কলকাতা, 23 মার্চ: দোল খেলে ওরাও। আমার, আপনার মতো ওরাও হোলিতে দোল খেলে। কিন্তু আমার, আপনার মতো আবির বা রং দিয়ে নয় তবে ফুল দিয়ে। ফুল দোল। টালিগঞ্জের লাইটহাউস ফর দ্য ব্লাইন্ড-এর আবাসিক এবং শিশুরা ফুল দিয়ে দোল খেলে। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার ফুলের জন্যই দৃষ্টিহীনতা ও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দোলের এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে। ওদের আনন্দ ক্যামারায় দৃশ্যবন্দি করলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷
এই স্কুলে একেবারে শিশু থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। কেউ কেউ এখানে থেকে পড়াশোনা করে আবার কেউ প্রতিদিন স্কুলে আসে। সারাবছর সমস্ত অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এই দিনটির জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক, শিক্ষিকারা। বসন্ত উৎসবের আনন্দে ওরাও মেতে ওঠে। নিজেদের মতো করে ওরা একে-অপরকে রাঙিয়ে তোলে।
লাইট হাউস ফর দ্য ব্লাইন্ড স্কুলে গত 10 বছর ধরে শারদীয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের উদ্যোগে এই উৎসব করা হয়ে আসছে। গন্ধ আর স্পর্শকে হাতিয়ার করে গোটা স্কুল চত্বরজুড়ে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া এবং হরেকরকম ফুলের হোলিতে মাতে এই দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা ৷ আর এই আনন্দযজ্ঞে সামিল হয় ওঁদের পুরো পরিবারও। দোলের উৎসবে দৃষ্টিহীন ছাত্র-ছাত্রীরা নাচ-গান করেন এবং সকলে মিলে সুরের তালে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন ৷
শারদীয়ার ম্যানেজিং ট্রাস্টি সৌমন সাহা জানান, আজ থেকে 9 বছর আগে খুব ছোট আকারে শুরু করা এই ফুলদোল আজ এত বড় চেহারা নিয়েছে। ওদের হাতে যদি আবির কিংবা রঙের গুঁড়ো তুলে দেওয়া হয়, তাহলে তেমন একটা পার্থক্য এরা বুঝতে পারবে না। তবে যেহেতু অনেক ছোটবেলা থেকেই এরা ফুল স্পর্শ করে, গন্ধ পায় আর যাদের আংশিক দৃষ্টিশক্তি আছে তারা রং দেখতে পায় তাই এই ফুলের হোলি তাঁদের মনকে স্পর্শ করেছে।
এখানে এমন শিশুরা রয়েছে যাদের রঙের কারণে চোখের ক্ষতি হয়েছে। তাই তাদের এই ভীতির দোল উৎসব যাতে আনন্দের হয়ে ওঠে সেটাই শারদীয়ার প্রচেষ্টা।
ছাত্রী নন্দিনী শর্মা বলে, "হাতে ধরলেই বিভিন্ন ধরনের ফুলের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায় আর গন্ধ নিলে কী ফুল তাও বুঝতে পারি। ফুল দিয়েই রঙের হোলি খেলা হয় এখানে। রঙের চেয়ে ফুল দিয়ে হোলি খেলে অনেক বেশি আনন্দ পাই আমরা।" এক আবাসিক মৌমিতা ভক্তা বলে, "এই প্রথমবার ফুল দলে সামিল হলাম।" আর এক ছাত্র রাজু লায়া বলেন, "বাড়িতে এর আগে রং দিয়ে দোল খেলেছি। রং খেললে তা চোখে ঢুকে গেলে আমাদের আরও ক্ষতি হতে পারে ৷"
আরও পড়ুন: