হাওড়া, 17 অগস্ট: আরজি করে চিকিৎসক পড়ুয়ার নৃশংস মৃত্যুর ঘটনায় 14 অগস্ট কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে ‘রাতের দখল’ নিয়েছিল নারীশক্তি ৷ ঠিক সেই রাতেই আরজি কর মেডিক্যালের তিনতলায় হামলা চালায় দুষ্কৃতী বাহিনী ৷ কাদের নির্দেশে সেই তাণ্ডব, তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা এখনও অব্যাহত ৷ কিন্তু দুষ্কৃতী তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়ে যায় সেখানকার ইএনটি বিভাগ ৷ দামি যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্র, আসবাব, সবকিছুরই দফারফা ৷ সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে 30 জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ ধৃতদের তালিকায় নাম রয়েছে চিরাগ ঝাঝাড়িয়া নামে 23 বছরের এক যুবকেরও ৷ তাঁর পরিবারের দাবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী চিরাগ নির্দোষ ৷ নিজেদের দোষ ঢাকতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে ৷ রাজ্যের প্রশাসনের মান রাখতেই কি পুলিশের এই অতি সক্রিয়তা ? চিরাগের গ্রেফতারির পর এই প্রশ্নও উড়ে বেড়াচ্ছে হাওড়ায় ৷
চিরাগের বাড়ি মধ্য হাওড়ার ফজির বাজার এলাকায় ৷ তাঁর পরিবারের দাবি, এই ঘটনায় তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন ৷ তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত নন বলে দাবি তাঁর পরিবারের সদস্যদের ৷ এই মুহূর্তে চিরাগ কোথায় রয়েছেন, তাও জানা নেই পরিবারের ৷ তাঁরা চিরাগের সন্ধান পেতে চান ৷
চিরাগের মা কবিতা ঝাঝারিয়া বলছেন, “আমার ছেলে এসবের মধ্যে নেই ৷ ও কোনও রাজনৈতিক দল করে না ৷ পড়াশোনা করে ৷ পুলিশ আমার ছেলেকে ধরে নিয়েছে ৷ পুলিশ আমার ছেলের মতো একজন নির্দোষকে কেন ধরল আমি জানি না ৷ পড়াশোনার জন্য এর মধ্যেই ছেলের মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল ৷ এই রাজ্যের পুলিশের উপর আমার কোনও ভরসা নেই ৷ ওরা আমার ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করেছে ৷ আমি কিছু জানি না৷ আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই ৷ ছেলের সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি ৷ ও কোথায় আছে সেটাও জানি না ৷ আমার কিছু ভালো লাগছে না ৷”
চিরাগের বাবা রামকুমার ঝাঝারিয়ার দাবি, “15 তারিখ ভোর চারটে নাগাদ ছেলে ফোন করে আমাকে জানায়, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ৷ ও আমাকে জানায়, আগের দিন বেলা দুটো নাগাদ ও বাড়ি থেকে বেরোয় ৷ শ্যামবাজার এলাকায় ওকে পুলিশ ধরে নেয় ৷ সেখান থেকে ওকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ আমি ভোর পাঁচটা নাগাদ লালবাজার যাই ৷ কিন্তু সেখান থেকে বলা হয়, কোনও আসামিকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় না ৷ আমি জানাই, ছেলের লাইভ লোকেশন লালবাজারই দেখাচ্ছে ৷ তখন আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয় ৷ আমি এক ঘণ্টা সেখানে অপেক্ষা করি ৷ কোনও জবাব পাইনি ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘পরে 12টা নাগাদ ফের সেখানে যাই ৷ সেখানকার পরামর্শ মেনে টালা থানায় যাই ৷ কিন্তু বারবার দু’জায়গায় ঘোরাঘুরি করলেও ছেলের কোনও সন্ধান পাইনি ৷ তখন আমাকে শিয়ালদা কোর্টে যেতে বলা হয় ৷ সেখানে বিকেল পাঁচটা নাগাদ ছেলেকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশ যেসব মামলা রুজু করেছে, তা দেখে আমার মাথা ঘুরে যায় ৷ দেখি, অস্ত্র আইন, খুন সহ একাধিক ধারায় পুলিশ ছেলের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে ৷’’
রামকুমার ঝাঝারিয়ার আরও বক্তব্য, ‘‘আমার ছেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ৷ ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছে ৷ উচ্চশিক্ষার জন্য মুম্বইয়ে ভর্তি হয়েছে ৷ পুলিশ আসল অপরাধীদের ধরছে না, আর আমার ছেলের মতো নির্দোষদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে ৷ আমার কাছে ওর সিসিটিভির ফুটেজ রয়েছে ৷ যদি পুলিশের কাছে প্রমাণ থাকে আমার ছেলে সেদিন 12টা থেকে দুটোর মধ্যে ঘটনাস্থলে ছিল, তবে সেটা প্রমাণ করুক ৷ পুলিশ নিজেকে বাঁচাতে আমার ছেলের মতো 10-12 জন নির্দোষকে গ্রেফতার করেছে ৷”