কলকাতা, 31 অক্টোবর: আলোর মালায় সাজাব যতনে ৷ এই আলো সমৃদ্ধির, উৎসবের। আলোর ঝর্ণাধারায় অবগাহন কর হে তিলোত্তমা। এটা কোনও সরকারি বিধিবদ্ধ বিজ্ঞাপনের লাইন নয়। এই আহ্বান এক অবাঙালি কলকাতাবাসীর। জন্ম গুজরাতে হলেও আমার-আপনার মতো মানুষটি বড় বেশি কলকাতার। তাই সব ধর্মের মিলনমেলা তিলোত্তমায় আলোর 'মশাল' নিয়ে হাজির মুদার পাথেরিয়া।
মুদার পাথেরিয়ার আলোর কাজ
একটা ভাবনার রেশ ধরে গতবছর কালীপুজোর ঠিক আগে থেকেই শুরু এই কাজ শুরু করেছিলেন ৷ ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসস্থান নয়, মুদার পাথেরিয়া কলকাতার কিছু পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপত্যকে আলোয় সাজিয়ে তোলার কাজ করছেন ৷ মাত্র একবছরের মাথায় আলোকসজ্জায় প্রায় 47টি ভবনকে সজ্জিত করে তুলেছেন। আর রাতের কলকাতাকে আলোকসজ্জা দিয়ে 'তিলে তিলে উত্তমা' করে তোলার এই গুরুদ্বায়ভার নিয়েছেন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী মুদার পাথেরিয়া।
আলোয় আলোয় কলকাতা
এই আলোর উৎসবে আমরা যেমন নিজেদের বাড়ি-ঘর নানা কায়দায় ঝলমলে আলোতে সাজিয়ে তুলি তেমনই সমাজকর্মী মুদার পাথেরিয়া নানা কায়দার আলোকসজ্জা দিয়ে মোহময় করে তুলেছেন রাতের কলকাতাকে। শুধুমাত্র কালীপুজো বা দীপাবলি উপলক্ষেই সারাবছর জ্বলে থাকবে এই আলো।
ঝলমলে পুরনো বাড়ি
ঐতিহ্যের শহর কলকাতার ইতি উতি ছড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ ও ভারতীয়দের তৈরি এমন সব স্থাপত্যগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস। তবে নতুন প্রজন্ম এই স্থাপত্যগুলি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না ৷ আর যারা জানতেন তারাও প্রায় ভুলতে বসেছেন। চূড়ান্ত অবহেলায় একাধিক ভবন ঢাকা পড়েছে কিংবা সেগুলির সামনে দিয়ে দিনের ব্যস্ত সময় যাতায়াত করলেও চোখে পড়ে না।
তবে সেইসব ভবন বা স্থাপত্যগুলিকে আলোকিত করার পর রাতের আধার চিরে যখন সেগুলি বেরিয়ে পড়েছে, তখন তা সৃষ্ঠি করেছে এক ম্যাজিকের। আগে যেই বাড়িগুলোর সামনে দিয়ে চলে গেলেও চোখে পড়ত না, সেগুলি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠল।
কী বলছেন অবাঙালি কলকাতাবাসী
শহর কলকাতার ভালোবাসায় আসক্ত মুদার পাথেরিয়া জানান, মানিকতলা বাজারের একটি বাড়ির উপরের অংশটি সংস্কারের অঙ্গ হিসেবে রং করা হলেও রাতেও যাতে সেটি চোখে পড়ে সেই ভাবনা থেকেই বাড়িটিকে এলইডি লাইট দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন। আর এভাবেই তিনি বিশিষ্ট কিছু ভবনকে এলইডি দিয়ে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু করেন।
দেখা যায়, শুধু সেই ভবনটি তা নয়, চার পাশের এলাকার চেহারাটাই অন্যরকম হয়ে গিয়েছে ৷ ওই একটি ভবনকে আলোকিত করার ফলে পুরো অঞ্চলটি খুব সুন্দরভাবে সেজে উঠেছে। এরপর উত্তর কলকাতার রামদুলাল সরকার স্ট্রিটে একটি পুরনো মন্দিরকে আলোকিত করে তোলা হয়েছে ৷
পরবর্তী উদ্যোগ
স্থানীয় বাসিন্দারা, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। রাতারাতি পুরো পাড়ার চেহারাটাই রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এরপর তিনি আরও 18টি ভবনকে আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু করবেন। আগামী 2030 সালের মধ্যে কলকাতার প্রায় 500টি বাড়িকে আলো দিয়ে আজ যে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু আলোয় আলো নয় মুদার পাথেরিয়া আল্পনায় প্রিয় শহরকে রাঙিয়ে তুলতে চান। উৎসবের দিনে যেমন আমরা আমাদের প্রিয়জনদের নতুন জামা কাপড় বাজি মিষ্টি উপহার দিয়ে থাকি তেমনই মুদার পাথেরিয়া ও তাঁর সহকারীরা শহরবাসীর এক সুসজ্জিত কলকাতা উপহার দিচ্ছেন।
ঐতিহ্যের হাত ধরাধরিতে শহর এগিয়ে চলেছে
ঠিক একইরকমভাবে তিনি ও তার দল প্রতি কালীপুজো এবং ক্রিসমাসের আগের দিন কাকভোরে উঠে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকেন তখন বাড়ির সামনের রকে বা সিঁড়িতে আল্পনা দেন। গৃহস্বামীর অজান্তে তাঁর বাড়িকে আল্পনায় সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয় ৷ সকালবেলায় দরজা খুলে গৃহস্বামী অবাক হয়ে চিন্তা করেন কে এঁকে দিয়ে গেলেন তাঁর বাড়ির সামনে এমন সুন্দর নকশা!
যেই ভবনগুলো আলোকিত করা হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হল
লেনিন সরণিতে স্যাক্রেড হার্ট চার্জ, কালীঘাটের গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ, কালীঘাটে টিপু সুলতানের ছেলের তৈরি মসজিদ, চৌরঙ্গিতে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, নিউমার্কেটের বড় ঘড়ি, চৌরঙ্গির সোসাইটি, এজএসসি বোস রোড রোডের সেন্ট জেমস চার্জ, ডালহৌসিতে রয়েল ইন্সুরেন্স বিল্ডিং, রয়েল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব, ব্রেবোর্ন রোডে পর্তুগিজ চার্চ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্জ, ইস্টার্ন রেলওয়ে, অ্য৷কাডেমি অফ ফাইন আর্টস-সহ আরও একাধিক বাড়ি।