দত্তপুকুর, 13 জানুয়ারি: পেশায় সামান্য অটোচালক! অথচ, এদেশে এসে বছর খানেকের মধ্যেই নিজের জীবনযাত্রা বদলে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, যা রীতিমতো অবাক করেছিল স্থানীয়দেরও। অনেকেই বলছেন, নুরুলের ঠাটবাটই ছিল অন্য রকম। হাতে তাঁর সব সময় থাকত দামি ঘড়ি। আইফোন ছাড়া অন্য কোনও ফোন ব্যবহার করতেন না। শুধু তাই নয়, কোনও অনুষ্ঠান হলেই শয়ে শয়ে টাকাও খরচ করতেন নুরুল ৷ এমনই দাবি করছেন স্থানীয় লোকজন। কিন্তু, সামান্য অটোচালক হয়ে কীভাবে সে এত বিলাসবহুল জীবনযাপন? এখানেই খটকা লাগছে তদন্তকারীদের। পুলিশের অনুমান, এসবই অসৎ পথে উপার্জনের টাকা। এদেশে নিজের ঠাঁই তৈরির পর নুরুল অন্য অনুপ্রবেশকারীদের জাল পরিচয়পত্র বানাতে সাহায্য করতেন। সেখান থেকেই নুরুল মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করতেন বলে ধারণা তদন্তকারীদের। তবুও দত্তপুকুর থেকে ধৃত বাংলাদেশি নুরুল ইসলামের আয়ের উৎস খুঁজতে তৎপর পুলিশ।
ওপার বাংলার গাজিপুরের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম এপার বাংলায় এসে নাম ভাঁড়িয়ে হয়েছিলেন নারায়ণ অধিকারী। বাবার নাম গিয়াস মিঞার পরিবর্তে এখানে করেছিলেন নগেন অধিকারী। থাকছিলেন বারাসতের দক্ষিণ কাজিপাড়ার বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলামের বাড়িতে। এই রফিকুলের বাড়ি বাংলাদেশের মাদারিহাট এলাকায়। দুজনেরই কাজকর্ম ও গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাঁদের উপর নজর রাখতে শুরু করেছিল দত্তপুকুর থানার পুলিশ।
রবিবার ভোরে ওই দুই বাংলাদেশিকে পাকড়াও করা হয় বামনগাছি চৌমাথা সংলগ্ন এলাকা থেকে। বারাসত এলাকা থেকে এর আগেও বাংলাদেশিদের এদেশের ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সমীর দাস-সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ফের দুই বাংলাদেশির সন্ধান মিলল বারাসতে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত নুরুল বিগত তিন-সাড়ে তিন বছর ধরে বারাসতের দক্ষিণ কাজিপাড়ার রফিকুলের বাড়িতে ভাড়া থাকার নামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই সময়কালেই সে নারায়ণ নামে জাল আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে ফেলেছিল। সেগুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। রফিকুল আবার বিগত প্রায় কুড়ি বছর ধরে থাকছিল এদেশে। প্রথমে সে দত্তপুকুর এলাকায় থাকলেও পরে রফিকুল দক্ষিণ কাজিপাড়ায় বাড়ি তৈরি করে ভারতীয় মহিলাকে বিয়ে করে পাকাপাকিভাবে এদেশে থাকতে শুরু করেছিল।
পেশায় লোক দেখানো অটোচালক হলেও দুজনের জীবনযাত্রা নিয়ে স্থানীয় ও পরিচিতদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। তারই মধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উত্তাল পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশকারীদের ধরপাকড় শুরু হলে এই দুজনের গতিবিধির উপরও নজর রাখতে শুরু করেছিল পুলিশ। শেষে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, বাংলাদেশি দালালের মাধ্যমে নুরুল ওপার বাংলার ক্লায়েন্ট জোগাড় করত। তারপর মোটা টাকার বিনিময়ে রফিকুলের মাধ্যমে সে বাংলাদেশিদের ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দিত। এদিকে, ধৃত দুজনের সঙ্গে বারাসত থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার সমীর দাস-সহ চারজনের কোনও যোগ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।