কলকাতা, 2 অক্টোবর: আজ মহালয়া ৷ ভোর থেকে বৃষ্টি ৷ বেলা বাড়তেই মেঘলা আকাশ ৷ দেখা মেলেনি পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, রৌদ ঝলমলে শরদের আকাশের ৷ তবে এরই মাঝে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা, শহরের সব পুজো মণ্ডপে চক্ষুদান হল দেবী দুর্গার ৷
কারও বয়স 5, তো কেউ 10 । পুজো উপলক্ষে প্রত্যেকেই নতুন রঙিন জমা কাপড় পরেছে । তবে তাদের কেউই চোখে দেখতে পায় না । অন্ধকারের মধ্যেও তারা খুঁজে নেয় পুজোর আনন্দ ৷ মহালয়ার দিনে সেই সব বিশেষভাবে সক্ষম শিশু থেকে কিশোরদের হাতেই উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনে হল দেবী দুর্গার চক্ষুদান । ছিলেন রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা । কাশী বোস লেনের এবারের থিম 'রত্নগর্ভা' ৷
কাশী বোস লেনের পুজো মণ্ডপে ব্রেইলের ব্যবহার করা হয়েছে ৷ দৃষ্টি শক্তি না থাকলেও ব্রেইল পদ্ধতিতে এ দিন গোটা মণ্ডপ ঘুরে দেখেন সমস্ত শিশু-কিশোররা । জনা 50 এমন ছেলে মেয়েরা কেউ স্তোত্র পাঠ করল, কেউ প্রতিমার চোখে তুলির টান দিল । মহালয়ার দিন সেই অভিনব মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন ক্লাব কর্তা থেকে আমদর্শক ও পাড়া প্রতিবেশীরা । মন্ত্রী শশী পাঁজার পাশাপাশি অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেনও চক্ষুদানের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ৷ তাঁদের বক্তব্যে উঠে এল উৎসবের আনন্দের সঙ্গেই আরজি করের ঘটনার শোক ও বিচারের দাবি ।
এ দিন শশী পাঁজা বলেন, "বিধবা বিবাহ প্রচলন বা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার মতো ঘটনা এবার কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো কমিটি তাদের থিমে তুলে ধরেছে । শুধু তাই নয়, ব্রেইল পদ্ধতির ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ যার মাধ্যমে দৃষ্টিহীন মানুষ উপভোগ করতে পারবেন এই পুজো মণ্ডপ । মনের চোখে দেখবেন প্যান্ডেল ।"
বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারে দেবী দুর্গার চক্ষুদান
মহালয়ার ভোরে দেবীর চক্ষুদান হয়ে গেল বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারেও ৷ ঠিক ভোর সাড়ে 4টের সময় সম্পন্ন হল চক্ষুদান পর্ব । 52 তম বর্ষে বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারের থিম '9-এ নকশাকল্প'। শিল্পী সন্দীপ মুখোপাধ্যায় ও তাপসী মুখোপাধ্যায় । নানা রঙের নানা ঢঙের আলপনায় সেজে উঠেছে এবারের থিম । যত দিন যাচ্ছে আলপনার নকশাতেও আসছে বিপুল পরিবর্তন ।
সেই পরিবর্তনকেই নিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপ সজ্জায় । মুক্ত মণ্ডপ, যেখানে বহু মানুষ একসঙ্গে বসে গল্প আড্ডায় মেতে উঠতে পারেন, এমন ব্যবস্থা প্রতি বছরেই থাকে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাড়ার এই পুজোয় । তাঁর সক্রিয় ভূমিকা থাকে এই পুজোয় । অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে ঢাক বাজানো-সবেতেই সক্রিয় ভূমিকা নেন তিনি । পুজোর উদ্বোধনও তিনিই করেন । দশমীতে দেবীর বিসর্জনের বেলাতেও মণ্ডপ প্রাঙ্গণে হাজির থাকেন মহারাজ ।
তবে উদ্বোধনে এবার বেশি চাকচিক্য করতে নারাজ পুজো উদ্যোক্তারা । আরজি কর কাণ্ডের কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন পুজোর সম্পাদক জুঁই গঙ্গোপাধ্যায় । পুজোর ভলান্টিয়ার কার্ডেও এবার বার্তা 'নারী সম্মানেই হোক মাতৃ আরাধনা'। সব কিছু ছাপিয়ে নারী সম্মানেরই দাবি জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা ।
মহালয়ার সকালে অভিনব উদ্যোগ দুর্গাপুরে
মহালয়ায় এক সময় রেডিয়োর আওয়াজে ঘুম ভাঙতো শিশুদের । বাপ-ঠাকুরদার সঙ্গে বসে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় শুনতে দেখা যেত মহিষাসুরমর্দিনী । অত্যাধুনিক টেকনোলজির যুগে আজ আর সেই চিত্র দেখা যায় না । ইন্টারনেট আর টেলিভিশনেই বন্দি শৈশব থেকে যুব সমাজ । মোবাইল আর ইন্টারনেট থেকে বের করে এনে মহিলা, পুরুষ, যুবক-যুবতী আর শিশুদের নিয়ে মহালয়ার সকালে অভিনব উদ্যোগ নিল দুর্গাপুরের ভারতী সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি । দেবী দুর্গার গান, নাচ আর এলাকা পরিক্রমা করা হয় এ দিন। চলে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠান । তারপরেই আলপনা দিতে দেখা যায় এলাকার রাস্তায় ।
মহালয়ার অনুষ্ঠানকে ঘিরে চরম উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায় এলাকাবাসীর মধ্যে । এই পুজো কমিটির 54 বছরের থিম জল সংরক্ষণ । জল অপচয় রোধ কীভাবে করতে হবে সেই চিত্রই ফুটে উঠছে এই মণ্ডপে । 460 কেজি ওজনের গামার কাঠের গুড়ির মধ্যে মা দুর্গার মূর্তি খোদাই করা থাকবে । জেলার মধ্যে অন্যতম জায়গা করে নেবে বলেও আশাবাদী পুজো উদ্যোক্তারা ।