কলকাতা, 18 জুন: ট্রেনের মধ্যে রাতের অন্ধকারে তখন মায়ের সঙ্গে অঘোরে ঘুমোচ্ছে দিশান ৷ আচমকা বিকট এক শব্দ ৷ আর সঙ্গে প্রবল ঝাঁকুনি ৷ নিমেষে ভেঙে গেল ঘুম ৷ কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছিল না ৷ মায়ের কাছে 11 বছরের ছেলে জানতে চায়, ঠিক কী হয়েছে ? মা-ও জবাব দিতে পারেননি ৷ তবে মা-ছেলে ও বাকি যাত্রীরা তখন এটা বুঝতে পেরেছিল যে, কিছু একটা হয়েছে ৷ আর সেটা খুব ছোটখাটো কিছু নয় ৷
ঘটনার আঁচ পেতে জানলা দিয়ে মুখ বের করে কয়েকজন ৷ তখনই চোখ কপালে ওঠে ৷ দেখা গেল, বগির উপর বগি উঠে সে এক বীভৎস ছবি । ততক্ষণে যাত্রীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, যে ট্রেনে তাঁরা সফর করছেন, তা বিরাট দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ৷ মালগাড়িটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনে ধাক্কা মারায় কপালজোড়ে প্রাণরক্ষা হয়েছে ট্রেনের মাঝের দিকের কোচে থাকা যাত্রীদের ৷ কোনও রকমে বাড়ি ফিরেছেন ধূপগুড়ি বিবেকানন্দ পাড়ার চক্রবর্তী পরিবারের দুই সদস্য । তবে আতঙ্ক এখনও কাটেনি ৷ মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের ৷
সোমবার সকালে ধূপগুড়ি থেকে রামপুরহাটে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চাপেন রিমা চক্রবর্তী এবং তাঁর 11 বছরের ছেলে দিশান । না, বাপের বাড়ি যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি ৷ তবে এত বড় একটা দুর্ঘটনার মুখে পড়েও যে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন এটাই অনেক ৷ এখনও ট্রেনের সেই ঝাঁকুনি শরীরে-মনে অনুভব করে চলেছেন ৷ ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানালেন মা ও ছেলে ।
বাড়ি ফেরার পর রিমা চক্রবর্তী বলেন, "সকালে ধূপগুড়ি স্টেশন থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম । ট্রেনে ওঠার পর ছেলে আর আমি ঘুমিয়ে পড়ি । এনজেপি পার হওয়ার পর আমার ঘুমটা হালকা হয় । কিছুক্ষণ পরই বিকট শব্দ পাই ৷ মনে হচ্ছিল, ট্রেনের উপর বজ্রপাত হয়েছে । জানলা দিয়ে মাথা বের করতেই বুঝতে পারি, আমাদের ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে । ট্রেনের পিছনের বগি-সহ আরও একটি বগি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে । একটি বগি ট্রেনের উপরে উঠে গিয়েছিল । মুহূর্তে সকলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । যে যেমন করে পারে প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকে । গ্রামবাসীরা এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগান । বাড়ি ফেরার পরও এখনও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছি । এখনও সেই দুর্ঘটনার ছবিগুলো চোখে ভাসছে ।"