কলকাতা, 14 নভেম্বর: কলকাতা পুলিশ ও বিহার পুলিশের এসটিএফের বিরাট সাফল্য । কলকাতা পুলিশ এবং বিহার পুলিশের এসটিএফ একযোগে বিহারের মুঙ্গেরে একটি আগ্নেয়াস্ত্র কারখানায় গোপন অভিযান চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করল একাধিক বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র । এই ঘটনায় সাত ধরনের বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বিহারের মুঙ্গেরে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে সেখানকার এক বাসিন্দা মহম্মদ মনাজির হোসেনের বাড়ি ও তাঁর বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কারখানায় একযোগে তল্লাশি অভিযান চালায় বিহার এবং কলকাতা পুলিশের এসটিএফ । জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে সাতটি সেভেন এমএম পিস্তল, পিস্তল তৈরি করার মেশিন, চারটি লেদ মেশিন-সহ কার্তুজ এবং আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করার একাধিক সরঞ্জাম ।
এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-এর দায়িত্বে থাকা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মা কলকাতা পুলিশের ক্রাইম মিটিংয়ে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন যে, বিহারের বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুতকারী দলগুলি এবার তাদের অপরাধের ধরন পরিবর্তন করছে । সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই গতকাল কলকাতা পুলিশের এসটিএফয়ের একটি বিশেষ ইউনিট বিহার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মুঙ্গেরে গোপন তল্লাশি অভিযান চালায় । সেখান থেকেই এই সাফল্য মেলে বলে জানা যাচ্ছে ।
সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের রুটিন একটি ক্রাইম মিটিংয়ে নগরপাল দাবি করেছিলেন যে, কলকাতা তথা শহরতলিতে এবার অভিনব কায়দায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসা শুরু করতে চাইছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা । বিহারের মুঙ্গেরের উপর বিশেষভাবে নজরদারি চালিয়ে এবং বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এ রাজ্যের বেআইনি অস্ত্র ব্যবসা মোকাবিলায় অনেকটাই সফল হয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ । ফলে কলকাতা পুলিশের সেই নজরদারি এবং তল্লাশি অভিযান থেকে নিজেদের বাঁচাতে মোডাস অপারেন্ডি বা অপরাধের ধরন পরিবর্তন করছে বিহারের মুঙ্গেরের একটি দল ।
কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মা সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে এসটিএফয়ের কর্তাদের এই বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেছিলেন । তিনি বলেন, একাধিকবার বিহারে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গোপন অভিযানের ফলে এবার নয়া কৌশল নিয়েছে অস্ত্র কারবারিরা ৷ কলকাতায় সরাসরি অস্ত্র না এনে, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বিভিন্ন মেশিন ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলিকে বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ করে ধাপে ধাপে কলকাতায় আনা হচ্ছে ।
কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কারখানায় সেই অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে ৷ সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খুব সহজেই বাড়িভাড়া মেলায় এই কারখানা গড়ে তুলছে অস্ত্র কারবারিরা । মোটা টাকার বিনিময় ভাড়াটেদের কাছ থেকে কোনও রকমের নথিপত্র সংগ্রহ না করেই তাঁদের সেখানে থাকতে দেওয়া হয় ৷ আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির ব্যবসা খুলে বসছে অভিযুক্তরা । এ ব্যাপারেই বাড়তি সতর্কতা নিতে বলেন নগরপাল ৷
আর তারপরই গতকাল বিহারে একযোগে বিহার পুলিশের এসটিএফ ও কলকাতা পুলিশের এসটিএফের অভিযানের ফলে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারিদের অনেকটাই ব্যাকফুটে পাঠানো গিয়েছে বলে মনে করছে লালবাজার ।