পেট্রাপোল, 20 মে: ওঁদের জীবন কাঁটাতারে বন্দি । স্বাধীনতার এত বছর পরেও মুক্তির স্বাদ ওঁদের আজও মেলেনি । আজ যখন গোটা দেশে পঞ্চম দফায় নির্বাচন চলছে, তখন মুক্তির আশায় ভোটার কার্ড হাতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা ৷ তাঁর চান, নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে মুক্তি ৷
বনগাঁ পেট্রাপোল সীমান্তের শেষ গ্রাম জয়ন্তীপুর । তারপরেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশ । মাঝে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া । যার একপাশে প্রহরারত রয়েছে বিজিবি । অন্যদিকে রয়েছে বিএসএফ । এরই মাঝে রয়েছে নো ম্যানস ল্যান্ড । এখানেই বসবাস করে 36টি পরিবার । যাঁদের অধিকাংশ মানুষেরই জীবিকা কৃষিকাজ ।
তবে এলাকায় তাঁদের নামেও বদনাম কম নেই । কেউ কেউ বলেন, পাচার-সহ নানা দুস্কর্মের সঙ্গে এঁরা জড়িত । আর তাই এঁদের প্রতি সাধারণ নাগরিক থেকে ভারতীয় সীমা সুরক্ষা বল - সকলেরই রয়েছে একটা ঘোরতর অবিশ্বাস । এঁরা যখন মূল ভূখণ্ডে আসেন, তখন এঁদের নিরাপত্তার সমস্ত ঘেরাটোপ অতিক্রম করে তবে আসতে হয় । এটাই নিত্যদিনের রুটিন ৷ বিএসএফের কাছে এঁদের জন্য নির্দিষ্ট খাতা রয়েছে । তাতে সই করার পর হয় আপাদমস্তক চেকিং । তারপরেই মেলে মূল ভূখণ্ডে আসার ছাড়পত্র ।
আজ ভোটের দিন । পঞ্চম দফায় গোটা দেশে যখন উৎসবের মেজাজে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন নাগরিকেরা, তখন মন খারাপ জয়ন্তীপুরের বাসিন্দাদের । মন খারাপের কারণ একটাই ৷ কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায় ?" জন্মসূত্রেই তাঁদের প্রাপ্তি কাঁটাতারের বন্দি জীবন । শত চেষ্টা করলেও এর থেকে মুক্তি মিলছে না ।
তাঁদেরই একজন আজ ইটিভি ভারতকে বললেন, "পরিস্থিতি এতটাই অসহ্যকর যে, নিকট আত্মীয়রাও অনেকে আমাদের এড়িয়ে চলেন । এত নিরাপত্তার কড়াকড়ি উপেক্ষা করে কী করে এখানে আসবেন ? অনেক বাড়িতেই জামাই ও মেয়েরা আসেন না । অনেকেই আবার আমাদের সঙ্গে সংশ্রব এড়িয়ে চলেন । তাই আমরা এ সব থেকে মুক্তি চাই ।"
অনেকেই আবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না ৷ কারণ তাঁদের কথায়, যে যাই করুন বা যাই বলুন, এই পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার নয় । তবু একটা পুরনো প্রবাদ আছে, "আশায় বাঁচে চাষা ।" এঁদের চোখেও একটা আশা আজও থেকে গিয়েছে ৷ হয়তো কোনওদিন তাঁদের সামনে থাকা কাঁটাতার নেমে যাবে ! আর পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতোই তাঁরা জীবন যাপন করতে পারবেন ! এত তল্লাশি, নিরাপত্তা যে তাঁদের চাই না । চাই না এই বন্দি জীবন ৷ কিন্তু পরিণতি ঠিক কী, তা নিয়ে সন্দিহান নো ম্যানস ল্যান্ডের বাসিন্দারা ৷
আরও পড়ুন: