে সোমবার বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রত মণ্ডলের দ্বারস্থ হন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা-সহ জমিদাতারা ৷ আদিবাসী মানুষজনও তাঁদের পাট্টার কাগজপত্র নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের কাছে অভিযোগ করেন ৷ মহম্মদবাজার ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক-সহ অন্যান্য আধিকারিরে জমি অধিগ্রহণ করে চাকরি দিচ্ছেন না, অর্থাৎ কয়লা খনির জন্য জমি নিয়েও প্রাপ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে ৷
প্রসঙ্গত, দেউচা-পাচামিতে কমপক্ষে 3 হাজার 400 একর জমিজুড়ে 1 হাজার 179 মিলিয়ন হেক্টর কয়লা ব্লক রয়েছে ৷ যা উত্তোলিত হলে এটিই হবে আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলামুখ কয়লা খনি। এছাড়াও, কয়লার স্তরের উপর 1 হাজার 138 মিলিয়ন হেক্টর ব্যাসল্ট শিলাস্তর রয়েছে ৷ তাই এখানে কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য এখনও পর্যন্ত 35 হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে ৷ যার মধ্যে 10 হাজার কোটি টাকা পুনর্বাসন প্যাকেজে খরচ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
কিন্তু, এই কয়লা খনি করতে কমপক্ষে 12টি গ্রামের 21 হাজার মানুষের বসতি অন্যত্র সরাতে হবে। যার মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী মানুষ। এছাড়া, ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি। তাই প্রথম থেকে প্রস্তাবিত কয়লা খনির জন্য জমি দিতে নারাজ এই এলাকার মানুষজন ৷ জল-জঙ্গল-জমি বাঁচাতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বারবার পথে নেমেছেন দেউচা-পাচামির বাসিন্দারা।
আদিবাসী নেতা রবীন সোরেন, সংশ্লিষ্ট ভারকাটা অঞ্চলের প্রধান মোসারবারি মোল্লা, স্থানীয় তৃণমূল নেতা মুহাজুদ্দিন বিমান সকলের একই বক্তব্য ৷ তাঁদের অভিযোগ, বিএলআরও সহ সরকারি আধিকারিকেরা জমি নিয়েও চাকরি দিচ্ছে না ৷ এঁদের গাফিলতিতে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প শেষ হয়ে যাবে ৷ চাকরি নিয়ে জালিয়াতি চলছে দেউচা-পাচামিতে। অল্প জমি থাকলে লিখিয়ে নিচ্ছে, অন্যজনকে চাকরি দিয়ে দিচ্ছে। তাই আমরা অনুব্রত মণ্ডলের কাছে এসেছিলাম ৷ দাদা বিষয়টি দেখছেন বলে জানিয়েছেন।"
পড়ুন: বীরভূমে দেশের দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র, গবেষণায় নতুন দিশা