সন্দেশখালি, 9 ফেব্রুয়ারি: দিনভর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মধ্যেই এবার বন্দুক হাতে এলাকায় দাপাদাপি করতে দেখা গেল এক দুষ্কৃতীকে। সেই ছবি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালিতে। ছবিতে স্পষ্টত দেখা গিয়েছে, এক দুষ্কৃতী দোনালা বন্দুক হাতে নিয়ে হেঁটে চলেছে গ্রামের রাস্তা ধরে। আর এখানেই স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
গত তিন দিন ধরে নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে সন্দেশখালিতে। গ্রামবাসীদের দাবি, দুই তৃণমূল নেতা শিবু ও শাহাজাহানকে গ্রেফতার করতে হবে ৷ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে ৷ এভাবে প্রাণের ভয় নিয়ে সন্তান, পরিবারকে নিয়ে থাকা যায় না ৷ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, "সন্দেশখালিতে সংবাদমাধ্যম আবার আক্রান্ত হয়েছে ৷ জেলেখালিতে শিবু হাজরার বাহিনী আক্রমণ করেছে ৷ মানুষের গণরোষের সামনে গুলি-বন্দুক নিয়ে এসেছে ৷ দুষ্কৃতি রাজত্ব বলতে যা বোঝায়, তৃণমূলের বাহিনী সেটাই করে চলেছে ৷ " বারসত রেঞ্জের ডিআইজি সুমিত কুমার জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের রেওয়াত করা হবে না ৷ যাঁরাই হাতে আইন তুলে নেবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ যদিও দুষ্কৃতীর বন্দুক নিয়ে তাণ্ডব প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি তিনি ৷
উল্লেখ্য, শাহজাহান ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিব প্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সরদারের গ্রেফতারের দাবিতে গত তিনদিন ধরে জ্বলছে সন্দেশখালি। শুক্রবারও গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আঁচে পুড়েছে জেলিয়াখালি এলাকায় থাকা তৃণমূল নেতা শিব প্রসাদ হাজরার তিনটি পোল্ট্রি ফার্ম। সূত্রের খবর, ভেড়িতে ঘেরা এই জেলিয়াখালিতেই একের পর এক পোল্ট্রি ফার্ম করে রেখেছেন শাহজাহান ঘনিষ্ঠ সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শিব প্রসাদ হাজরা।
অভিযোগ, গ্রামবাসীদের জমি গায়ের জোরে দখল করে নিজেদের সাম্রাজ্য বানিয়েছেন সন্দেশখালির 'বেতাজ বাদশা' শেখ শাহজাহান ও তাঁর দুই সহযোগী ৷ এমনকী, জমি দখল করার পর সেখানে গ্রামের পুরুষ-মহিলাদের বিনা পারিশ্রমিকে খাঁটিয়েও নিতেন বলে অভিযোগ ৷ দিনের পর দিন শাহজাহান বাহিনীর সেই অন্যায়-অত্যাচার মুখ বুজেই সহ্য করতে হয়েছে গ্রামবাসীদের। এখন তাঁরাই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
এদিকে, বেলা গড়াতেই সন্দেশখালির ক্ষোভের আঁচ এসে পড়ে জেলিয়াখালিতে তৃণমূল নেতা শিব প্রসাদ হাজরার পৈতৃক বাড়িতে। সেখানেও হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, শাহজাহান ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ নেতা শিব প্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সরদারকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। গ্রামে শান্তি ফেরাতে এদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। অভিযোগ, এদিন বিকেলে ফের সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
আরও পড়ুন:
1. সন্দেশখালি নিয়ে পদক্ষেপের আবেদন জানিয়ে অমিত শাহকে চিঠি সুকান্ত মজুমদারের
2. জনরোষের তত্ত্বই কি বুমেরাং হয়ে ফিরল তৃণমূলের দিকে, সন্দেশখালি লাগাতার বিক্ষোভে উঠছে প্রশ্ন
3. অশান্ত সন্দেশখালি, শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতার তিনটি পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীদের