ইটাহার, 23 সেপ্টেম্বর: প্রায় চারশো বছর ধরে একচালায় ডাকের সাজে পূজিত হন ভূপালপুর রাজবাড়ির দুর্গা । এখনও জমিদারি প্রথা অনুসারে দুর্গাপুজো করছেন রাজা ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরীর বংশধরেরা ৷ উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের দুর্গাপুরে ভূপালপুর জমিদার বাড়ি এলাকার মানুষদের কাছে একটা বাড়তি উন্মাদনা থাকে ৷
কথিত আছে, মুঘল সম্রাট শেরশাহের আমল থেকে এই বংশের দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়েছিল ৷ পরবর্তীতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী, ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরী রাজ পরিবারের বংশধরের হাত ধরে এখানে দেবী পূজিতা হন ৷ বংশপরম্পরায় প্রাচীন দুর্গাদালানে দেবী আরাধনায় মাতে রাজ পরিবার ৷ যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজো পদ্ধতিরও পরিবর্তন ঘটেছে ।
আগে জোড়া মোষ ও পাঁঠাবলির মাধ্যমে দেবীর বোধন হত মহালয়াতে । এখন মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হয় ৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলি প্রথাও । তবে পুজোর নিয়ম রয়ে গিয়েছে আগের মতোই । এখানে অসুরের গায়ের রং হয় ঘন সবুজ ৷ আর দেবী দুর্গার মাথার উপরে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর থাকেন ৷ তবে এখানে ঠাকুরদালানে দেবী মূর্তি গড়া হয় না ৷ প্রতিমা আনা হয় কুমোরটুলি থেকে ৷
এই বিষয়ে রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর অভিষেক রায় চৌধুরী বলেন, "আমাদের আদি বাড়ি ছিল ইটাহারের চূড়ামন এলাকায় । সেখানেই দেবী দুর্গার আরাধনা হত । মহানন্দা নদীর করাল গ্রাসে রাজবাড়ি ও রাজ্যপাট চলে যায় নদীগর্ভে । তারপর সেখান থেকে চলে এসে দুর্গাপুরে নির্মিত হয় রাজপ্রাসাদ ও মন্দির । মহালয়ার দিন থেকে রাজবাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে যাত্রাপালা, থিয়েটার ও সার্কাসের আসর বসত । পুজোর ক'টা দিন এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের ভোজনের ব্যবস্থা থাকত । আমোদ প্রমোদে মেতে উঠতেন সকলেই । তবে কালের পরিবর্তনে সেসব এখন ইতিহাস ।"
যদিও রাজবাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে এখনও এলাকার মানুষের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা থাকে । ভূপালপুর রাজবাড়ির নবমী পুজোর বিশেষত্ব হল, এদিন ভোগ ও ফলসমূহ পুজোর পর ঠাকুর দালানের উঁচু জায়গায় বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় । এরপর গ্রামের বাসিন্দা ও পরিবারের লোকেরা যে যেভাবে যতটা ফল পেড়ে নিতে পারে সেটাই একটা খেলার মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করা হয় । দশমীতে মেলা বসে ৷ সেই মেলা শেষ হওয়ার পর তবে প্রতিমা বিসর্জন হয় ৷
এই বিষয়ে গোবিন্দ সরকার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "বাপ-ঠাকুরদার কাছ থেকে শুনেছিলাম এই রাজার বাড়ি পুজো ধুমধাম করে হত ৷ অনেক দূর-দূরান্ত থেকে গরুর গাড়ি চেপে এখানে পুজো দেখতে আসতেন বহু মানুষ । আর এখন সেভাবে না হলেও এখানে পুজো দেখতে বহু মানুষ আসেন । দশমীতে খুব বড় করে এখানে মেলা বসে ৷"