ETV Bharat / state

ধমক খেয়ে টুল থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, বুদ্ধদেবের স্মৃতিচারণায় গৌর ভদ্র - Buddhadeb Bhattacharjee Passes Away

Buddhadeb Bhattacharjee Demise: দীর্ঘ 11 বছর রাজ্যের ভার কাঁধে বওয়া বুদ্ধদেবের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে রাজ্য-রাজনীতিতে ৷ স্মৃতিচারণায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ভাইপো গৌড় ভদ্র...

Buddhadeb Bhattacharjee
বুদ্ধদেবের স্মৃতিচারণায় গৌর ভদ্র (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 9, 2024, 6:23 AM IST

কলকাতা, 9 অগস্ট: 11 ডি, রামধন মিত্র লেন ৷ উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর এলাকার একটি সরু গলি । এখানে তিনতলা বাড়িতেই সপরিবারে থাকতেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ তিনতলায় ছিল তাঁর ঘর ৷ পাশের বাড়িতেই থাকতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ৷ তাঁর ভাইপো গৌড় ভদ্রের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ।

এদিন টিভির পর্দায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু সংবাদে রীতিমতো শোকে ভেঙে পড়েন তিনি ৷ ‘‘আমার থেকে ও ছোট, আমি বেঁচে আছি ৷ ওকে চলে যেতে দেখছি ৷ এই দিন দেখব বলে প্রস্তুত ছিলাম না ৷ কাঁপা গলায় জানালেন গৌর ভদ্র ৷ তাঁর কথায় উঠে এল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাটানো সময়কালের নানা ঘটনা ৷

গৌড় ভদ্র বলেন, "পাড়ার মধ্যে ভালো ছেলে ছিল বুদ্ধ । ওকে বাচ্চু বলেই সবাই ডাকত । ওদের একটা নাটকের গ্রুপ ছিল । বেশ কয়েকটা নাটক করেছে । ওদের গ্রুপের হয়ে দু'তিনটে নাটক পরিচালনা করি। বুদ্ধ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে ৷ রবীন্দ্রনাথের লেখা ঠাকুরদা, মাস্টারমশাই দু'টো নাটকের নাট্যরূপ দেয় বাচ্চু। পাড়ার পুজো উপলক্ষ্যে 7 দিন অনুষ্ঠান হত ৷ সেখানে আমাদের এখানে দু'তিনটে নাটকের গ্রুপ একেক দিন নাটক করত। মাস্টারমশাই নাটকে মাস্টারমশাইয়ের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিদেশি নাটক ভাবানুবাদও করে। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকত তিনি।"

গৌরের কথায়, রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরেও এলাকার তাঁর পুরনো পাড়ার প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান দিতেন। এলেই ডেকে পাঠাতেন । ওর একটা গুণ ছিল, কোনওভাবে কারও সঙ্গে পরিচয় হলে ভুলতেন না তিনি। একবার একজনের সঙ্গে নাটকের ব্যাপারে পরিচয় হয়েছিল। পরে নন্দনের টিকিট না-পেয়ে অপেক্ষাগৃহের গেটেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ সেই সময় মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেখানে গাড়ি নিয়ে যান। গাড়িতে যেতে গিয়েই তাঁর নজরে আসে, ওই ভদ্রলোককে। এরপর গাড়ি থেকে নেমে ডেকে পাঠান । টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন।

তিনি বলেন, "আমাকে দাদা বলে শ্রদ্ধা করত। আমার আগে চলে গেল। আমায় দেখে যেতে হচ্ছে ও নেই, এটা বড় কষ্টকর। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিল, নীতি ও নিষ্ঠা প্রতি দৃঢ়। আপস করতেন না। একবার একটি নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে ধমক দিয়েছিলাম একজনকে। আমার পাশেই বসে ছিল বাচ্চু। আমার সেই ধমকের চোটে ওর চুল থেকে পড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। কোনও মতে আমি ওকে ধরে সামাল দিই । ও ভয় পেয়ে আমাকে বলেছিল, দাদা এমন ধমক খেলে তো আর নাটক করতে পারব না ।"

তিনি আরও বলেন, "ও যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে স্লোগান তুলেছিল, 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ', তখন ওর এই স্লোগানের আজও বাস্তবতা আছে চরমভাবে ৷ সেদিন যদি টাটার কারখানা হত, সেই সময় যদি শিল্প আসত রাজ্যে তাহলে আজ পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ত না। রাজ্যের ছেলেরা রাজ্যে থেকেই কাজ করত । বৃদ্ধ বাবা-মাকে একা থাকতে হত না ৷ শেষ বয়সে ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই থাকতে পারতেন। নতুন প্রজন্মের অসহায় অবস্থা আজ লক্ষ্য করি, বুদ্ধর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কতটা প্রয়োজন ছিল।"

কলকাতা, 9 অগস্ট: 11 ডি, রামধন মিত্র লেন ৷ উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর এলাকার একটি সরু গলি । এখানে তিনতলা বাড়িতেই সপরিবারে থাকতেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ তিনতলায় ছিল তাঁর ঘর ৷ পাশের বাড়িতেই থাকতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ৷ তাঁর ভাইপো গৌড় ভদ্রের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ।

এদিন টিভির পর্দায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু সংবাদে রীতিমতো শোকে ভেঙে পড়েন তিনি ৷ ‘‘আমার থেকে ও ছোট, আমি বেঁচে আছি ৷ ওকে চলে যেতে দেখছি ৷ এই দিন দেখব বলে প্রস্তুত ছিলাম না ৷ কাঁপা গলায় জানালেন গৌর ভদ্র ৷ তাঁর কথায় উঠে এল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাটানো সময়কালের নানা ঘটনা ৷

গৌড় ভদ্র বলেন, "পাড়ার মধ্যে ভালো ছেলে ছিল বুদ্ধ । ওকে বাচ্চু বলেই সবাই ডাকত । ওদের একটা নাটকের গ্রুপ ছিল । বেশ কয়েকটা নাটক করেছে । ওদের গ্রুপের হয়ে দু'তিনটে নাটক পরিচালনা করি। বুদ্ধ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে ৷ রবীন্দ্রনাথের লেখা ঠাকুরদা, মাস্টারমশাই দু'টো নাটকের নাট্যরূপ দেয় বাচ্চু। পাড়ার পুজো উপলক্ষ্যে 7 দিন অনুষ্ঠান হত ৷ সেখানে আমাদের এখানে দু'তিনটে নাটকের গ্রুপ একেক দিন নাটক করত। মাস্টারমশাই নাটকে মাস্টারমশাইয়ের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিদেশি নাটক ভাবানুবাদও করে। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকত তিনি।"

গৌরের কথায়, রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরেও এলাকার তাঁর পুরনো পাড়ার প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান দিতেন। এলেই ডেকে পাঠাতেন । ওর একটা গুণ ছিল, কোনওভাবে কারও সঙ্গে পরিচয় হলে ভুলতেন না তিনি। একবার একজনের সঙ্গে নাটকের ব্যাপারে পরিচয় হয়েছিল। পরে নন্দনের টিকিট না-পেয়ে অপেক্ষাগৃহের গেটেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ সেই সময় মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেখানে গাড়ি নিয়ে যান। গাড়িতে যেতে গিয়েই তাঁর নজরে আসে, ওই ভদ্রলোককে। এরপর গাড়ি থেকে নেমে ডেকে পাঠান । টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন।

তিনি বলেন, "আমাকে দাদা বলে শ্রদ্ধা করত। আমার আগে চলে গেল। আমায় দেখে যেতে হচ্ছে ও নেই, এটা বড় কষ্টকর। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিল, নীতি ও নিষ্ঠা প্রতি দৃঢ়। আপস করতেন না। একবার একটি নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে ধমক দিয়েছিলাম একজনকে। আমার পাশেই বসে ছিল বাচ্চু। আমার সেই ধমকের চোটে ওর চুল থেকে পড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। কোনও মতে আমি ওকে ধরে সামাল দিই । ও ভয় পেয়ে আমাকে বলেছিল, দাদা এমন ধমক খেলে তো আর নাটক করতে পারব না ।"

তিনি আরও বলেন, "ও যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে স্লোগান তুলেছিল, 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ', তখন ওর এই স্লোগানের আজও বাস্তবতা আছে চরমভাবে ৷ সেদিন যদি টাটার কারখানা হত, সেই সময় যদি শিল্প আসত রাজ্যে তাহলে আজ পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ত না। রাজ্যের ছেলেরা রাজ্যে থেকেই কাজ করত । বৃদ্ধ বাবা-মাকে একা থাকতে হত না ৷ শেষ বয়সে ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই থাকতে পারতেন। নতুন প্রজন্মের অসহায় অবস্থা আজ লক্ষ্য করি, বুদ্ধর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কতটা প্রয়োজন ছিল।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.