দার্জিলিং, 2 সেপ্টেম্বর: চা-বাগান এলাকায় ঘনঘন চিতাবাঘের হানা ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করল বন দফতর ৷ রাজ্যের মধ্যে প্রথম দার্জিলিং জেলার সমতলের চারটি চা-বাগানে ওই কুইক রেসপন্স টিম বা কিউআরটি কাজ করবে ৷
শিলিগুড়ি সংলগ্ন সুকনা এলাকার চা-বলয়ে মাঝেমধ্যেই চিতাবাঘ হানা দেয় ৷ গত সাতদিনে বন দফতরের পাতা খাঁচায় ধরা পড়েছে তিনটে পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ ৷ সোমবার ভোরেও মোহরগাঁও গুলমার বড় আসাম সেকসনে ছাগলের টোপ দেওয়া খাঁচায় ধরা পড়ে বছর চার-পাঁচেকের একটি স্ত্রী চিতাবাঘ ৷
সোমবার সকালে ওই চিতাবাঘটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মহানন্দা অভয়ারণ্যের গভীর জঙ্গলে ছাড়া হয় ৷ গত মঙ্গলবার ও শুক্রবার একই জায়গায় একইভাবে ধরা পড়ে দু’টি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘ ৷ সাম্প্রতিকালে সাতদিনের মধ্যে তিনটে চিতাবাঘ ধরা পড়েনি ৷ যা সুকনা সোয়াড রেঞ্জের বড় সাফল্য বলে মনে করছেন বন আধিকারিকরা ৷
সুকনা জঙ্গল সংলগ্ন চা-বাগানগুলিতে মাঝেমধ্যেই চিতাবাঘ হানা দিয়ে থাকে ৷ চা-বাগানের ভিতর থেকে মাঝেমধ্যেই উদ্ধার হয় চিতাবাঘের শাবক ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, চা-বাগান চিতাবাঘের বাসস্থানের জন্য অনুকূল জায়গা ৷ তাই চা-বাগানের খালে ও গাছের গোড়ায় বসবাস করে চিতাবাঘ ৷ আর শ্রমিকরা চা-পাতা তুলতে গেলেই চিতাবাঘের হামলার শিকার হন ৷ এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য সুকনার চারটি চা-বাগানের জন্য কিউআরটি তৈরি করল বন দফতর ৷ চামটা, মোহরগাঁও গুলমা, দাগাপুর ও সুকনা চা-বাগানের জন্য এই কিউআরটি তৈরি করা হয়েছে ৷
চা-বাগানের শ্রমিক ও যুবকদের নিয়ে ওই কিউআরটি টিম তৈরি করা হয়েছে ৷ এক একটি টিমে আট থেকে দশ জন করে সদস্য রয়েছেন ৷ চা-বাগান ও সংলগ্ন এলাকায় চিতাবাঘ হামলা করলে বা দেখা গেলে কী করতে হবে, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কিউআরটি-গুলিকে ৷ যতক্ষণ না-পর্যন্ত বন বিভাগের কর্মীরা পৌঁছাচ্ছেন ততক্ষণ সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখা তাঁদের কাজ ৷ পাশাপাশি, চিতাবাঘকে লোকালয় থেকে দূরে রাখা কাজও করবে কিউআরটি ৷
কিউআরটি রোজ সকালে সকালে ও দুপুরে শ্রমিকরা চা-বাগানে কাজ করতে যাওয়ার আগে পটকা ফাটাবেন ৷ চা-বাগানে চিতাবাঘ রয়েছে কিনা, তা পটকা ফাটিয়ে নিশ্চিত করবে কিউআরটি-র সদস্যরা ৷ নজরদারির জন্য সার্চ লাইট, জাল, পটকা এসব সামগ্রী বন বিভাগের তরফে সরবরাহ করা হবে ৷
এই বিষয়ে সুকনা স্কোয়াডের রেঞ্জার দিলীপ বিশ্বাস বলেন, "চা বাগানের মানুষরা অনেকদিন ধরেই চিতাবাঘের আতঙ্কে ভুগছেন ৷ গত সাতদিনে খাঁচায় তিনটে চিতাবাঘ ধরা পড়েছে ৷ প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় চারটি চা-বাগানে কিউআরটি তৈরি করা হয়েছে ৷ শ্রমিকরা চা পাতা তুলতে যাওয়ার আগে এই টিম গোটা চা-বাগানে নজরদারি করবে ৷ পটকা ফাঁটিয়ে নিশ্চিত করবে যে চিতাবাঘ রয়েছে কিনা ৷ লোকালয়ে আচমকা চিতাবাঘ ঢুকে পড়লে, বনকর্মীরা যতক্ষণ না-পৌঁছচ্ছে তাঁদের কী করা উচিৎ সেটারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৷"