আসানসোল, 29 অক্টোবর: হাইওয়েতে নাকি ভূতের গুজব প্রায়ই শোনা যায় ৷ অমুক রাস্তায় দুর্ঘটনার পর থেকেই নাকি গভীর রাতে ভূত দেখা যায় । তেমনিভাবেই আসানসোলের কালিপাহাড়ির ব্রিজে গভীর রাতে লুকিং গ্লাসে নাকি ভূতের প্রতিবিম্ব দেখা যেত । কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই গুজব আর শোনা যায় না । সেই ভূতেদের নাকি ধরে তাঁর প্রেতকুয়োয় বন্দি করে রেখেছেন প্রদীপ বাবা ।
শুধু তাই নয়, 19 নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় যাঁদেরই মৃত্যু হয় তাঁদের আত্মা তিনি নিয়ে এসে প্রেতকুয়োয় বন্দি করে রাখেন এবং কালীপুজোর রাতে মহা ধুমধাম সহকারে তাঁর বিশ্বগয়া কালীবুড়ি মন্দিরে সেই প্রেত'দের তিনি মুক্তি দেন । বছর কুড়ি আগে 19 নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে আসানসোলের কালীপাহাড়িতে গড়ে উঠেছিল প্রদীপ বাবার বিশ্বগয়া কালীবুড়ি মন্দির । সেই মন্দিরে বিরাট আকারে শ্মশানকালী মূর্তি রয়েছে, যা দেখলেই ভয় লাগে । সারা বছর ধরে এখানে পুজো হয় । কালীপুজোয় হয় বিশেষ পুজো ও হোমের আয়োজন । এই মন্দিরে রয়েছে একটি প্রেতকুয়ো ।
মন্দিরের সেবায়েত তথা প্রতিষ্ঠাতা প্রদীপ বাবার দাবি, এই প্রেতকুয়োর মধ্যে অশরীরী আত্মাদের বন্দি করে রেখেছেন তিনি ৷ জাতীয় সড়কের উপর দুর্ঘটনায় যাঁদের মৃত্যু হয়, সেই সমস্ত আত্মা থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন জায়গার আত্মা যারা শান্তি পায়নি, যে সমস্ত দেহের অকালে প্রয়াণ হয়েছে, এমনকি বিদেশের আত্মাও তিনি নাকি নিয়ে এসে এই প্রেতকুয়োর মধ্যে বন্দি রেখেছেন ।
প্রদীপ বাবার দাবি শুনলে চমকে যেতে হয়, কয়েক লক্ষ আত্মাকে তিনি নাকি এই প্রেতকুয়োর মধ্যে সারা বছর ধরেই বন্দি করে রাখেন । তারপর কালীপুজোর রাতে বিশেষ পুজো ও হোমের মাধ্যমে তিনি এই প্রেত'দের মুক্তি দেন । যদিও সেই পুজো পদ্ধতি দেখার অধিকার কারওরই নেই । প্রদীপ বাবা দাবি করেছেন, অপঘাতে মৃত্যু হওয়া আত্মারা, যাদেরকে ভূত বলা হয়, তারা কখনওই কারও অনিষ্ট করে না । ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা থাকলে তাদের নাকি দেখাও যায় । এমনটাই দাবি তাঁর ৷
ইটিভি ভারতকে প্রদীপ বাবা বলেন, "মা তাদের মুক্তি দেন । আমি শুধুমাত্র কর্মী । মায়ের আদেশ মতো আমি কাজ করে যাই ।" প্রদীপ বাবার এই আত্মা মুক্তি দেওয়ার গল্পে বহু মানুষই বিশ্বাস করে তার দরবারে আসেন । সেখানেই দেখা গেল রানিগঞ্জের জেকে নগর থেকে আগত হরিদাস শর্মাকে । তাঁর কথায়, "কয়েকদিন আগে আমাদের বাড়ির এক প্রিয়জন মারা গিয়েছে । কিন্তু তারপর থেকে আমাদের বাড়িতে সবাই ভয়ে রয়েছে । তিনি এসেই মাঝে মধ্যে দেখা দিচ্ছেন । তার আত্মা মুক্তি পায়নি । আমরা সে কারণেই প্রদীপ বাবার কাছে অনুরোধ নিয়ে এসেছি ৷ সেই আত্মাকে তিনি নিয়ে এসে যেন প্রেতকুয়োর মধ্যে রাখেন এবং তারপর যথা সময়ে তাকে মুক্তি দেন ।"
প্রেতের মুক্তি, রোগ সারানো থেকে শুরু করে গ্রহের মুক্তি, আরও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রদীপ বাবা বসে রয়েছেন । তাঁর পসারও বেশ ভালো । দূরদূরান্তের ভক্তকূলের ঢল নামে প্রতিদিনই ।
যদিও বিজ্ঞান কর্মীদের কথায় এসবই বুজরুকি । পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য কিংশুক মুখোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে ফোনে বলেন, "উনি যাই করছেন সেটা পুরোটাই বুজরুকি । কারণ ভূত বা প্রেতের কোনও অস্তিত্ব নেই । তবে মানুষের বিশ্বাস বোধে আমরা সরাসরি আঘাত দিতে চাই না । যদি ওঁনার কোনও কার্যকলাপ মানুষের ক্ষতি করে, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ সঠিক ব্যবস্থা নেবে এবং আমরা পুলিশকেও বিষয়টির উপরে নজর রাখতে অনুরোধ জানাব ।"