জলপাইগুড়ি, 7 মার্চ: পশ্চিমবঙ্গে 42টির মধ্যে অন্যতম একটি জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র ৷ যার রাজনৈতিক গুরুত্ব জাতীয়স্তরে গত লোকসভার পর থেকে অনেকটাই বেড়েছে ৷ আর এই কেন্দ্রের সাংসদ বিজেপির জয়ন্ত কুমার রায় ৷ এমন একটি কেন্দ্রে সাংসদ হিসেবে কতটা কাজ করতে পেরেছেন তিনি ? আর কতটাই বা পারেননি? কী সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লোকসভা কেন্দ্রের অলিতে-গলিতে ঘুরল ইটিভি ভারত ৷ আমরা কথা বললাম সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায়ের সঙ্গেও ৷
লোকসভা কেন্দ্রে জয়ন্ত কুমার রায় বেশ কিছু কাজ করলেও, দত্তক নেওয়া গ্রামের জন্য কিছুই করতে পারেননি বলে অভিযোগ ৷ যদিও সাংসদের অভিযোগ, দত্তক নেওয়া গ্রামে তাঁকে কাজই করতে দেওয়া হয়নি ৷ শুধু তাই নয়, ফার্মাসি কলেজের উন্নয়নের জন্য খরচ করতে চেয়েও কাজ করতে পারেননি ৷ আর এসবের জন্য তিনি দায়ী করছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে ৷
তাঁর সাংসদ তহবিলে কেন্দ্রের থেকে 17 কোটি টাকা এই পাঁচ বছরে অনুমোদন করিয়েছেন জয়ন্ত কুমার রায় ৷ সাংসদের দাবি, সেই তহবিলের থেকে 40-45 লক্ষ টাকা পড়ে আছে ৷ বাকি তিনি তাঁর দিক থেকে পাশ করিয়ে দিয়েছেন ৷ এবার জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত স্থানীয় প্রশাসনের উপর নির্ভর করছে, সেই টাকা খরচ কীভাবে হবে ৷ তবে, এখনও পর্যন্ত তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকায় গভীর নলকূপ খনন, রাস্তা নির্মাণ, স্কুল ভবন তৈরি, নিকাশি নালা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের প্রকল্প, বাঁধ নির্মাণ, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সীমানার পাঁচিল তোলার কাজ হয়েছে ৷
এর বাইরে উত্তরবঙ্গ তথা জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার ও সেই সূত্রে দার্জিলিংয়ের খানিকটা, এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁর উদ্যোগে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা দারুণ উন্নত হয়েছে ৷ আর তা শুধু মুখের কথা নয় ৷ তিনি কাজে তা করে দেখিয়েছেন রেলমন্ত্রকের সঙ্গে মিলে ৷ নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়া ও গুয়াহাটি, দু’টি বন্দেভারত এক্সপ্রেস তাঁর উদ্যোগেই এসেছে ৷ জলপাইগুড়ি থেকে ভিনরাজ্যে কিষান রেল চালানো হয়েছে ৷ জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে পদাতিক এক্সপ্রেসের স্টপেজ হয়েছে ৷ নিউ ময়নাগুড়ি স্টেশনে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ও কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের স্টপেজ হয়েছে ৷ নিউ মাল স্টেশনে কামাক্ষ্যা-রাজেন্দ্রনগর ও কামাক্ষ্যা-আনন্দ বিহার এক্সপ্রেসের স্টপেজ পয়েছে জলপাইগুড়ি লোকসভা ৷ ধুপগুড়িতে সরাইঘাট এক্সপ্রেস, বানারহাটে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, বেলাকোবা, আমবাড়ি ফালাকাটায় নিউ জলপাইগুড়ি-নিউ বঙ্গাইগাও এক্সপ্রেসের স্টপেজ হয়েছে ৷
বিশেষভাবে উল্লেখ্য ভারতীয় রেলের ঐতিহ্যবাহী এনজেপি-শিয়ালদা দার্জিলিং মেল এতদিন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়ত ৷ সেটি এখন সরাসরি হলদিবাড়ি থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত চলে ৷ আর এর জন্য রেল বোর্ডের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই চালিয়েছেন জয়ন্ত কুমার রায় ৷ এছাড়া সড়ক পরিবহণে ময়নাগুড়ি থেকে শিলিগুড়িগামী 31নং জাতীয় সড়কের উপর ময়নাগুড়ি রোড, মোহিতনগরে হাইওয়েতে রেললাইনের অংশে ফ্লাইওভার তৈরি করেছেন ৷ ফলে রেলগেট পড়ার জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যা দূর হয়েছে ৷
জয়ন্ত কুমার রায় দাবি করেছেন, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অনুমোদনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল ৷ কিন্তু, তা দেয়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও অর্থমন্ত্রক ৷ পরবর্তীতে তিনি সাংসদ হয়ে কেন্দ্রের থেকে 195 কোটি টাকা বাজেট জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের জন্য অনুমোদন করিয়েছিলেন ৷ রানিনগর বিএসএফ ক্যাম্পে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে 45 কোটি টাকার বাজেট পাশ করিয়েছেন তিনি ৷ সেই কাজ বর্তমানে চলছে ৷ জলপাইগুড়ি রোড ষ্টেশনকে রাজবাড়ির আদলে ও টাউন ষ্টেশনকে হেরিটেজ ঘোষণার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন সাংসদ ৷
জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে সাংসদ যা করতে পারেনি...
তেতুলিয়া করিডর এখনও বাস্তবায়ন করতে না-পারার আক্ষেপ জয়ন্ত কুমার রায়ের রয়েছে ৷ সংসদীয় এলাকায় মালবাজারে আয়ুষ হাসপাতাল তৈরির ইচ্ছেপূরণ হয়নি ৷ মেখলিগঞ্জ ও ফুলবাড়িতে ল্যান্ডপোর্ট দরকার ৷ কিন্তু, সেখানে রাজ্য সরকার জমি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ৷ এর জন্য 200 একর জমির প্রয়োজন ৷ কিন্তু, 25 একর পাওয়া যাচ্ছে ৷ রাজ্য সরকারের সদইচ্ছার অভাব আছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংসদ ৷ জলপাইগুড়ির দোমোহনীতে শিল্পতালুক গড়ার ইচ্ছে থাকলেও করতে পারেননি ৷ এমনকি পর্যটনের বিকাশে যা কাজ হয়েছে বা হচ্ছে, তার থেকে ভালো কাজ হতে পারত বলে মনে করেন জয়ন্ত কুমার রায় ৷
এই পাঁচ বছরে লোকসভায় জয়ন্ত কুমার রায়ের উপস্থিতির হার ছিল 90 শতাংশ ৷ করোনার সময় কিছুদিন যেতে পারেননি তিনি ৷ বিগত পাঁচ বছরে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পেয়েছেন 17 কোটি টাকা ৷ যার মধ্যে 2019-20 সালে পেয়েছিলেন 5 কোটি টাকা ৷ 2021-22 অর্থবর্ষে 2 কোটি টাকা ৷ 2022-23 ও 2023-24 অর্থবর্ষে 5 কোটি টাকা পেয়েছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ ৷ যার মধ্যে কিছু ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া যায়নি ৷ ফলে বাকি টাকা যেমন পাননি, তেমনি কোভিডের সময় টাকা আসেনি বলে সাংসদ জানান ৷
আরও পড়ুন: