কলকাতা, 12 ডিসেম্বর: গত এক বছরে ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন কতজন ব্যাক্তি বিদেশে গিয়েছে ? পাসপোর্ট কতৃপক্ষকে তা জানাতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি, ফৌজদারি অপরাধে কতজন অভিযুক্তের বিদেশযাত্রা আটকেছে, তা-ও জানতে চেয়ে গত এক বছরের নামের তালিকা-সহ রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷ ওই ব্যক্তিদের নাম, অপরাধ-সহ তালিকা পেশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রিজিওন্যাল পাসপোর্ট অফিসকে। আগামী 15 দিনের মধ্যে ওই রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷
কলকাতার এক তরুণী ভিসার অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তরুণী জানান, তিনি প্রেমিকের কাছে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, আমেরিকার দূতাবাস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিয়ম অনুযায়ী ভিসা পেতে একটি পুলিশি ছাড়পত্র বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (পিসিসি) প্রয়োজন। যেটি ভারতীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে দিতে হবে । এর পর পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু, ওই ছাড়পত্র তাঁকে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এর কারণ হিসাবে জানানো হয়, পুলিশ তাদের জানিয়েছে, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেটি বিচারাধীন। ফলে ‘পিসিসি’ দেওয়া যাবে না।
এরপর বাধ্য হয়ে শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হন তরুণী। এক্ষেত্রে হাই কোর্টের অন্য একটি নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক (শিয়ালদা আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট) তাঁর নির্দেশে জানান, ওই তরুণীর বিদেশ যেতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু, অভিযোগ, এর পরেও পুলিশ বা পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও লাভ হয়নি। তারা বিচারকের নির্দেশনামা পেয়েও কোনও পদক্ষেপ করেনি।
হাইকোর্টে ওই তরুণী দাবি করেছেন, তাঁর প্রেমিক আমেরিকায় থাকেন। সেখানে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। দু’জনে বিয়ে করবেন বলে স্থিরও করেন। দুজনেই বাড়ির লোকেদের বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের বিষয়টি জানানোও হয়। তরুণীর পরিবার এই বিয়েতে সম্মতি দিলেও তাঁর প্রেমিকের পরিবার আপত্তি জানায় বলে দাবি ওই তরুণীর। প্রেমিকের বাড়ি থেকে জানানো হয় তাঁরা তাদের ছেলের জন্য আলাদা পাত্রী দেখেছেন।কিন্তু, ছেলেটিও জানায়, সে তাঁর পছন্দের মেয়ে অর্থাৎ এই তরুণীকেই বিয়ে করবেন।
ওই যুবকের জন্য যে পাত্রী পছন্দ করেছিল তার পরিবার, সেই যুবতীর বাড়ি বিহারে। গত বছরের 17 জানুয়ারি ওই পাত্রী বিহার থেকে এসে যুবকের প্রেমিকা এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে চুরি ও মারধরের মামলা করেন বেনিয়াপুকুর থানায় ৷ মামলাটি শিয়ালদহ কোর্টে ওঠে। গত বছরের অক্টোবরে তরুণী এবং তাঁর পরিবারকে বিনা শর্তে জামিন মঞ্জুর করে আদালত। তার পরই আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন তরুণী ।
এই মামলায় বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর পর্যবেক্ষণ, "প্রেমিকার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর ধারায় অভিযুক্তরা বিদেশযাত্রা করেছে"। প্রসঙ্গত রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ত্বের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা থাকলেও তারা বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন এর আগে। তাই, এবার গত এক বছরে ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন কতজন ব্যাক্তি বিদেশে গিয়েছে, পাসপোর্ট কতৃপক্ষের কাছে তা জানতে চাইল হাইকোর্ট ৷