ETV Bharat / state

ধ্বংসের মুখে মুর্শিদাবাদের সোনারুন্দি রাজবাড়ি, পর্যটন কেন্দ্র গড়ার দাবি ইতিহাসবিদদের - পর্যটন কেন্দ্র

Sonarundi Palace in Murshidabad: ঝটিকা সফরে ঘুরে আসতে পারেন মুর্শিদাবাদের সোনারুন্দি রাজবাড়িতে ৷ এখানে দেখতে পাবেন দ্বিতীয় বৃন্দাবন মন্দির । তবে লাল বেলে মাটির সোনারুন্দি রাজবাড়ি আজ ধ্বংসপ্রায় ৷ কেবলমাত্র স্মৃতি বহন করে চলেছে সেকালের ঐতিহ্যের । পর্যটন কেন্দ্র করে সংগ্রহের দাবি ইতিহাসবিদদের ৷

Sonarundi Palace
সোনারুন্দি রাজবাড়ি
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 10, 2024, 6:42 PM IST

ধ্বংসের মুখে মুর্শিদাবাদের সোনারুন্দি রাজবাড়ি

সালার, 10 ফেব্রুয়ারি: মুর্শিদাবাদ জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাসের বহুমূল্য সম্পদ । কোথাও রাজবাড়ি, আবার কোথাও জমিদারবাড়ি থেকে রয়েছে নবাবের শহর হাজারদুয়ারি । কিন্তু এরইমধ্যে অনেক জমিদার বাড়ি আজকে ধ্বংসের মুখে । তেমনই একটি হল মুর্শিদাবাদ জেলার সালারের সোনারুন্দি রাজবাড়ি। এখানে এলেই দেখতে পাবেন বঙ্গ দেশের দ্বিতীয় বৃন্দাবন ।

কথিত আছে, রাজকুমার গোবিন্দদেব বাহাদুর মূল রাজবাড়ির সংলগ্ন পশ্চিম অংশে কিশোরী বনয়ারিলালের মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাধাকৃষ্ণ ও অষ্টসখীর মূর্তি। বৃন্দাবনের অনুসরণে তিনি এই সখী-সহ যুগল মূর্তির নাম দেন কিশোরী বনয়ারিলালজি । তার চারদিকে দালান, মাঝে নাট মন্দির । লাল বেলে পাথর দিয়ে মন্দিরের সামনের দেওয়াল সাজিয়ে তুললেন। মূল প্রাসাদে একশোর বেশি ঘর ছিল। মন্দিরের পাশেই কিশোরী-সায়র পুকুর কেটে তার ঘাটে স্নানঘর ও পাশেই গোপেশ্বর শিব মন্দির নির্মাণ করেন। নজর-বাগানে সুদৃশ্য ফুলের ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল । রাজবাড়ির বাইরে বারোটি কুঞ্জ নির্মাণ করেছিলেন । মূলত তিনি এই বঙ্গদেশে দ্বিতীয় বৃন্দাবন নির্মাণ করছিলেন। তবে আজ সবকিছুই ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। তবুও দ্বিতীয় বৃন্দাবন দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক।

কথিত আছে, এই সোনারুন্দি রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল নিত্যানন্দ দালাল । 1750 খ্রিস্টাব্দে সোনারুন্দিতে নিত্যানন্দের জন্ম । তিনি আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় খুব পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন । অল্প বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান । সেখান থেকে তিনি দিল্লির বাদশাহের দরবারে চাকরি জোগাড় করেন । অসাধারণ মেধা ও ফারসি ভাষায় দক্ষতার জন্যে সেই সময়ের মুঘল বাদশা দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্টতা হয় । কালক্রমে বাদশাহ সাহ আলম নিত্যানন্দের ফারসি লেখাপড়ায় খুশী হয়ে তাঁকে নিজের কাছে রাখেন এবং রাজধানী দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে নিত্যানন্দকে নিজের মীরমুন্সী পদে নিযুক্ত করেন । সম্রাট তাঁকে দানেশবন্দ উপাধি দিয়েছিলেন । তারপর শাহআলম তাঁকে মহারাজা উপাধি দিয়ে সাতহাজারী মনসবদার পদে নিয়োগ করেন । তখন নিত্যানন্দের নাম হয় মহারাজা নিত্যানন্দ দানেশবন্দ আমীর উল-মুল্ক, আজমাত-উদ্দৌলা, সাফদার জং ।

জানা যায়, দিল্লির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে এবং মারাঠা আক্রমণে এক সময় বাদশা শাহ আলম দিল্লি ত্যাগ করতে বাধ্য হন । তিনি এসে আশ্রয় নেন বর্ধমান রাজের এলাকা কাটোয়াতে । সেই সময়ে নিত্যানন্দ শাহ আলমের সুপারিশে এই সোনারুন্দি এলাকার জমিদারী লাভ করেন । 1806 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাহ আলম কাটোয়াতে ছিলেন । সেই সময়ে এই সোনারুন্দি এলাকারও রাজা বা পত্তনিদার ছিল বর্ধমানের রাজারা । সম্ভবত শাহ আলম বর্ধমানের রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করেই নিত্যানন্দকে এই জমিদারি পাইয়ে দিয়েছিলেন । নিত্যানন্দ দেব বাহাদুর সোনারুন্দি গ্রামের পূর্ব প্রান্তে প্রায় চুয়ান্ন বিঘা জমির ওপর তার রাজবাড়ি ও মন্দির নির্মাণ করেন ।

তবে এই পর্যটন কেন্দ্রটি আজ ধ্বংস হতে চলেছে । রাজবাড়ির প্রথম বা মুল ফটক গেটের করুণ অবস্থা । চারিদিকে আবর্জনা স্তুপ ও মাথার উপর জংলা গাছের আবরণে ভগ্নাবস্থায় পড়ে আছে গেটটি । যদিও বর্তমানে রাজবাড়ি ভেঙে পড়েছে, কুঞ্জ গুলি ধ্বংস, মন্দিরের অবস্থাও ভালো না । নজর বাগান এখন অবহেলিত । চারটি অসাধারণ তোরণের দুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস । বাকি দুটিও প্রায় শেষ । সরকার যদি এই দিকে নজর দেয় তাহলে এটিও একটি অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলেই দাবি ইতিহাসবিদদের ।

আরও পড়ুন:

  1. ফরাসি পর্যটকের দল মুর্শিদাবাদে, বাড়ছে বিদেশিদের ভিড়
  2. পর্যটন কেন্দ্রগুলি ঢেলে সাজানোর জন্য বাংলায় বরাদ্দ 10 কোটি
  3. শীত পড়তেই এলাকায় আসছে ভিনদেশি পাখি, পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা

ধ্বংসের মুখে মুর্শিদাবাদের সোনারুন্দি রাজবাড়ি

সালার, 10 ফেব্রুয়ারি: মুর্শিদাবাদ জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাসের বহুমূল্য সম্পদ । কোথাও রাজবাড়ি, আবার কোথাও জমিদারবাড়ি থেকে রয়েছে নবাবের শহর হাজারদুয়ারি । কিন্তু এরইমধ্যে অনেক জমিদার বাড়ি আজকে ধ্বংসের মুখে । তেমনই একটি হল মুর্শিদাবাদ জেলার সালারের সোনারুন্দি রাজবাড়ি। এখানে এলেই দেখতে পাবেন বঙ্গ দেশের দ্বিতীয় বৃন্দাবন ।

কথিত আছে, রাজকুমার গোবিন্দদেব বাহাদুর মূল রাজবাড়ির সংলগ্ন পশ্চিম অংশে কিশোরী বনয়ারিলালের মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাধাকৃষ্ণ ও অষ্টসখীর মূর্তি। বৃন্দাবনের অনুসরণে তিনি এই সখী-সহ যুগল মূর্তির নাম দেন কিশোরী বনয়ারিলালজি । তার চারদিকে দালান, মাঝে নাট মন্দির । লাল বেলে পাথর দিয়ে মন্দিরের সামনের দেওয়াল সাজিয়ে তুললেন। মূল প্রাসাদে একশোর বেশি ঘর ছিল। মন্দিরের পাশেই কিশোরী-সায়র পুকুর কেটে তার ঘাটে স্নানঘর ও পাশেই গোপেশ্বর শিব মন্দির নির্মাণ করেন। নজর-বাগানে সুদৃশ্য ফুলের ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল । রাজবাড়ির বাইরে বারোটি কুঞ্জ নির্মাণ করেছিলেন । মূলত তিনি এই বঙ্গদেশে দ্বিতীয় বৃন্দাবন নির্মাণ করছিলেন। তবে আজ সবকিছুই ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। তবুও দ্বিতীয় বৃন্দাবন দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক।

কথিত আছে, এই সোনারুন্দি রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল নিত্যানন্দ দালাল । 1750 খ্রিস্টাব্দে সোনারুন্দিতে নিত্যানন্দের জন্ম । তিনি আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় খুব পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন । অল্প বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান । সেখান থেকে তিনি দিল্লির বাদশাহের দরবারে চাকরি জোগাড় করেন । অসাধারণ মেধা ও ফারসি ভাষায় দক্ষতার জন্যে সেই সময়ের মুঘল বাদশা দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্টতা হয় । কালক্রমে বাদশাহ সাহ আলম নিত্যানন্দের ফারসি লেখাপড়ায় খুশী হয়ে তাঁকে নিজের কাছে রাখেন এবং রাজধানী দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে নিত্যানন্দকে নিজের মীরমুন্সী পদে নিযুক্ত করেন । সম্রাট তাঁকে দানেশবন্দ উপাধি দিয়েছিলেন । তারপর শাহআলম তাঁকে মহারাজা উপাধি দিয়ে সাতহাজারী মনসবদার পদে নিয়োগ করেন । তখন নিত্যানন্দের নাম হয় মহারাজা নিত্যানন্দ দানেশবন্দ আমীর উল-মুল্ক, আজমাত-উদ্দৌলা, সাফদার জং ।

জানা যায়, দিল্লির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে এবং মারাঠা আক্রমণে এক সময় বাদশা শাহ আলম দিল্লি ত্যাগ করতে বাধ্য হন । তিনি এসে আশ্রয় নেন বর্ধমান রাজের এলাকা কাটোয়াতে । সেই সময়ে নিত্যানন্দ শাহ আলমের সুপারিশে এই সোনারুন্দি এলাকার জমিদারী লাভ করেন । 1806 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাহ আলম কাটোয়াতে ছিলেন । সেই সময়ে এই সোনারুন্দি এলাকারও রাজা বা পত্তনিদার ছিল বর্ধমানের রাজারা । সম্ভবত শাহ আলম বর্ধমানের রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করেই নিত্যানন্দকে এই জমিদারি পাইয়ে দিয়েছিলেন । নিত্যানন্দ দেব বাহাদুর সোনারুন্দি গ্রামের পূর্ব প্রান্তে প্রায় চুয়ান্ন বিঘা জমির ওপর তার রাজবাড়ি ও মন্দির নির্মাণ করেন ।

তবে এই পর্যটন কেন্দ্রটি আজ ধ্বংস হতে চলেছে । রাজবাড়ির প্রথম বা মুল ফটক গেটের করুণ অবস্থা । চারিদিকে আবর্জনা স্তুপ ও মাথার উপর জংলা গাছের আবরণে ভগ্নাবস্থায় পড়ে আছে গেটটি । যদিও বর্তমানে রাজবাড়ি ভেঙে পড়েছে, কুঞ্জ গুলি ধ্বংস, মন্দিরের অবস্থাও ভালো না । নজর বাগান এখন অবহেলিত । চারটি অসাধারণ তোরণের দুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস । বাকি দুটিও প্রায় শেষ । সরকার যদি এই দিকে নজর দেয় তাহলে এটিও একটি অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলেই দাবি ইতিহাসবিদদের ।

আরও পড়ুন:

  1. ফরাসি পর্যটকের দল মুর্শিদাবাদে, বাড়ছে বিদেশিদের ভিড়
  2. পর্যটন কেন্দ্রগুলি ঢেলে সাজানোর জন্য বাংলায় বরাদ্দ 10 কোটি
  3. শীত পড়তেই এলাকায় আসছে ভিনদেশি পাখি, পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.