কলকাতা, 15 জানুয়ারি: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য । এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থা এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন প্রসূতির ৷ এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে সিআইডি । এর মধ্যেই বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ । প্রশ্ন উঠেছে আরএল স্যালাইন নিয়ে । তবে পাশাপাশি সন্দেহ দানা বেঁধেছে চিকিৎসকের গাফিলতি নিয়েও । এসবের মাঝেই সরব ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট ৷ এই ঘটনায় তারা দায়ী করেছে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে । তাদের 10 দফা দাবিও ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা ।
মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের সামনে সাংবাদিক বৈঠক করে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট । সেখানে তারা সরব হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা নিয়ে । জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, "অক্সিটোসিন প্রসূতিদের দিতেই হয় । এটার নিম্নমান নিয়ে বারবার স্বাস্থ্য ভবনে কথা বলতে গেলে তাঁদের শোকজ, ট্রান্সফার করা হয়েছে । অভয়া আন্দোলনে এই স্ক্যাম নিয়েও আমরা লড়েছি । আমরা চাই নিরপেক্ষ তদন্ত । কিন্তু সেটা তো প্রহসন । তবে ওষুধ নিয়ে তদন্ত আগে কেন হল না ? প্রাণ চলে যাওয়ার পর কেন টনক নড়ল ?"
এরপর এই জুনিয়র চিকিৎসকরা সরব হন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের নয়া বিজ্ঞপ্তি নিয়ে । জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস বলেন, "সিনিয়ররা ছিলেন না শোনা যাচ্ছে ৷ হ্যাঁ তদন্ত দরকার । তারপরেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে পিজিটিরা কোনও ওটি অ্যানাস্থেশিয়া করতে পারবেন না । সিনিয়ররা সব করবেন । কিন্তু এনএমসি গাইডলাইনে বলা আছে অন্য কথা । তবে যদি সিনিয়রদেরই করতে হয়, সেই পরিমাণ ডাক্তার আছে ? নিয়োগ কেন হবে না তাহলে ।"
এই বিষয়ে জুনিয়র চিকিৎসকরা তুলে নিয়ে আসেন সেই দুর্নীতি প্রসঙ্গ । দেবাশিসের কথায়, "এটা একটা অস্পষ্ট নির্দেশিকা । গোটা ঘটনার দায় নিগমকে নিতে হবে । তাকে অপসারণ করতে হবে । যাঁরা পলিসি বানান, তাঁরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করুন । সেসব না করে রাজনৈতিক আস্ফালন করে তাঁরা বলছেন রাজ্য স্বাস্থ্যে এক নম্বর । তাহলে কি এই প্রাণহানি মানা যায় ? অনেক চেষ্টা করার পরেও অনেক প্রাণহানি হয়ে যায় ৷ কিন্তু এটা তো আটকানো যেত । তাই এর দায় নিতে হবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং স্বাস্থ্যসচিবকে ।"
এদিকে, এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের তিন প্রসূতির শারীরিক অবস্থার এখনও বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি । প্রত্যেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক । তাঁদের মধ্যে দু'জনের অবস্থা অতি সংকটজনক । হাসপাতাল সূত্রে খবর, মাম্পি সিংয়ের কিডনিতে সংক্রমণ রয়েছে । তিনি এখনও ভেন্টিলেশনে । সোমবার ও মঙ্গলবার তাঁর ডায়ালিসিস হয়েছে ।
অন্যদিকে, নাসরিন খাতুনেরও একই সমস্যা । তিনিও ভেন্টিলেশনে ভর্তি আছেন ৷ তাঁরও ডায়ালিসিস হয়েছে । তাঁদের ভেন্টিলেশন থেকে বের করার ট্রায়াল চলছে । তবে শারীরিক অবস্থা এখনও একই রকম আছে । আর এক প্রসূতি মিনারা বিবির ফুসফুসে সংক্রমণ রয়েছে । প্লেটলেটও কমে গিয়েছে । তাঁর অবস্থাও সঙ্কটজনক হলেও সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর ।
হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "তিনজনের শারীরিক অবস্থা একই আছে । আমাদের চিকিৎসকেরা তাঁদের দেখছেন ।" তাঁদের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে, মেডিক্যাল বোর্ডে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়িয়ে আট থেকে 13 করা হয়েছে ৷
অন্যদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল থেকে আনা নমুনার দু'ধরনের টেস্ট করা হবে । একটি হল স্টেরিলিটি টেস্ট এবং অপরটি পাইরোজেন টেস্ট । এই টেস্টের রিপোর্ট আসতে 10 দিন সময় লাগবে । এমনটাই খবর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে । সোমবারই রাজ্যের ড্রাগ টেস্টিংয়ের হাতে পৌঁছেছে নমুনা ।
স্টেরিলিটি টেস্টে স্যালাইনের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল নিউট্রিয়েন্ট লিকুইড দেওয়া হয় ব্যাকটেরিয়াকে বাড়তে দেওয়ার জন্য । যদি স্যালাইন বা ওষুধে কোনও ভাবে কোনও ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেটি পরিপূর্ণ বেড়ে উঠতে 10 দিন সময় লাগবে । অন্যদিকে, পাইরোজেন টেস্টে স্যালাইন যখন তৈরি হয়েছে সেই সময় যে জল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা কোনওভাবে দূষিত হয়েছিল কি না তা পরীক্ষা করা হয় ৷