কলকাতা, 12 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডে সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ তার মধ্য়ে অন্যতম পুলিশের ব্যারাকের রাতের পর রাত থাকার বিষয়টি ৷ প্রশ্ন উঠছে, সিভিক ভলান্টিয়ার হয়েও কীভাবে পুলিশের ব্যারাকে থাকার জায়গা পেতেন ধৃত সঞ্জয় রায় ?
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ব্যারাকগুলি নিয়ে নতুন করে নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা পুলিশ ৷ সেখানে কারা থাকতে পারবেন ? কীভাবে ব্যারাকগুলি চলবে ? সেই সব বিষয় নিয়েই ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ৷
উল্লেখ্য, কলকাতা পুলিশের একাধিক ব্যারাক রয়েছে । উত্তর কলকাতা এবং উত্তর 24 পরগনা ও দক্ষিণ 24 পরগনার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুলিশের একাধিক ব্যারাক । তার মধ্যে একটি রয়েছে বিধাননগরে ৷ যা কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাক ৷
অভিযোগ, সেখানেই নাকি রাতের পর রাত থাকতেন আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় রায় ৷ সেই সুবাদে সঞ্জয় নিজেকে কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে একাধিক লোকের কাছ থেকে টাকা তুলতেন বলে অভিযোগ । এছাড়াও যে বাইকে চেপে ঘুরে বেড়াতেন তিনি, তাতে পুলিশ লেখা ছিল ৷
আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, এমন সঞ্জয়ের সংখ্যা অনেক, যাঁরা রাজ্য পুলিশ বা কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন ব্যারাকে এই ধরনের অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছে । যার জেরে আগামিদিনে বড়সড় বিপদও হতে পারে ৷ প্রশ্ন উঠছে, নিয়ম ভেঙে কীভাবে কেউ থাকতে পারেন পুলিশের ব্যারাকে ? তাহলে কি সেখানে কোনও নজরদারি নেই ?
আইপিএস মহলের একাংশের আরও দাবি, খাতায়-কলমে প্রত্যেকটি ব্যারাকের একজন করে ইনচার্জ থাকেন । তিনি সরাসরি রিপোর্ট করেন ডিসিপি কিংবা জেলা পুলিশ সুপারকে । কিন্তু ব্যবস্থা শুধুমাত্র খাতায়-কলমেই । এই নিয়ে কোনও রিপোর্টই জমা পড়ত না ৷
সেই কারণেই এবার ব্যারাকগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷ এই নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা দিয়ে, তা জানানোও হয়েছে ৷ জানা গিয়েছে, এবার থেকে ব্যারাকে সেই পুলিশ কর্মীরাই থাকতে পারবেন, যাঁদের থাকার বৈধ অধিকার রয়েছে । এছাড়াও একজন করে অফিসার ইনচার্জ পদের পুলিশকর্মীকে বিভিন্ন ব্যারাকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে । প্রত্যেক এক সপ্তাহ অন্তর সংশ্লিষ্ট ইনচার্জ তাঁদের দায়িত্বে থাকা ব্যারাকের দেখভালের রিপোর্ট জমা দেবেন জেলা পুলিশ সুপার কিংবা ডিসিপিদের । রিপোর্ট না এলে ইনচার্জের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন পুলিশের শীর্ষস্তরের আধিকারিকরা ৷
পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের প্রত্যেকটি পুলিশ ব্যারাকে কতজন পুলিশ কর্মী রয়েছেন এবং তাঁদের নাম, পরিচয় ও পদমর্যাদা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যাসিস্ট্য়ান্ট কমিশনার পদে থাকা এক পুলিশ আধিকারিককে ।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের একজন অফিসার ইনচার্জ পদমর্যাদার আধিকারিক বলেন, ‘‘বর্তমানে পুলিশ ব্যারাকে বহিরাগতরা থাকার ফলে সরকারের খরচও বাড়ে । এছাড়াও এই বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও তথ্য থাকে না । যা খুব বিপজ্জনক বিষয় ।’’
তবে তাঁর কথায়, শুধুমাত্র আভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়ে জানার পাশাপাশি বর্তমানের হাল সম্পর্কেও অবহিত হতে হবে লালবাজারের শীর্ষ অধিকারিকদের । কারণ, অধিকাংশ পুলিশ ব্যারাক বহু পুরনো । বিভিন্ন জায়গা থেকে সিমেন্টের চাঁই ভেঙে পড়ার পরিস্থিতিতে রয়েছে । এই সব বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন ৷ এছাড়াও প্রত্যেকটি পুলিশ ব্যারাকে যথাযথ সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে ।
যদিও এই বিষয়ে আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, প্রত্যেকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে ও নগরপালের পদে যিনি থাকেন, তিনি একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেন । এই নির্দেশিকা এক থেকে দুই মাস পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় । আরজি করের ঘটনার পর বর্তমানে নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার । এই ঘটনায় যদি টনক নড়ে পুলিশের শীর্ষকর্তাদের, তাহলে ভালো বলে দাবি করছেন আইপিএস মহলের একাংশ ।