কলকাতা, 12 মে: "জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ,
আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ "...
নিজের লেখায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য অনেক আগেই জীবন্ত প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার কথা উল্লেখ করেছিলেন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই প্রাণ সব থেকে বেশি হত্যা হচ্ছে সমাজেরই উন্নততর জীবের হাতে । তাই এবার 'অঙ্কুরিত বীজ'দের হাতে তুলে দেওয়া হল সমাজ গড়ার আসল দায়িত্ব ।
তীব্র গরমে স্কুলে স্কুলে ছুটি বেড়েছে ৷ বর্ধিত এই সময়কে সমাজমূলক কাজে ব্যবহার করতে চায়ছে কলকাতা শহরের নামজাদা এক সরকারি স্কুল । খানিকটা ওই 'এক ঢিলে দুই পাখি মারা'র মতো ব্যবস্থা ৷ ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ সম্পর্কে সচনেতন করে তোলার পাশাপাশি গরমের ছুটিতে 'অন্যরকম' হোম ওয়ার্ক দিয়ে পড়ুয়াদের একঘেঁয়েমি কাটানোর এই নতুন ভাবনা নিয়েছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠ । গরমের ছুটিতে বৃক্ষরোপণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের ৷
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের তরফে পঞ্চম থেকে নবম ক্লাস পর্যন্ত সকল পড়ুয়াকে বাড়িতে বসে পাঁচটা করে গাছ লাগাতে বলা হয়েছে । তার সঙ্গে প্রত্যেকটা মুহূর্তের ছবি ধরে রাখতে হবে তাদের মুঠো ফোনে । ছুটির পর স্কুল খোলার সময় সেই ছবি তারা জমা দেবে একটি প্রজেক্ট বইয়ের মাধ্যমে । এখানেই শেষ নয় ৷ গাছের পরিচর্যা কীভাবে করা হয়েছে? এখন কেমন অবস্থায় রয়েছে? সেইসব লিখে জানাতে হবে প্রজেক্ট বইয়ে । আর এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে তদারকি করবেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য ।
সেইসঙ্গে গরমের ছুটির পর স্কুল খোলার সময় পাঁচটার মধ্যে যেকোনও একটি গাছের টব নিয়ে আসতে হবে স্কুলে । স্কুল কক্ষের মধ্যে কোথাও একটা রাখা হবে সেই গাছটিকে । সঙ্গে লেখা থাকবে পড়ুয়ার নাম এবং ক্লাস ৷ অভিনব এই ভাবনার কারণ হিসেবে প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য ইটিভি ভারতকে জানান, "যদি কোনও ছাত্র বা ছাত্রী এই বয়স থেকেই গাছের পরিচর্যা করতে শুরু করে তাহলে তার মধ্যে পরিবেশ বান্ধব মানসিকতা তৈরি হবে । সে ভবিষ্যতে আরও গাছ লাগাবে । এমনকী দূষণ সম্পর্কেও সচেতন হবে । আর যখন দেখবে স্কুলে তার লাগানো গাছটি রয়েছে তখন তার সেই কাজের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে ।"
আরও একটি ভাবনা নিয়েছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠ । করোনার সময় অনলাইন পড়াশোনার উপর ঝোঁক বেড়েছে পড়ুয়াদের । সেই সময় দীর্ঘদিন না লেখার কারণে হাতের লেখা খারাপ হয়ে গিয়েছে বহু পড়ুয়ার । এমনকী বেশ কিছু পড়ুয়া ভুলেও গিয়েছে বিভিন্ন অক্ষর । সেকারণে এই গরমের ছুটিতে রয়েছে তাদের জন্য হাতের লেখার কাজ ।
স্কুলের তরফে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির সকল পড়ুয়াকে বাংলা ও ইংরেজিতে হাতের লেখার হোমটাস্ক দিয়েছে স্কুল । সঙ্গে বাংলা ভাষার প্রতি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এপ্রিল মাসের শেষের দিকে গরমের ছুটির মধ্যে অফলাইনেই একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল যাদবপুর বিদ্যাপীঠের তরফে । নবম এবং দশম শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রীর ক্লাস নিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন অধ্যাপক । আগামী দিনে ইংরেজির জন্যেও এমন পরিকল্পনা রয়েছে যাদবপুর স্কুল কর্তৃপক্ষের ।
আরও পড়ুন: