মালদা, 30 অক্টোবর: রাত পোহালে আলোর উৎসব ৷ কিন্তু তাঁদের সামনে শুধুই অন্ধকার ৷ তাঁদের আর উৎসব নেই ৷ রয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই ৷ সেই লড়াই লড়ে যাচ্ছেন রতুয়ার গঙ্গা ভাঙন-আক্রান্তরা ৷ উৎসবের মরশুমে জীবন সংগ্রামের এই ছবি রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কান্তটোলা গ্রামে ৷
বর্ষার মরশুম পেরিয়েছে ৷ গঙ্গাও এখন খানিকটা শান্ত ৷ দিনসাতেক আগে পর্যন্ত পাড় কেটেছে সে ৷ এখন কিছুটা ক্লান্ত হয়ে যেন ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ কিন্তু নিজের সর্বগ্রাসী রূপের ছবি রেখে গিয়েছে কান্তটোলার সর্বত্র ৷ যেন জানান দিচ্ছে, ক্লান্তি মিটিয়ে সে ফের নতুন উদ্যমে আছড়ে পড়বে পাড়ে ৷ আগামী মরশুমে ৷ সেই আতঙ্কেই দিন কাটছে সীমা সরাফের ৷ এখনও তাঁর বাড়ি অক্ষত রয়েছে ৷ গ্রামের হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ির মতো ৷
সীমা সরাফ বলেন, "পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ এবারের মতো বেঁচে গিয়েছি ৷ তবে আগামী বছর আমাদের বাড়িও নদীতে পড়ে যেতে পারে ৷ তখন কোথায় থাকব জানি না ৷ স্বামী নেই ৷ ছোট বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব? তাই আর্জি জানাচ্ছি, গঙ্গাটাকে শুধু বেঁধে দেওয়া হোক ৷ আর কিছু চাই না ৷ এবার যাদের ঘর ভেঙেছে, তাদের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ কোনও ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থাও নেই ৷ এরা কোথায় যাবে? যে যেখানে পারছে থাকছে ৷ লোকের জায়গায় আস্তানা গেড়েছে ৷ সেখান থেকেও ওদের তুলে দেওয়ার হুমকি রয়েছে ৷"
অন্যের জায়গায় অস্থায়ী আস্তানার সামনে বসে ছিলেন তপন মণ্ডল ৷ তিনি বললেন, "কান্তটোলায় বাড়ি ছিল ৷ জমিও ছিল ৷ সব এখন গঙ্গায় ৷ আটদিন হল পরের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি ৷ আমাদের জন্য সরকারি কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ সরকারের ঘর থেকে একটা ত্রিপল ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি ৷"
একই বক্তব্য রুমা মণ্ডলের ৷ তাঁর কথায়, "এখানে আসা ন'দিন হল ৷ অন্যের জায়গা ৷ প্রথমে আমাদের অস্থায়ী ঘর তারা খুলে ফেলে দিয়েছিল ৷ আমাদের ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থাও হয়নি ৷ গ্রামের স্কুলে কাউকে ঢুকতে দেননি প্রধান শিক্ষক ৷ এখন মুলিরামটোলায় আছি ৷ সরকারের তরফে একটা ত্রিপল ছাড়া কিছুই পাইনি ৷ বাকিরা যে যেখানে পেরেছে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছে ৷"
মালদার ভাঙন দুর্গতদের ভবিষ্যৎ কী, কেউ জানে না ৷ দুর্গতদের অভিযোগ, প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক দলগুলির কেউ এখন আর তাঁদের খোঁজ নেয় না ৷ বারবার আবেদন, আন্দোলনের পরেও জোটেনি পুনর্বাসনের জায়গা ৷ অথচ সামান্য জায়গা পাওয়া গেলে সেখানে নতুন ঘর বেঁধে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখা যেত ৷ সুরক্ষিত করা যেত তাদের ভবিষ্যৎ ৷
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো অবশ্য বলেন, "দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য জমি খোঁজার কাজ চলছে ৷ জমি মিললেই তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যাবে ৷" তবে সেটা কতদিনে হবে, বলতে পারেননি ব্লকের কর্তাও ৷