সন্দেশখালি, 18 ফেব্রুয়ারি: সিপিএম আমলে ছিলেন সামান্য ঠিকাদার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা ৷ সেই শিবু হাজরার উত্থান হয়েছে তৃণমূল জমানায় ৷ তিনি এখন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ৷ মাত্র আট বছরে নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন শেখ শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা ৷ জোর করে জমি দখল, সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভেড়ি বানানো, গরিবের উন্নয়নের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, মহিলাদের উপর নির্যাতনের মতো একের পর এক দুর্নীতিতে যেন সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিলেন শিবু ৷
শিবুর সম্পত্তি: 2023 সালের পঞ্চায়েত ভোটে শিবুর নির্বাচনী সংক্রান্ত হলফনামা থেকেও তা স্পষ্ট ! পঞ্চায়েতের রিটার্নিং অফিসারের কাছে তিনি আয়-ব্যয়ের যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতেই কিন্তু চমক রয়েছে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতার সম্পত্তির ৷ সেখানে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে শিবু হাজরার কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির হিসেব পাওয়া যাচ্ছে ৷ সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ব্যাংকে তাঁর গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ 34 লক্ষ 30 হাজার টাকা ৷ হাতে রয়েছে নগদ 10 লক্ষ টাকা ৷ এছাড়া নিজের কাছেই আছে 50 লক্ষ টাকার সোনা-রুপোর গয়নাও ৷ স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হলফনামায় দেখানো হয়েছে জেলিয়াখালিতে তাঁর 16 একর জমি ৷ যার বাজারমূল্য 60 লক্ষ টাকা ৷ এই জেলিয়াখালিতেই 1 হাজার 800 স্কোয়ার ফুটের একটি বাড়ি রয়েছে শিবুর ৷ যার বাজারমূল্য 30 লক্ষ টাকা ৷
এদিকে, নির্বাচনী হলফনামায় তিনি ব্যবসাকেই তাঁর পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। ব্যবসা থেকে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতার বাৎসরিক আয় 17 লক্ষ 8 হাজার 655 টাকা ৷ শিবু হাজরার গাড়ি নেই ৷ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই ৷ এমনটাই উল্লেখ রয়েছে হলফনামায় ৷ এনিয়ে অবশ্য নানামহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷
অন্যদিকে, হলফনামায় উল্লেখ করা এই সম্পত্তির হিসেব আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র ৷ এমনটাই দাবি করছেন গ্রামবাসীদের একাংশ ৷ কারণ, সন্দেশখালি, জেলিয়াখালি-সহ আশপাশের এলাকায় শাহজাহান ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতার নামে-বেনামে যা সম্পত্তি রয়েছে, তা এর কয়েকগুণ । কী নেই ! একাধিক পোল্ট্রি ফার্ম, একরের পর একর জমিতে ভেড়ি ব্যবসা, বাগানবাড়ি, পৈতৃকবাড়ি, মদের দোকান ৷ এছাড়া নিউটাউনে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেশখালির জেলিয়াখালির বাসিন্দা শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু একসময় সিপিএমের স্থানীয় স্তরের নেতা ছিলেন ৷ সামান্য ঠিকাদারি করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন ৷ পরিবারে স্ত্রী ও এক ছেলে আছে ৷ রাজ্যে সিপিএম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই দলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন শিবু ৷
পরে শিবু পাকাপাকিভাবে সিপিএম ছেড়ে নাম লেখান তৃণমূলে ৷ শাসকদলে ভিড়ে ক্রমেই তিনি সন্দেশখালির 'বাদশা' শেখ শাহজাহানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন ৷ তাঁর কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিতি পাওয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিটও পেয়ে যান শিবু ৷ এর আগে প্রতিবার গ্রামপঞ্চায়েত আসনে শিবু শাসকদলের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ৷ তবে 2023 সালে প্রথমবার পঞ্চায়েত ভোটে জেলাপরিষদ আসন থেকে লড়াই করেন তিনি ৷ সেবার তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা ৷ ফলে, জেলাপরিষদ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতা ৷ জেলাপরিষদের সদস্য হওয়ার পাশাপাশি দলের সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের দায়িত্বও ছিল শিবুর কাঁধে ৷
তাঁর অন্যায়-অত্যাচার দেখেও প্রাণভয়ে দিনের পর দিন সেসব মুখ বুজেই সহ্য করতে হয়েছে গ্রামবাসীদের বলেই খবর ৷ সম্প্রতি সন্দেশখালিকাণ্ড সামনে আসতেই প্রতিবাদের পথ খুলে যায় ৷ দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুন কার্যত জনবিস্ফোরণের চেহারা নেয় ৷ যার জেরে চাপে পড়ে শেষে গ্রেফতার করতে হয় শিবুকে ৷ যাঁর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা যোগ করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: