কলকাতা, 14 জানুয়ারি: পুরো সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান জুড়ে এবার শুরু হবে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ৷ আর এই কারণে 45 দিন বন্ধ থাকতে পারে এই অংশের মেট্রো পরিষেবা ৷ এই খবর প্রচার হওয়ার পরেই নিত্য যাত্রীদের মাথায় হাত পড়েছে ৷ কারণ সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদা এবং এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত প্রতিদিন যাতায়াত করেন 80 হাজার থেকে এক লক্ষ যাত্রী ৷ উৎসবের সময় এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায় ৷ তাই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নাকাল হতে হবে নিত্য যাত্রীদের ৷
একাধিক বিপত্তির পর শেষে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত মেট্রোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৷ এই অংশের কাজ করতে গিয়ে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল ৷ গত বছর নভেম্বর মাসে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে ট্র্যাকের কাজ শুরু হয় এবং ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়েছে সেই কাজ ৷
গত বছরের শেষ দিকে বউ বাজারের বিপত্তিস্থলে ট্রলি পরিদর্শন করা হয় ৷ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে যে এই অংশের কাজ শেষ করার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে জোর কদমে ৷ আর এই কাজ শেষের এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল সিগন্যালিং ব্যবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ৷
তাই সিগন্যাল ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য আগামী 8 ফেব্রুয়ারি থেকে 23 মার্চ পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোর গ্রিন লাইনে সম্পূর্ণভাবে পরিষেবার বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে গ্রিন লাইনের দু'টি অংশে পৃথক ভাবে মেট্রো পরিষেবা চলছে ৷ একটি-গ্রিন লাইন (সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদা) আরেকটি গ্রিন লাইন 2 (এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান) ৷
মাঝে বউবাজারের অংশের এতদিন পর্যন্ত কাজ চলছিল ৷ এবার এই অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৷ এবার সম্পূর্ণ স্ট্রেচ অর্থাৎ সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত হাওড়া ময়দান পর্যন্ত পরিষেবা শুরু হওয়ার পালা। আর এই পরিষেবা চালু করতে হলে বর্তমানের দুটি অংশের সঙ্গে মাঝের অংশের সিগন্যালিং সমন্বয় করতে হবে। তার আগে রয়েছে বিস্তর ট্রায়াল রান। আর এই জন্যেই এই দের মাসের পাওয়ার ব্লক নেওয়ার কথা জানিয়ে সম্প্রতি এই অংশের নির্মাণকারী সংস্থা কেএমআরসিএল বা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড কলকাতা মেট্রোরেলকে চিঠি পাঠিয়েছে।
এই বিষয়টি আপাতত চিন্তাভাবনা পর্যায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পরিষেবা বজায় রেখেই ট্রায়াল রান করা সম্ভব হবে কি না, সেই বিকল্প বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে ৷ কলকাতা মেট্রোরেল সূত্রে খবর, যেহেতু সময়টা যথেষ্ট দীর্ঘ, তাই এতদিন ধরে যাত্রীদের সমস্যা হতে পারে ৷ এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষ কোনওভাবে যাত্রী সাধারণদের সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইছে না ৷ তাই একাধিক বিকল্প উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বর্তমানে ৷
প্রসঙ্গত এই দুই অংশে বর্তমানে যে সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তা যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে চলে সেটিকে আপগ্রেড করতে হবে ৷ তারপর গোটা অংশের ট্রায়াল রান করা হবে ৷ ট্রায়াল রানের সময় যেসব ক্রটিগুলি উঠে আসবে, সেইসব ফ্রান্সে পাঠাতে হবে ৷ কারণ, এই সিগন্যালিং ব্যবস্থার প্রস্তুতকারক হল এক ফরাসি সংস্থা ৷
তারপর বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করে নতুন সফটওয়্যার আসবে ফ্রাঙ্ক থেকে ৷ এভাবে আবার চালু হবে ট্রায়াল রান ৷ অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে যেহেতু সিগন্যালিং ব্যবস্থার উপরেই নির্ভর করছে মেট্রোর মসৃণ পরিষেবা, তাই এই বিষয়ে কোনও গাফিলতি রাখতে চাইছে না কর্তৃপক্ষ ৷ কারণ, মেট্রোর ট্র্যাকে বা নদীর নীচের সুড়ঙ্গে কোনও বিপত্তি এড়াতে সিবিসিটি সিগন্যালিং ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তাই যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপোস করতে চাইছে না মেট্রো ৷ এই ব্যবস্থার ফলে মুখোমুখি দু'টি ট্রেনের ধাক্কা লাগা এবং দ্রুত গতিতে মেট্রো চলাচলের সম্ভাবনা এড়ানো যাবে ৷
তাই এর থেকে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া সম্ভব, সিগন্যালিং ব্যবস্থার খোলনলচে বদলের জন্য এই মহড়া দৌড়গুলি কতটা প্রয়োজন ৷ তবে যদি সত্যিই পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে দেড় মাস এই দু'টি অংশ মিলিয়ে যে প্রায় 1 লক্ষ যাত্রী পরিবহণ করে মেট্রো, সেই সংখ্যক যাত্রীর চাপ কি গণপরিবহণের নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ? উঠছে প্রশ্ন ? কারণ মেট্রো পরিষেবা চালু হয়ে যাওয়ার পর বাসের সংখ্যা অনেকটাই কম গিয়েছে ৷
বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি ৷ সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় এই বিষয় জানিয়েছেন যে হাওড়া ময়দান ও এসপ্ল্যানেড রুটে মেট্রো চালু হওয়ার পর অনেক বাস রুট যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই বাসের সংখ্যাও অনেক কমে গিয়েছে ৷ তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে মেট্রো চালু হওয়ার পর বাস ও মিনিবাসে রাতারাতি যাত্রী সংখ্যা প্রায় 30 থেকে 40 শতাংশ মতো কমে যায় ৷
এর মধ্যে যেসব বাসের বয়স 15 বছরের বেশি, সেই বাসমালিকরা নিরুৎসাহী হয়ে আর পারমিট নবীকরণ করাননি ৷ এছাড়াও যাত্রীর অভাবে বহু বাস মালিক খরচ চালাতে পারছেন না দেখেই বাসের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে ৷ তাই এই ভাবে হাওড়া ধর্মতলা এবং এসপ্ল্যানেড রুটে প্রায় 150 টি বাস কমেছে ৷ আরও কমবে বাসের সংখ্যা ৷
এছাড়া সল্টলেক ও শিয়ালদা রুটে কমেছে বাস ও অটোর সংখ্যা ৷ তাই স্বাভাবিকভাবে এখন প্রশ্ন উঠেছে যে মেট্রোর পক্ষে এহেন একটি জনপ্রিয় এবং লাভজনক রুট দেড় মাসের কাছাকাছি পরিষেবা বন্ধ থাকলে গণপরিবহণ কি সেই চাপ নিতে প্রস্তুত ? উঠেছে প্রশ্ন ৷