আসানসোল, 21 অক্টোবর: আরজি কর-কাণ্ডে বিচার-সহ 10 দফা দাবি নিয়ে অনশন জারি রেখেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ ধর্মতলার সেই অনশনে অংশ নিয়েছিলেন আসানসোলের বাসিন্দা তথা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের পিজিটি পুলস্ত্য আচার্য ৷ অনশনের 9 দিনের মাথায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৷ 13 অক্টোবর তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় এনআরএসে ৷ গত শনিবার রাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আসানসোলের বাড়িতে ফিরেছেন পুলস্ত্য ৷ এখনও পুরোপুরিভাবে সুস্থ নন ৷ তবে, এখনও আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন ৷
সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক জুনিয়র ডাক্তারদের ৷ তার আগে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি এনআরএসের পিজিটি চিকিৎসক পুলস্ত্য আচার্য ৷ কী বলছেন তিনি, আসুন জানা যাক ৷
ইটিভি ভারত- কেমন আছেন পুলস্ত্য ?
পুলস্ত্য আচার্য- আগের থেকে খানিকটা ভালো, তবে শরীরে দুর্বলতা রয়েছে ৷ একটানা অনেকক্ষণ কথা বললে কিংবা হাঁটাহাঁটি করলে সমস্যা হচ্ছে ৷
ইটিভি ভারত- দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণেই কি অনশনে যেতে বাধ্য হলেন জুনিয়র ডাক্তাররা ?
পুলস্ত্য আচার্য- আমাদের যে দশ দফা দাবি রয়েছে, তার মধ্যে বহু দাবি জনদরদি ৷ সরাসরি রোগী স্বার্থের সঙ্গে জড়িত ৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত ৷ সরকার সেই দাবিগুলিকে আমল দিচ্ছিল না ৷ বারবার বলা সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি ৷ তাই আমরা কর্মবিরতিতে যাই এবং ধরনামঞ্চ থেকেই আমরা ঘোষণা করি, জীবন বাজি রেখে আমরা আন্দোলন করব ৷ সেই মতো আমরা জীবনকে বাজি রেখেই আন্দোলন করছি ৷ আমি ন'দিন পর অনশনমঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ি ৷ আমাদের অন্যান্য সহযোদ্ধারাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৷ অনশনমঞ্চে প্রথম দিন থেকে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এখনও শুধুমাত্র জল খেয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ অন্য কোনও রকমের খাদ্য সরবরাহ তাঁদের জন্য নেই ৷
ইটিভি ভারত- অভয়ার সঠিক বিচার আপনাদের প্রধান দাবি ৷ বর্তমানে সিবিআই এই তদন্ত চালাচ্ছে ৷ রাজ্য সরকার তদন্তের বিষয়ে সিবিআইয়ের দিকেই সব দায় ঠেলে দিচ্ছে ৷ এই বিষয়ে আপনাদের কী মত ?
পুলস্ত্য আচার্য- আমরা গতকাল একটি ইমেল করেছি এবং তাতে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে, আমরা কী চাইছি ৷ তার মধ্যে প্রথম যে দাবিটি রয়েছে, তাতে আমরা বলেছি, সিবিআইয়ের দেওয়া প্রথম চার্জশিট অনুযায়ী, যে সমস্ত প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে, দোষ ঢাকার চেষ্টা হয়েছে, তা স্পষ্ট হোক ৷ দোষীরা শাস্তি পাক ৷ রাজ্য সরকার তদন্তকারী সংস্থাকে সব দিক দিয়ে সহযোগিতা করুন ৷
ইটিভি ভারত- শাসকদলের একশ্রেণির নেতারা আপনাদের আন্দোলনকে কটাক্ষ করছেন ৷ তাঁরা বলছেন স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীরা, মূলত বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলি আপনাদের আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে ৷ যাতে সরকারি হাসপাতালের অবস্থা বেহাল হয় এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলি সেই সুযোগে মুনাফা লাভ করে ৷ কী বলবেন ?
পুলস্ত্য আচার্য- কথাগুলি একেবারেই বালখিল্য, হাস্যকর কথা ৷ সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার পোস্টে এই সমস্ত মন্তব্যের উত্তর নিজেরাই দিচ্ছেন ৷ আর এই মন্তব্যগুলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট এবং সাধারণ মানুষের যে আন্দোলন চলছে, তা নিয়ে তাঁদের মাথা ঘামানোর কোনও সময় নেই ৷ যে আন্দোলন চলছে, তা ন্যায় বিচারের জন্য আন্দোলন ৷ সৎ পথে আন্দোলন ৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বদলে ফেলার আন্দোলন ৷ তাতে কে কী বললেন, শাসকদল, বিরোধীদল, অনেক নেতা হয়তো কু-মন্তব্য করেছেন ৷ আবার অনেক নেতা-মন্ত্রী আমাদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ শাসক বা বিরোধী কিছুই জানি না ৷ আমরা তাই এইসব মন্তব্যে কোনও মাথা ঘামাচ্ছি না ৷
ইটিভি ভারত- যদি আপনাদের দাবি মেনে নেওয়া না-হয়, তাহলে কি আন্দোলনে আবার ফিরবেন ?
পুলস্ত্য আচার্য- আমি আন্দোলনেই আছি, হ্যাঁ অনশনে ফিরব কি না সেটা জিজ্ঞেস করতে পারেন ৷ এখনই অনশনে ফিরছি না ৷ তবে, আন্দোলন মঞ্চে অবশ্যই যাব ৷ সুরাহা হোক, এটা আমরা সবাই চাই ৷ মানবিকতার খাতিরে আমরা নিজের জীবন বাজি রেখে যাঁরা লড়ছি, লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের আমাদের জন্য গলা দিয়ে ভাত নামছে না ৷ তাই আমরা চাই সুরাহা হোক ৷ সুরাহা না-হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব ৷