কলকাতা, 22 জানুয়ারি: গত সপ্তাহের পর মঙ্গলবার ট্যাংরায় হেলে পড়ল জোড়া বহুতল ৷ যেখানে দু’বছর আগে তৈরি হওয়া বহুতলটির নির্মাণ বেআইনি বলে অভিযোগ উঠছে, আর সেখানেই বেপরোয়া মনোভাব প্রোমোটার রজত লি-র ! অভিযোগ, খাটালের জমিতে এক্কেবারে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি ৷ এমনকি আইনের চোখে ধুলো দিয়ে পাঁচতলার আড়ালে ছ’তলা করার অভিযোগ উঠেছে ৷
অর্থাৎ, মূল রাস্তার দিকে বহুতলটি পাঁচতলা ৷ কিন্তু, পিছনে মাঠের দিকে গেলে, দেখা যাবে সেই বহুতলই হয়ে গিয়েছে ছ’তলা ৷ ছাদের একদিকে চিলে কোঠা ঘিরে তৈরি করা হয়েছে সেই ছ’তলার ফ্ল্যাট ৷ অর্থাৎ, সামনে থেকে পাঁচতলা এবং পিছন দিক থেকে ছয় তলা ওই বহুতলটি ৷ অভিযোগ, যেখানে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বেআইনি নির্মাণ করেছেন এলাকার দোরদণ্ডপ্রতাপ প্রোমোটার রজত লি ৷
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, 11/2 ক্রিস্টোফার রোড, কলকাতা- 7000467, এই ঠিকানার জমির চরিত্র ছিল খাটাল ৷ তাই বহুতল তৈরি হওয়ার পর একাধিকবার চেষ্টা করলেও কলকাতা পুরনিগমে সেটির মিউটেশন করানো যায়নি ৷ এমনটাই অভিযোগ করেছেন বহুতলের বাসিন্দা তথা জমির পূর্বতন মালিক রিনা সেনগুপ্ত ৷ অর্থাৎ, কলকাতা পুরনিগমের কোনোরকম জমির নকশা অনুমোদন বা কর মূল্যায়ন বা মিউটেশন কিছুই হয়নি এই বাড়ির ক্ষেত্রে ৷ তবে, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে ঠিকা অফিসে এই জমির খাজনা জমা দিতেন ৷
আর এই জমিতেই দেদার নোটারির মাধ্যমে ডিড অফ সেল অর্থাৎ, চুক্তি করে লাখ-লাখ টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন অভিযুক্ত প্রোমোটার ৷ এমনই বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসছে কলকাতা পুরনিগম সূত্রে ৷ অন্যদিকে, ছ’তলা বিল্ডিংয়ে মোট 11টি ফ্ল্যাট রয়েছে ৷ তার মধ্যে দুই ফ্লোরে দু’টি করে চারটি ফ্ল্যাট জমির মালিক পেয়েছেন ৷ বাকি সাতটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন প্রোমোটার ৷
এই বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে মাটির পরীক্ষা অথবা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়রের সাহায্য নেওয়া হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে সন্ধিহান পুরো কর্তৃপক্ষও ৷ শুধু তাই নয়, বিল্ডিং বিভাগের অনুমোদন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ৷ কারণ, এই জমি চরিত্রগতভাবে ঠিকা জমি ৷ পাশাপাশি কলকাতা পুরনিগমের কম্পিটিশন সার্টিফিকেটও পায়নি এই বেআইনি বহুতল ৷
ঘটনার পর কলকাতা কর্পোরেশন আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাড়িটিতে ইতিমধ্যে লোকজন থাকতেন, সেই হেলে পড়া বাড়ি আপাতত সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হবে। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে হাজির হবেন কলকাতা পুরসভার তরফে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ররা। তাঁরা পাশের নির্মীয়মান সাদা বাড়িটি পর্যবেক্ষণ করবেন। সেই বাড়িও ভেঙে ফেলা হবে কি না, তার পরামর্শও দেবেন তাঁরা। ভাঙার কাজ আজ থেকেই শুরু হচ্ছে ৷
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "হেলে পড়া বাড়িটি আজ থেকেই ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে ৷ বাড়িটি ভাঙা হয়ে গেলে, দ্বিতীয় বাড়ি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে ৷ যে বাড়িটি ভাঙা হবে, সেই বাড়ির আবাসিকরা কোথায় থাকবেন, তা আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে বিল্ডিং দফতর ৷" যেখানে বিষয়টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন 58 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপন সাহা ৷