মেদিনীপুর, 15 জুন: কথা ছিল পুজোর সময় মেয়ের জন্য জন্মদিনের উপহার আনবেন ৷ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন ভেবেছিলেন দ্বারিকেশ পট্টনায়েক (52) ৷ তিনি ফিরলেন তবে কফিনবন্দি হয়ে ৷ কুয়েতের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃত 49 জন ভারতীয়র মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাঙালি ইঞ্জিনিয়রের দেহ ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার-পরিজন ৷ বাঙালি ইঞ্জিনিয়রকে শেষশ্রদ্ধা জানালেন সাংসদ জুন মালিয়া ৷ তুললেন বেশ কিছু অভিযোগ ৷
জুন মালিয়া বলেন, "প্রায় 21 শতাংশ ভারতীয় কুয়েতে এবং বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। যাঁদেরকে ভালোভাবে রাখে না ওখানকার কোম্পানিগুলো। কম টাকায় তাঁরা এখান থেকে শ্রমিক নিয়ে যান তাঁদের নিজের দেশে কাজ করানোর জন্য। যে বিল্ডিংয়ে শ্রমিকদের রাখা হয়েছিল সেখানে নীচে সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগেছে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ এমনকী, ছাদের দরজা বন্ধ রাখা হয়েছিল ৷ ফলে বেশিরভাগ শ্রমিক দমবন্ধ হয়েই মারা গিয়েছেন ৷ বাইরে যে সকল শ্রমিক কাজ করতে যান তাঁদের থাকার ব্যবস্থা খুব খারাপ হয় ৷ এই বিষয়ে বিদেশমন্ত্রককে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। বাইরের দেশের সঙ্গে আলোচনা করে কড়া অবস্থান নিলে এইভাবে শ্রমিক মৃত্যু ঘটনা আটকানো যেতে পারে।"
বিমানবন্দরে শ্যালকের দেহ আনতে গিয়েছিলেন সায়ন্তন পট্টনায়েক ৷ তিনি বলেন, "পিতৃহারা হয়ে গেল আমার ভাগ্নি। আমি জামাইবাবুকে হারালাম। তবে এই বাড়ির সমস্ত দায়-দায়িত্ব এবং পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি, যাতে আগামিদিনে কোনওরকম অসুবিধে না হয়। যে যাবার সে তো ফিরে আসে না, তবে পাশে থাকার বার্তা দিলাম।"
জানা গিয়েছে, মৃত দ্বারিকেশ পট্টনায়েকের আসল বাড়ি দাঁতনের তুরকাতে। সম্প্রতি মেদিনীপুর শহরে শরৎপল্লী এলাকায় বাড়ি বানিয়েছেন তিনি ৷ সেখানে তিনি স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। দীর্ঘ 27 বছর তিনি বাইরে চাকরি করতেন। কুড়ি বছর ধরে কুয়েতের একটি বেসরকারি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার সুপারভাইজার পদে কাজ করছিলেন। গত বুধবার বিধ্বংসী আগুনে মৃত্যু হয়েছে 49 জন ব্যক্তির ৷ যার মধ্যে 45 জন ভারতীয়। মূলত, ভোরের দিকে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার একটি বহুতল আবাসনে আগুন লাগে। ওই আবাসনে থাকতেন শ্রমিকেরা, যাঁদের অধিকাংশই ছিল ভারতীয়। তবে কী কারণে আগুন লেগেছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে ।