কলকাতা, 4 ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ইস্যুতে বিদেশ মন্ত্রকের উপরেই ভরসা রাখছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার রাজভবনে বই প্রকাশ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "আশাকরি সংশ্লিষ্ট দফতর সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।" বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধার করতে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাতে কেন্দ্রকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে রাজ্যপাল বলেন, "বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই দেখবেন।"
অন্যদিকে, বাংলাদেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির নেতারা হিন্দু সেন্টিমেন্টের জিগির তুলে বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করল কংগ্রেস ৷ পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার দাবিও জানিয়েছে কংগ্রেস। বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ ইউনুসের কুশপুতুলও দাহ করে তারা।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ বলেন, "প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ আন্তর্জাতিক মহলে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। যে ঘটনাগুলি ঘটছে সেগুলিকে আন্তর্জাতিক মহল মেনে নিতে পারছে না।" এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে শারীরিকভাবে প্রহৃত ভারতীয় যুবক সায়ন ঘোষের বেলঘড়িয়ার বাড়িতে যায়।
সায়ন ঘোষ এবং তাঁর বাবা সুকান্ত ঘোষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তারা। পরে শুভঙ্কর সরকার বলেন, "সায়নের সঙ্গে কথা বলার পর আমি জানতে পারি যে, বাংলাদেশে থাকাকালীন সায়নকে একমাত্র আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং সেবা করেছিলেন এক মুসলিম বন্ধু ৷ বাংলাদেশে যাঁদের বাড়িতে সায়ন গিয়ে থেকেছিলেন। সায়নের সেই মুসলিম বন্ধুও সায়নকে আশ্রয় দেবার অপরাধে সেখানে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। সায়ন এবং তাঁর বাংলাদেশের ওই বন্ধুর এই অনাবিল সম্পর্ক আমাদের আবার আজ কাজী নজরুলের লেখা কবিতার সেই কথাগুলি স্মরণ করিয়ে দেয় ৷"
সায়ন বাংলাদেশে আক্রান্ত হবার পর সেখানকার পুলিশ-প্রশাসন এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পাননি বলে দাবি। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে সীমান্ত পার হবার পরে কোলকাতায় এসে সায়ন ঘোষ বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনে অভিযোগ জানাতে গেলেও তাঁর অভিযোগ সরকারিভাবে সেখানে গ্রহণ করা হয়নি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, "আমাদের স্পষ্ট দাবি, ভারত সরকারের প্রদত্ত বৈধ পাসপোর্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া বৈধ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে গিয়ে সেখানে আক্রান্ত ভারতীয় যুবক সায়ন ঘোষের ঘটনাটি নিয়ে অবিলম্বে ভারত সরকারের বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক দৌত্য চালাতে হবে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই অবিলম্বে সায়ন ঘোষের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার ভারত সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। সমস্যার প্রকৃত সমাধানের পথ না খুঁজে এখানে বিজেপির নেতারা সংকীর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে গিয়ে এই পশ্চিমবঙ্গের বুকেও মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করছে। যে অপচেষ্টা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আমরা সর্বতোভাবে রুখবই।"