মালদা, 19 জুলাই: গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক চার ভাইয়ের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে ভিনরাজ্যে শ্রমিক সরবরাহকারী এক ঠিকাদার ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে ৷ অভিযোগ, তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর নেতৃত্বে সেই সালিশি সভা অনুষ্ঠিত হয় ৷ তাঁর সামনেই নির্যাতন চালানো হয় চার ভাইয়ের উপর ৷ বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের মালিওর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরকাবাথান গ্রামে ৷
আহত চার ভাই বর্তমানে স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ এই ঘটনায় আহতদের তরফে 11 জনের বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ অভিযোগ দায়ের হতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্তরা ৷ তার মধ্যে রয়েছেন প্রধানের স্বামীও ৷ পলাতকদের খোঁজ পেতে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে পুলিশ ৷
আহতদের নাম আকবর আলি, বাবর আলি, জাহাঙ্গির শেখ ও সোলেমান আলি ৷ তাঁদের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ন’মাস আগে এলাকারই শ্রমিক সরবরাহকারী মনিরুল ইসলামের কাছ থেকে 11 হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন৷ সেই চুক্তি অনুযায়ী মুম্বইয়ে কাজ করতে যান আকবর ৷ কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই তিনি মুম্বই থেকে অন্য জায়গায় কাজে চলে যান ৷
এই নিয়ে মনিরুলের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব বাধে৷ আকবরের কাছে বকেয়া টাকা দাবি করেন মনিরুল ৷ সম্প্রতি আকবর ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন ৷ অভিযোগ, গত সোমবার মনিরুল দলবল নিয়ে আকবরের বাড়িতে চড়াও হন ৷ তিনি আকবরের মোবাইল ফোন-সহ 10 হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান ৷ এই নিয়ে আকবর হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন ৷
সেই সময় স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আবদুল রহমান আসরে প্রবেশ করেন ৷ তিনি স্থানীয়ভাবে এই ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁর বাড়ির সামনে সালিশি সভা ডাকেন ৷ বৃহস্পতিবার রাতে সেই সভা বসেছিল ৷ সভায় আকবররা চার ভাই উপস্থিত ছিলেন ৷ দলবল নিয়ে হাজির ছিলেন মনিরুলও ৷ জানা যাচ্ছে, সেই সময় হঠাৎ মনিরুল ও তাঁর লোকজন ছুরি, হাঁসুয়া, লোহার রড প্রভৃতি নিয়ে আকতবরদের চার ভাইয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ৷ তাঁদের হামলায় রক্তাক্ত হন চার ভাই ৷
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকবর বলেন, “মনিরুলের কাছে অগ্রিম নিয়ে আমি মুম্বই গিয়েছিলাম ৷ সেখানে 15-20 দিন কাজ করি ৷ মনিরুলের ভাইরাও সেখানে ছিল ৷ তারা আমাকে প্রচণ্ড গালিগালাজ করত ৷ অত গালিগালাজ শুনে আমি কাজ করতে ইচ্ছুক নই ৷ তাই অন্য জায়গায় কাজে চলে যাই ৷ আমি কাজের হিসাবও করতে চাই ৷ আমাকে মনিরুলের ভাই কাজে নিয়ে গিয়েছিল ৷ আমাকে মনিরুল তিন হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছিল ৷ 11 হাজার টাকা নয় ৷ কাজ থেকে ফেরার পর ও আমার কাছে টাকা দাবি করে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি টাকা দিতে একবারও অস্বীকার করিনি ৷ বলেছিলাম, টাকা ফেরত দেব ৷ তবে আটদিন দেরি হবে ৷ কিন্তু সে তখনই টাকা দাবি করে ৷ আমি সেই মুহূর্তে টাকা দিতে অস্বীকার করি ৷ তারপর থেকে সব চুপচাপই ছিল ৷ গত সোমবার আমি রাস্তার ধারে বসে ছিলাম ৷ সেই সময় ও আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ৷ বাড়ি থেকে 10 হাজার টাকাও নিয়ে নেয় ৷ এসব নিয়ে গতকাল রাতে প্রধানের স্বামীর ডাকে সালিশি সভা বসেছিল ৷ আমরা চার ভাই সেখানে ছিলাম ৷ সেখানে মনিরুলরা আমাদের কটাক্ষ করতে থাকে ৷ ওই সভাতেই আমাদের মারধর করা হয়েছে ৷”
আকবরের ভাই বাবর আলি বলেন, “গতকাল রাতে প্রধানের স্বামীর ডাকা সালিশি সভায় গিয়েছিলাম ৷ আমি মনিরুলকে শুধু একটাই কথা বলি, তারা আমার বাড়িতে এসে আমাকে মেরে ঠিক করেনি ৷ আমরা যদি সেদিন তোমাকে মারতাম তবে তুমি মরেই যেতে ৷ তখনই সবাই আমাদের মারতে শুরু করে ৷ পালানোর জায়গা পর্যন্ত ছিল না ৷ আমার মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে ৷ মনিরুল ও তার বাড়ির সবাই আমাদের মারধর করেছে ৷ আমাদের মোট সাতজনকে মারা হয়েছে ৷ তার মধ্যে আমরা চারজন হাসপাতালে ভর্তি ৷”
চাঁচলের এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, “এই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ অভিযুক্তরা সবাই পলাতক ৷ তাদের খোঁজে পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়েছে ৷ পুরো ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷”