কলকাতা, 20 জুলাই: কলকাতা পুরনিগমে ভূতুড়ে কর্মীর খোঁজ ৷ এমনকী একজন কর্মী বেতন পাচ্ছেন দু’টি বিভাগ থেকে ৷ অস্থায়ী কর্মীদের পরিচয়পত্র করাতে গিয়ে সামনে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ ঘটনায় চক্ষু চড়কগাছ কর্তৃপক্ষের । এরপরেই বিভিন্ন বিভাগে চিরুনি তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরনিগম ।
কর্পোরেশনের এক আধিকারিক বলেন, "এই ঘটনা নজরে আসতে প্রত্যেক অস্থায়ী কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আঁধার,প্যান-সহ সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে ৷ পাশাপাশি কর্মীদের ইউনিক নম্বর অর্থাৎ ক্যাজুয়াল বা কন্ট্রাক্টচ্যুয়াল নম্বর দিয়ে তাঁদের সমস্ত তথ্য দেখে ডেটাবেস হচ্ছে ৷ এর ফলে এত দিন যে তালিকা ছিল তাতে প্রায় 30-40 শতাংশ কর্মীর নাম কমবে অর্থাৎ ভুয়ো কর্মীদের বাদ দেওয়া হবে, যারা দুই বিভাগ থেকে বেতন তুলছিল ।"
জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরনিগমে কত স্থায়ী কর্মী কাজ করেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য রয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে । তবে বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত অস্থায়ী কর্মীরা কত কাজ করেন, সেই অর্থে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য পুরনিগমের কাছে এতদিন ছিল না । অথচ প্রতিমাসে মাসিক বেতন খাতে ব্যয় হত বিপুল টাকা । তাই ওই অস্থায়ী কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ ও পরিচয়পত্র দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । আর সেই কাজ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে এক কর্মীর দুই বিভাগে চাকরি ও বেতন তোলার একাধিক ঘটনা । সঙ্গে ভূতুড়ে কর্মীর খোঁজ মিলেছে ৷
পুরনিগম সূত্রে খবর, অর্থ কষ্টে জেরবার কর্পোরেশনের অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতে বিপুল টাকা প্রতিমাসে খরচ হয় । তবে যে কর্মী তালিকার ভিত্তিতে এজেন্সি টাকা তোলে আদৌ এত কর্মী কাজ করে কি না সেই নিয়ে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করে পুর কর্তৃপক্ষ ও খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম । সেই অনুসারেই প্রতি অস্থায়ী কর্মীর পরিচয়পত্র ও তাঁদের কন্ট্রাক্টচ্যুয়াল নম্বর দেওয়া শুরু হয় । এই সময়ে দেখা যায়, অনেক কর্মী তাঁদের তথ্য দিতে গড়িমসি করতে থেকে মাসের পর মাস । তখন তাঁদের বেতন আটকানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পুরনিগমের তরফে । এরপরেই বেশ কয়েকজন তথ্য জমা দিলে খতিয়ে দেখতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় পুর আধিকারিকদের ।
কর্তৃপক্ষ দেখে, একই কর্মীর নাম দুই বিভাগের কর্মী তালিকায় নথিভুক্ত । এর মানে ওই কর্মী দুই বিভাগ থেকে মাসের পর মাস দেদার বেতনও তুলছেন । এরপরেই এই ঘটনার অন্তর্বর্তী তদন্ত শুরু হয় । ইতিমধ্যে 60 জন এমন কর্মী পাওয়া গিয়েছে । যারা দু’টি বিভাগ থেকে বেতন পান ৷ এরপরেই পুরনিগম কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্থায়ী কর্মীদের তথ্য সংগ্রহে চিরুনি তল্লাশি করা হবে । দু’টি বিভাগ থেকে বেতন তোলার খবর মেয়রের কাছে পৌঁছলে ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি ।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, সিদ্ধান্ত হয়েছে যে নির্দিষ্ট দিনে প্রতিবার কর্মীদের চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হবে । কোন বিভাগে কত অস্থায়ী কর্মী, তাঁরা বর্তমানে কর্মরত কি না, সেটাও নজর রাখা হবে । ভূতুড়ে কর্মী বাদ দিতে হবে । সেই জন্য বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে বিশেষ আবেদনপত্র তৈরি হয়েছে পুরনিগমে ।