হরিণঘাটা, 11 ফেব্রুয়ারি: বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচতলা বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ ছাত্রীর ৷ তাঁকে শারীরিক হেনস্তার অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে নদিয়া জেলার হরিণঘাটায় মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুলেন্স না থাকার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন অন্যান্য পড়ুয়ারা ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রীর আনুমানিক বয়স 24 বছর ৷ তিনি মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন ৷ ছাত্রী দুর্গাপুরের বাসিন্দা ।
অভিযোগ, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালীন ওই ছাত্রীকে শারীরিক হেনস্তা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক । ফলে আত্মসম্মানবোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের উপর থেকে আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটার পর ঝাঁপ দেন ওই ছাত্রী । ঘটনার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য পড়ুয়ারা সেখানে ছুটে আসেন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতালে । সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ।
সঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্স না মেলায় ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন সহপাঠীরা ৷ এরই প্রতিবাদে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা ৷ তবে পরবর্তীকাল খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিণঘাটা থানার পুলিশ । পুলিশের আশ্বাসে অবশেষে অবরোধ তুলে নেন ছাত্রছাত্রীরা । অন্যদিকে কী কারণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
এ বিষয়ে রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কুমার সানিরাজ বলেন, "পরিবারের তরফে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি । ওই ছাত্রীর দেহ আজ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে । কী কারণে এই ঘটনা ঘটল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত শুরু হয়েছে ।" তবে এ বিষয়ে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বা উপাচার্যের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র সুমন সরকার বলেন, "এর আগেও আমরা কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখতে অনুরোধ জানিয়েছি । তখন তাদের তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে । কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ আর অ্যাম্বুলেন্স না থাকার কারণে ওই ছাত্রীকে অনেক পরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় । যার কারণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু ঘটেছে ।"
![Maulana Abul Kalam Azad University](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/11-02-2025/wb-nad-01-haringhata-college-suicite-wb10029_11022025084434_1102f_1739243674_717.jpg)
তাঁর কথায়, "যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি, ওই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শারীরিক হেনস্তা করে ৷ সেই অপমানে সে পাঁচতলা বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেয় । তবে এই বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট কোনও সদুত্তর দিতে চাইছে না । সেই কারণে আমরা 12 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছি ।"
মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝাঁপ দিয়ে দুর্গাপুরের মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না তাঁর প্রতিবেশী থেকে স্কুলের শিক্ষকরা । ওই ছাত্রী ছোট থেকে দুর্গাপুরের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করেছেন ৷ তাঁর স্কুলের অধ্যক্ষ অপরাজিতা ভট্টাচার্য বলেন, "ওই ছাত্রী খুব মেধাবী ছিল । আমরা খুবই আশাবাদী ছিলাম যে, ও খুব বড় জায়গায় পৌঁছবে । কিন্তু মর্মান্তিক এই খবর পাওয়ার পর থেকে খুবই শোকাহত আমরা । এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে বড় কোনও কারণ থাকতে পারে । যে মেয়ে এত মেধাবী, যে আগামী ভবিষ্যৎ ঠিক করেই রেখেছে, সে এত বড় সিদ্ধান্ত কী করে নিতে পারে । এর পিছনে কোনও না কোনও কারণ নিশ্চয়ই আছে । কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন, যাতে সঠিক তদন্ত হয় সেই দিকে নজরদারি করার জন্য ।"
ওই ছাত্রীর প্রতিবেশী সনাতন মণ্ডল বলেন, "ছাত্রীর বাবা ডিভিসিতে তাপবিদ্যুৎ কারখানার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে চাকরি করতেন । তিনি সিটু নেতা ছিলেন । তার ছেলে ও মেয়ে দুজনেই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল । মেয়েটির দাদা এই মুহূর্তে জার্মানিতে থাকে । মেয়েটি মেধাবী ছাত্রী ছিল বলে আমরা জানি ।"
ডিভিসি'র শ্রমিক সংগঠন সিটুর নেতা বিকাশ দাস বলেন, "অত্যন্ত ভালো ছাত্র-ছাত্রী হিসাবে মেয়েটি এবং তার দাদা পরিচিত ছিল । আমরা ছাত্রীর মৃত্যুর খবরটা শুনে মর্মাহত হয়ে পড়ি । কেন এমনটা হল বুঝে উঠতে পারছি না । ওরা অনেক দিন এখান থেকে চলে গিয়েছে । পরিবার-সহ এখন কলকাতায় থাকে । মেয়েটির দাদা থাকে বিদেশে । আমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি ।"
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই হরিণঘাটার এই মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিয়ের ঘটনা ঘটেছিল ৷ শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে মালাবদল প্রথম বর্ষের ছাত্রের সঙ্গে মালাবদল করতে দেখা যায় অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির বিভাগীয় প্রধান শিক্ষিকাকে ৷ এমনকি তিনি তাঁর হাত থেকে সিঁদুরও পরেন ৷ সেই ঘটনায় বিতর্কের ঝড় ওঠে রাজ্যজুড়ে ৷ এরপর সোমবার ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের খবরের শিরোনামে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় ৷