মালদা, 10 অগস্ট: অনুপ্রবেশের শঙ্কায় জলপাইগুড়ি ৷ শঙ্কা রয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর নিয়েও ৷ দুই জেলার সীমান্ত গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ৷ ওপারের ভূখণ্ডে যে কোনও মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব ৷ মালদা জেলাতেও এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেগুলি ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে ৷ এখনও পর্যন্ত সেই গ্রামগুলিতে শান্তি বজায় রয়েছে ৷ তবে অশান্তির আগুন যে ছড়িয়ে পড়বে না, অনুপ্রবেশকারীরা যে সেই গ্রামগুলি দিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করবে না, তা হলফ করে বলতে পারছেন না ভারতীয়রা ৷
উদ্বেগ রয়েছে তাঁদের মনেও ৷ নিজেদের এই পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন তাঁরা ৷ মালদা জেলার কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকে রয়েছে এমন কয়েকটি গ্রাম, যেগুলি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে ৷ এর মধ্যে রয়েছে চরি অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনটি বুথ মানিকটোলা, দুইশত বিঘি ও মহব্বতপুর ৷ এছাড়া রয়েছে আকন্দবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিক সুলতানপুর গ্রাম ৷ সব মিলিয়ে হাজার তিনেক মানুষ এই গ্রামগুলিতে বসবাস করেন ৷ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মানুষগুলিকে নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে জেলায় ৷
এই গ্রামগুলির মধ্যে মিলিক সুলতানপুরের ভৌগোলিক পরিস্থিতি একটু আলাদা ৷ গ্রামের বেশ কিছু এলাকা কাঁটাতারবিহীন ৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, 23 বছর আগে বিএসএফ এই গ্রামে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর উদ্যোগ নেয় ৷ ভারত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, জিরো পয়েন্ট থেকে 150 গজ ভিতরে সেই বেড়া বসানোর কথা ৷ কিন্তু এই গ্রামে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে সেই বেড়া বসানোর কাজ শুরু করে ৷ এনিয়ে গ্রামবাসীরা আদালতের দ্বারস্থ হন ৷
বেড়া বসানোর কাজ বন্ধ করে দেয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ৷ ফলে সুলতানপুর পুরোটাই অরক্ষিত থেকে যায় ৷ পরবর্তীতে বিএসএফ-এর তরফে গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় একটি চেকপোস্ট বসিয়ে দেওয়া হয় ৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীদের ৷ তাঁরা চাইছেন, কেন্দ্রের নিয়ম মেনে তাঁদের গ্রামেও জিরো পয়েন্টের 150 গজ ভিতরে ত্রিস্তরীয় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হোক ৷
মিলিক সুলতানপুরের বাসিন্দা মহম্মদ আলম ৷ ফোনে ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমাদের গ্রামে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত ৷ বাংলাদেশে যা চলছে তার কোনও আঁচ এখনও আমাদের গ্রামে আসেনি ৷ কিন্তু অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে যে কোনও মুহূর্তে দুষ্কৃতীরা এখানে চলে আসতে পারে ৷ আসতে পারে ভারতে ঢুকতে চাওয়া অনুপ্রবেশকারীরাও ৷ এখান থেকে 4-5 কিলোমিটার দূরেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চলছে ৷ তাদের নিশানায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ৷"
তিনি আরও বলেন, "অত্যাচারিত হয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনও ফাঁকা জায়গা দিয়ে এই এলাকায় চলে আসতে পারে ৷ ঠিক যেভাবে বছর চারেক আগে এক চিনা নাগরিক মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছিল ৷ অবশ্য তাকে বিএসএফ ধরে ফেলেছিল ৷ কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন এই এলাকায় চলে এলে আমাদের সমস্যা আরও বাড়বে ৷ কারণ, তারা একা থাকবে না ৷ তবে এখন বিএসএফ ফাঁকা জায়গায় পাহারা দিচ্ছে ৷ সোমবার দুপুর থেকেই পোস্ট বসানো হয়েছে ৷"
দুইশত বিঘি গ্রামের ভক্তি মণ্ডল বলেন, "আমাদের গ্রাম কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের দিকে হলেও এই এলাকায় যেসব বাংলাদেশি গ্রাম রয়েছে, সেখানকার মানুষজন খুব শান্তশিষ্ট ৷ তারা কোনও ঝামেলায় জড়ায় না ৷ আমাদের সঙ্গে সদ্ভাবও রয়েছে ৷ তবে এখান থেকে 3-4 কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জে ভালো ঝামেলা চলছে ৷ রাতে বোমা-গুলির আওয়াজও ভেসে আসে ৷ তবে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না ৷ অশান্তি এড়াতে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে ঢুকে পড়তে পারে ৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি, আমাদের ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে পুনর্বাসন দেওয়া হোক ৷ কিন্তু সরকার কোনও উদ্যোগই নিচ্ছে না ৷"
এখনও এই গ্রামগুলির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ কালিয়াচকের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষের ৷ তিনি বলেন, "বামনগোলা থেকে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লক পর্যন্ত প্রায় 70 কিলোমিটার ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত ৷ এর মধ্যে অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই ৷ অনেক জায়গায় বিএসএফ নিয়ম না মেনে বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করায় স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে গোলমাল বাঁধে ৷ সেই বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়ায় ৷ তার জেরে বহু মানুষ অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় বসবাস করছে ৷ ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও তারা নিজভূমে পরবাসী হয়ে রয়েছে ৷ বাংলাদেশে ঘটনার কোনও প্রভাব এই মুহূর্তে মালদায় কাঁটাতারের ওপারে থাকা গ্রামগুলিতে পড়েনি ৷ কিন্তু এসব এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা যে হবে না, তা হলফ করে বলা যায় না ৷"