কার্শিয়াং, 23 জানুয়ারি: পাহাড়ের সঙ্গে বসু পরিবারের সম্পর্কের ইতিহাস কারও অজানা নয়। বিশেষ করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মণিকোঠায় বরাবর শৈলরানি একটা আলাদা জায়গা নিয়েছিল ৷ তাঁর দুঃসাহসিক সব ইতিহাস এখনও বয়ে নিয়ে যাচ্ছে কার্শিয়াংয়ে গিদ্দা পাহাড়ের নেতাজি মিউজিয়াম।
1932 সাল থেকে 1939 সাল পর্যন্ত মোট 6 বার কার্শিয়াংয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন ৷ পাহাড়ে এলেই স্থানীয় কচিকাঁচাদের জন্য কলকাতা থেকে নিয়ে আসতেন বিস্কুট, চকলেট, ফল। মর্নিংওয়াকে পাহাড়ের রাস্তায় বেরোলেই দু'হাতে সেগুলো শিশুদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন।
নেতাজির দাদা স্বাধীনতা সংগ্রামী শরৎচন্দ্র বসু এই বাড়িটি 1922 সালে কিনেছিলেন। সেই সময় অসম পুলিশের ডেপুটি পুলিশ সুপার পিটার লেসলির কাছ থেকে বাড়িটি কেনেন। 1996 সাল পর্যন্ত বাড়িটি বসু পরিবারের অধীনে ছিল। 1997 সালে রাজ্য সরকার বাড়িটি সংস্কার করে। পরে আবার সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে বাড়িটি 2000 সালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মিউজিয়াম হিসেবে উদ্বোধন হয়।
1936 সালে গিদ্দা পাহাড়ের বাড়িতেই তাঁকে নজরবন্দি করে রেখেছিল ব্রিটিশ সরকার । এখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিঠি তিনি পাঠিয়েছিলেন। স্ত্রী এমিলিয়েকেও অনেক চিঠি এখান থেকে লিখেছিলেন নেতাজি। মোট 26 চিঠি লিখেছিলেন তিনি। 1938 সালে হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণ এই বাড়িতে বসেই লিখেছিলেন নেতাজি। এমনকী বন্দি থাকাকালীনও এখান থেকে গান্ধিজি ও জহরলাল নেহেরুকেও তিনি চিঠি লিখেছিলেন।
2005 সালে কলকাতা মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধানে এই বাড়িটি পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়ামে পরিণত হয়। তবে এই চিঠিটি (গান্ধিজি ও নেহেরুকে লেখা) ছাড়া নেতাজির লেখা আরও চিঠি সেখানে সযত্নে রাখা আছে। নেতাজি ইন্সটিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের তত্ত্বাবধানে সেই ঐতিহাসিক বাড়ি এখন নেতাজি মিউজিয়াম নামে বিখ্যাত।
কার্শিয়াংয়ের গিদ্দা পাহাড়ে নেতাজি স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিতে এসব মূল্যবান ঐতিহাসিক চিঠি ছাড়া নেতাজির অনেক ছবি আছে। নেতাজি এখানে এসে মর্নিংওয়াক করতে বের হতেন। পাগলাঝোরাতে পাহাড়ি ঝর্নার ধারে নেতাজির মর্নিংওয়াকের ছবিও রয়েছে এখানে। রয়েছে বসু পরিবারের সঙ্গে নেতাজির অনেক ছবি। এছাড়াও নেতাজির ব্যবহার করা খাট, ড্রেসিং টেবিল, লেখাপড়ার টেবিল, চেয়ার-সহ নানা আসবাব সাজিয়ে রাখা রয়েছে। নেতাজির দাদা শরৎচন্দ্র বসু 1934 সালে যে ক্যামেলিয়া গাছ সেখানে লাগিয়েছিলেন, আজও তা রয়ে গিয়েছে।
মিউজিয়ামের কেয়ারটেকার পদমবাহাদুর ছেত্রি বলেন, "বসু পরিবারের সদস্যরা প্রতি বছর গরমের ছুটি বা পুজোর ছুটিতে এই বাড়িতে এসে সময় কাটাতেন। আর সেই বসু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নেতাজিও এসেছেন বেশ কয়েকবার। 1922 থেকে 1939 পর্যন্ত তার তথ্য আছে সেখানে। নেতাজি এখানে গৃহবন্দি থাকার সময় চৌকিদারের মাধ্যমে গোপনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে অনেক নির্দেশ পাঠিয়েছেন। আবার এই বাড়িতে বসেই নেতাজি ভাইপো-ভাইঝিদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছেন। তাঁদের দোলনায় চড়িয়েছেন। বসু পরিবারের সদস্য শিশির বসু, কৃষ্ণা বসুদের কাছ থেকে 1973 সালে প্রতিদিন 2 টাকা হাজিরায় এই বাড়ি দেখভালের কাজ পাই আমি।"