কলকাতা, 1 নভেম্বর: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তিনমাস অতিক্রান্ত হওয়ার পথে । তবে এখনও অধরা বিচার । সিবিআইয়ের তরফে আদালতে পেশ করা হয়েছে চার্জশিট । কিন্তু সেখানে একাধিক ধোঁয়াশা রয়েছে বলে দাবি জুনিয়র চিকিৎসকদের ৷
তাই এবার সরাসরি সিবিআইকে প্রশ্ন করেই নাগরিক মিছিলের ডাক দিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট । আগামী 9 নভেম্বর বিকেল 3টের সময় ন্যায় বিচারের দাবিতে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে তারা । জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে বুধবার এই কথা জানানো হয়েছে ৷
তারা আরও জানিয়েছে, এর সঙ্গে ওই দিন জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে একটি ছবি প্রদর্শন করা হবে । তার সঙ্গে আরজি কর হাসপাতালে হবে রক্তদান শিবিরও ।
গত বুধবার ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে মশাল মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল । ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে তারা সিজিও কমপ্লেস পর্যন্ত মশাল মিছিল করে । সেই দিন আন্দোলনকারীদের মুখে শোনা যায় একাধিক প্রশ্ন । জুনিয়র চিকিৎসকরা সেই দিনও প্রশ্ন তুলেছিলেন সিবিআইয়ের চার্জশিট নিয়ে ।
তাঁদের প্রশ্ন, অগস্টের 9 তারিখে অটোপসি থেকে স্যাম্পেল নেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয় 14 তারিখ । এত দেরি কেন ? সঞ্জয় রায়কে আটক করা হয় 9 তারিখ রাতে, কিন্তু তাঁর রক্তমাখা জামাকাপড় ব্যারাক থেকে নিয়ে আসা হয় 12 তারিখ । আবার এত দেরি কেন ?
জুনিয়র চিকিৎসকদের আরও বক্তব্য, চার্জশিটে খুব নির্দিষ্টভাবে ঘটনার দিনের টাইমলাইন, বিভিন্ন সময়ে কী ঘটেছিল, তার বর্ণনা আছে । যেমন ওইদিন দুপুর 12টা 15 নাগাদ বাবা-মা আরজি কর হাসপাতালে এসে পৌঁছান, তা বলা আছে । কিন্তু তাঁরা আসার পর কী হয়েছিল, কেন তাঁরা তিন ঘণ্টা ধরে অভয়ার মৃতদেহের কাছে যেতে পারেননি, তার কোন উল্লেখ নেই। একইভাবে ঠিক কোন সময় টালা থানায় এই ঘটনা জানানো হয়েছিল, তারও কোনও উল্লেখ নেই ।
এছাড়াও জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার প্রশ্ন তোলেন, কী কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ এফআইআর করেনি ? কেন অভয়ার মা-বাবাকেই এফআইআর করতে হয় ? 9 তারিখে সিজার মেমো তৈরি শেষ হয় রাত 10টা 45 মিনিটে ৷ এফআইআর হয় রাত 11টা 45 মিনিটে ৷ তার আগেই সাড়ে 11টায় আটক করা হয় সঞ্জয় রায়কে । এফআইআর-এর আগেই এত দ্রুততার সঙ্গে অপরাধী আটক হওয়াটা স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহের জন্ম দেয় ।
ওই জুনিয়র চিকিৎসকের আরও বক্তব্য, অভয়ার বাবা-মাকে মৃতদেহের কাছে প্রায় ঘেঁষতেই দেওয়া হয়নি । মৃতদেহ সৎকারের কাজটুকুও তাঁদের করতে দেওয়া হয়নি । সৎকার কাজে পুলিশের এত দ্রুততার কারণ কী ? কে নির্দেশ দিয়েছিল ? কার নির্দেশে মৃতদেহ সৎকারের সময় বাড়ির লোকেদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি ?
তিনি আরও জানান, চার্জশিট অনুযায়ী সঞ্জয় রায় ভোর 3টে 20 মিনিটে আরজি কর হাসপাতালে ঢোকেন, তারপর ট্রমা কেয়ার বিল্ডিং-এ যান ভোর 3টে 34 মিনিটে ৷ বেরিয়ে আসেন ভোর 3টে 36 মিনিটে ৷ এরপর ইমার্জেন্সি বিল্ডিং-এর ফোর্থ ফ্লোরে (পাঁচতলা) যায় (সময় দেওয়া নেই) । ভোর 4টে 3 মিনিটে তাঁকে থার্ড ফ্লোরে (চারতলা) চেস্ট মেডিসিন ওয়ার্ডের সিসিটিভিতে দেখা যায় ।
দেবাশিস হালদারের প্রশ্ন, এর মাঝে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় সঞ্জয় কি ফোর্থ ফ্লোরে ছিলেন ? ফোর্থ ফ্লোরে সঞ্জয় কী করছিলেন ? সঞ্জয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলি নির্যাতিতার প্রতিরোধের কারণেই হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে । নির্যাতিতার নখের যে নমুনা নেওয়া হয়েছিল পরীক্ষার জন্য, তাতে কি সঞ্জয় রায়ের টিস্যু পাওয়া গিয়েছে ? উল্লেখ নেই চার্জশিটে । কেন ?