মালদা, 26 নভেম্বর: একসময় প্রধানের চেয়ারে বসে পঞ্চায়েত এলাকার যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেছেন ৷ তাঁর একটা সই কত মানুষকে যে সরকারি ঘর পাইয়ে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই ৷ সেই প্রাক্তন প্রধান এখন পেট চালাতে দিনমজুরি করেন ৷ কখনও ইটভাটায়, কখনও বা রাস্তার কাজ ৷ নিজের কোনও ঘর নেই ৷ সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করেও এখনও তা পাননি ৷ অথচ অন্য কোনও দলের নয়, খোদ তৃণমূলের প্রধান নির্বাচিত হয়ে কাজ করে গিয়েছেন ৷
তিনি দীপালি মণ্ডল ৷ পুরাতন মালদা ব্লকের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধান ৷ দু'বছর প্রধান হিসাবে নিজের দায়িত্ব সামলেছেন ৷ সততার জন্য এখনও স্থানীয় মানুষ তাঁকে মনে রেখেছে ৷ তারপর অবশ্য দল তাঁকে আর টিকিট দেয়নি ৷ প্রধানের পদ চলে যাওয়ার পরেই তাঁকে ছেড়ে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে গিয়েছেন স্বামী বীরেন মণ্ডল ৷ আর গ্রামে ফেরেননি তিনি ৷ এখন তিনি কোথায়, কেউ জানে না ৷ একমাত্র ছেলে সঞ্জীবও বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন ৷ তাই দীপালিদেবীর ঠাঁই তাঁর বাবার বাড়িতে ৷ 80 বছর বয়সি বাবা অবিনাশ মণ্ডল এখনও বেঁচে রয়েছেন ৷ রাঙামাটিয়া গ্রামের কাঁচা বাড়িতেই দিন কাটছে বাবা-মেয়ের ৷
সম্প্রতি রাঙামাটিয়া এলাকায় পূর্ত দফতরের পাকা রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে ৷ দীপালিদেবী সেখানে শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন ৷ কাজ করতে করতেই বললেন, "2016 থেকে 2018 সাল পর্যন্ত আমি ভাবুক অঞ্চলের প্রধান ছিলাম ৷ তৃণমূলের টিকিটেই জিতেছিলাম ৷ টিম মমতার জন্য যথাসাধ্য কাজ করে গিয়েছি ৷ তারপর দল অবশ্য আমাকে আর ভোটের টিকিট দেয়নি ৷ যতদিন প্রধানের চেয়ারে ছিলাম, সততার সঙ্গে কাজ করে গিয়েছি ৷ মানুষের জন্য কাজ করেছি ৷ নিজের জন্য কিছু করিনি ৷ নিজের ঘরবাড়ি নেই ৷ বাবার কাঁচা বাড়িতে থাকছি ৷ স্বামী অনেকদিন আগেই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে ৷ একমাত্র ছেলেও বউ নিয়ে আলাদা থাকে ৷ বাবা যে কোনও সময় আমাকে তাঁর বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে ৷ তখন যাব কোথায় ? অল্প কিছু জায়গা আছে ৷ সরকারি একটা ঘর পেলে খুব ভালো হত ৷ তার জন্য আবেদন করেছিলাম ৷ কিন্তু কিছু হয়নি ৷ দলের তরফেও কেউ সাহায্য করেনি ৷"
দীপালিদেবীর এহেন পরিস্থিতির কথা শুনে তৃণমূলের ভাবুক অঞ্চল সভাপতি দিলীপ হেমব্রম বলেন, "দীপালিদেবী 2018 সাল পর্যন্ত আমাদের দলের প্রধান ছিলেন ৷ তাঁর যে নিজের বাড়ি নেই, সেটা আমার জানা ছিল না ৷ তবে তিনি যে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন, সেটা জানতাম ৷ একমাস আগেও তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল ৷ এখন তিনি দিনমজুরের কাজ করছেন ৷ কিন্তু আমাকে এসব কিছু জানাননি ৷ বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব ৷ প্রয়োজনে বিডিওর সঙ্গে কথা বলব ৷ দীপালিদেবীকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে ৷"
ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েত বর্তমানে বিজেপির দখলে ৷ প্রধান প্রভুনাথ দুবে বলছেন, "প্রাক্তন প্রধান দীপালি মণ্ডল আমার প্রতিবেশী ৷ উনি সরকারি ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত ঘর পাননি ৷ তাঁর অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ ৷ বাড়ির সামনে একটি ছোট চায়ের দোকান আছে ৷ ওই দোকান চালানোর সঙ্গে শ্রমিকের কাজ করে তিনি পেট চালাচ্ছেন ৷ আজ সকালে দেখলাম, পূর্ত দফতরের রাস্তার কাজ করছেন ৷ যা দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে ৷ আমি চাই, একজন গরিব প্রাক্তন প্রধানও সরকারি ঘর পাক ৷ আমরা এই পঞ্চায়েতে বেশ কিছু গরিব মানুষের নাম আবাস যোজনায় পাঠিয়েছিলাম ৷ তার মধ্যে দীপালিদেবীরও নাম ছিল ৷ কিন্তু এবার আমাদের ব্লক সরকারি সেই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৷ তালিকায় এই পঞ্চায়েত এলাকার কারও নাম নেই ৷ বিষয়টি আমরা বিডিওকে জানাব ৷ দীপালিদেবী যাতে একটি সরকারি ঘর পান, তার জন্য সবরকম চেষ্টা করব ৷"