ETV Bharat / state

খারিজি মাদ্রাসা থেকে উধাও 5 নাবালক ছাত্র, চাঞ্চল্য কালিয়াচকে - Students Missing

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 1, 2024, 5:18 PM IST

Students Missing from Madrasa: মাদ্রাসা থেকে একসঙ্গে পাঁচ ছাত্রের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য মালদার কালিয়াচকে ৷ উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা ছুটলেন থানায় ৷ এই পাঁচজন কোথায় গিয়েছে তা খুঁজে দেখছে পুলিশ ৷

Student Missing from Kaliachak Malda
প্রতীকী চিত্র (ইটিভি ভারত)

মালদা, 1 অগস্ট: একইসঙ্গে মাদ্রাসা থেকে পাঁচ পড়ুয়ার অন্তর্ধানে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কালিয়াচকে ৷ এই পড়ুয়ারা সবাই সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসার ছাত্র হলেও অনুমোদন ও অনুদান নেই এমন আবাসিক মাদ্রাসায় (খারিজি) থেকে পড়াশোনা করে ৷ সবার বয়স 11 থেকে 14 বছরের মধ্যে ৷ নিখোঁজ নাবালকদের চারজন মালদার বাসিন্দা ৷ একজনের বাড়ি বিহারের কিষণগঞ্জে ৷ চারদিকে খোঁজাখুঁজি করেও ছেলেদের কোনও সন্ধান না পেয়ে অবশেষে কালিয়াচক থানার দ্বারস্থ হয়েছেন চার পড়ুয়ার অভিভাবক ৷ নিখোঁজ পড়ুয়াদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ৷ তবে এই ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৷ এমনকি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেখা করতেও অস্বীকার করেছে তারা ৷

মালদায় নিখোঁজ নাবালক (ইটিভি ভারত)

মাদ্রাসাটি রয়েছে কালিয়াচকের মোসিমপুর গ্রামে ৷ নাম মোসিমপুর আজহারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার বিকেলেও মাদ্রাসার ছেলেরা খানিক দূরে একটি মাঠে খেলতে বেরিয়েছিল ৷ খেলার মাঠ থেকেই পাঁচজন নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ এদের মধ্যে সুজাপুরের দুই ছাত্র মাঠ থেকে বাড়িও গিয়েছিল ৷ বাড়িতে কিছুক্ষণ থাকার পর মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে যায় ৷ নিখোঁজ পাঁচজনের মধ্যে রয়েছে বছর বারোর মহম্মদ ইকবাল, চোদ্দ বছর বয়সি আবু সুফিয়ান এবং বছর এগারোর রামিজ রাজার বাড়ি সুজাপুরের বিভিন্ন এলাকায় ৷ তেরো বছরের মহম্মদ জুবেইর ইসলাম ইংরেজবাজার থানার কাটাগড় এলাকার বাসিন্দা ৷ বারো বছর বয়সি মহম্মদ আসরাউল শেখের বাড়ি বিহারের কিশনগঞ্জে ৷

বুধবার সকালে পাঁচ ছাত্রের বাড়িতে ফোন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৷ জানানো হয়, সম্ভবত খেলার মাঠ থেকে পাঁচজন নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছে ৷ ওই পাঁচজনকে যেন দ্রুত মাদ্রাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় ৷ কিন্তু অভিভাবকরা জানিয়ে দেন, তারা কেউ বাড়িতে নেই ৷ মাদ্রাসাতেই সবার থাকার কথা ৷ সেকথা শুনে পাঁচ পড়ুয়ার অভিভাবককেই মাদ্রাসায় ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষক ওয়াহেদ মোমিন ৷ তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে গতকাল রাতে কালিয়াচক থানায় চার অভিভাবক ছেলেদের নামে মিসিং ডায়ারি করেন ৷

সুজাপুরের মাস্টার পাড়ার নিখোঁজ পড়ুয়ার মা সাঞ্জিলা বিবি বলেন, "আমাদের বাড়ি মাদ্রাসার কাছাকাছি ৷ তাই প্রায় প্রতিদিনই ছেলে বাড়ি যেত ৷ মঙ্গলবার বিকেলেও গিয়েছিল ৷ বাড়িতে কিছুক্ষণ থেকে মাদ্রাসায় ফিরে যাচ্ছে বলে বেরিয়ে যায় ৷ বুধবার সকালে মাদ্রাসা থেকে ফোন আসে ৷ ছেলে বাড়িতে আছে কিনা জিজ্ঞেস করে ৷ তখনই জানতে পারি, ছেলে মাদ্রাসায় ফিরে যায়নি ৷ তখন থেকে ওর খোঁজখবর নিতে শুরু করি ৷ এখনও পর্যন্ত ছেলের কোনও হদিস পাইনি ৷"

আরেক নিখোঁজ পড়ুয়ার কাকা মাসিদুর রহমান বলেন, "বিকেল চারটের সময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ খেলাধুলোর জন্য বাচ্চাদের খানিকটা সময় দেয় ৷ সেই সময় অনেকে মাদ্রাসার হুজুরের সম্মতি নিয়ে বাড়ি আসে ৷ কারণ, প্রায় প্রত্যেকেরই মাদ্রাসার কাছাকাছি এলাকায় বাড়ি ৷ আমার ভাইপোও বাড়ি গিয়েছিল ৷ কিছুক্ষণ বাড়িতে থেকে ফের মাদ্রাসা ফিরে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে যায় ৷ আমরা জানি, ও মাদ্রাসায় চলে গিয়েছে ৷ পরদিন সকালে মাদ্রাসা থেকে ফোন করে জানায় ভাইপো নিখোঁজ ৷ আমরা সব জায়গায় খুঁজেছি ৷ শুধু আমরা নই, নিখোঁজ চার জনের বাড়ির লোকজনই খোঁজাখুঁজি করতে ব্যস্ত ৷ কিন্তু কোথাও তাদের সন্ধান মেলেনি ৷ তাই শেষ পর্যন্ত থানার দ্বারস্থ হয়েছি ৷ এরা একটি সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র হলেও এই খারিজি মাদ্রাসায় থাকে ৷"

আরেক পড়ুয়ার দিদি ফারহানা পারভিনের কথায়, "বুধবার সকালে হুজুরদের ফোন পেয়ে চিন্তায় পড়ে যাই ৷ পাঁচজনের মধ্যে দুটো ছেলে বাড়ি গেলেও আমার ভাই বাড়ি যায়নি ৷ সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি ৷ কোথাও ভাইয়ের সন্ধান পাইনি ৷ ও কোথায় গেল বুঝতে পারছি না ৷ তাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি ৷" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিয়াচক থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, "এই ঘটনায় চার নাবালকের পরিবারের তরফে থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে ৷ তাদের খোঁজ চলছে ৷ মাদ্রাসাটি ইন্দো-বাংলা সীমান্ত থেকে সামান্য দূরে ৷ এতেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে পুলিশের ৷"

স্থানীয় মানুষজনের উদ্বেগ, নিখোঁজ পড়ুয়ারা যদি কোনওভাবে বাংলাদেশি মৌলবাদী সংগঠনের শিকার হয়ে যায় তবে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাবে কিনা বলা যায় না ৷ কারণ, মোসিমপুর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে নয় ৷ তাছাড়া খারিজি মাদ্রাসাগুলির কাজকর্ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে ৷ রাজ্যে এমন মাদ্রাসার সংখ্যা 614টি ৷ তার মধ্যে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকেই প্রায় 100টি খারিজি মাদ্রাসা রয়েছে ৷ এবার সেখান থেকেই নিখোঁজ হল 5 পড়ুয়া ৷

মালদা, 1 অগস্ট: একইসঙ্গে মাদ্রাসা থেকে পাঁচ পড়ুয়ার অন্তর্ধানে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কালিয়াচকে ৷ এই পড়ুয়ারা সবাই সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসার ছাত্র হলেও অনুমোদন ও অনুদান নেই এমন আবাসিক মাদ্রাসায় (খারিজি) থেকে পড়াশোনা করে ৷ সবার বয়স 11 থেকে 14 বছরের মধ্যে ৷ নিখোঁজ নাবালকদের চারজন মালদার বাসিন্দা ৷ একজনের বাড়ি বিহারের কিষণগঞ্জে ৷ চারদিকে খোঁজাখুঁজি করেও ছেলেদের কোনও সন্ধান না পেয়ে অবশেষে কালিয়াচক থানার দ্বারস্থ হয়েছেন চার পড়ুয়ার অভিভাবক ৷ নিখোঁজ পড়ুয়াদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ৷ তবে এই ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৷ এমনকি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেখা করতেও অস্বীকার করেছে তারা ৷

মালদায় নিখোঁজ নাবালক (ইটিভি ভারত)

মাদ্রাসাটি রয়েছে কালিয়াচকের মোসিমপুর গ্রামে ৷ নাম মোসিমপুর আজহারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার বিকেলেও মাদ্রাসার ছেলেরা খানিক দূরে একটি মাঠে খেলতে বেরিয়েছিল ৷ খেলার মাঠ থেকেই পাঁচজন নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ এদের মধ্যে সুজাপুরের দুই ছাত্র মাঠ থেকে বাড়িও গিয়েছিল ৷ বাড়িতে কিছুক্ষণ থাকার পর মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে যায় ৷ নিখোঁজ পাঁচজনের মধ্যে রয়েছে বছর বারোর মহম্মদ ইকবাল, চোদ্দ বছর বয়সি আবু সুফিয়ান এবং বছর এগারোর রামিজ রাজার বাড়ি সুজাপুরের বিভিন্ন এলাকায় ৷ তেরো বছরের মহম্মদ জুবেইর ইসলাম ইংরেজবাজার থানার কাটাগড় এলাকার বাসিন্দা ৷ বারো বছর বয়সি মহম্মদ আসরাউল শেখের বাড়ি বিহারের কিশনগঞ্জে ৷

বুধবার সকালে পাঁচ ছাত্রের বাড়িতে ফোন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৷ জানানো হয়, সম্ভবত খেলার মাঠ থেকে পাঁচজন নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছে ৷ ওই পাঁচজনকে যেন দ্রুত মাদ্রাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় ৷ কিন্তু অভিভাবকরা জানিয়ে দেন, তারা কেউ বাড়িতে নেই ৷ মাদ্রাসাতেই সবার থাকার কথা ৷ সেকথা শুনে পাঁচ পড়ুয়ার অভিভাবককেই মাদ্রাসায় ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষক ওয়াহেদ মোমিন ৷ তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে গতকাল রাতে কালিয়াচক থানায় চার অভিভাবক ছেলেদের নামে মিসিং ডায়ারি করেন ৷

সুজাপুরের মাস্টার পাড়ার নিখোঁজ পড়ুয়ার মা সাঞ্জিলা বিবি বলেন, "আমাদের বাড়ি মাদ্রাসার কাছাকাছি ৷ তাই প্রায় প্রতিদিনই ছেলে বাড়ি যেত ৷ মঙ্গলবার বিকেলেও গিয়েছিল ৷ বাড়িতে কিছুক্ষণ থেকে মাদ্রাসায় ফিরে যাচ্ছে বলে বেরিয়ে যায় ৷ বুধবার সকালে মাদ্রাসা থেকে ফোন আসে ৷ ছেলে বাড়িতে আছে কিনা জিজ্ঞেস করে ৷ তখনই জানতে পারি, ছেলে মাদ্রাসায় ফিরে যায়নি ৷ তখন থেকে ওর খোঁজখবর নিতে শুরু করি ৷ এখনও পর্যন্ত ছেলের কোনও হদিস পাইনি ৷"

আরেক নিখোঁজ পড়ুয়ার কাকা মাসিদুর রহমান বলেন, "বিকেল চারটের সময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ খেলাধুলোর জন্য বাচ্চাদের খানিকটা সময় দেয় ৷ সেই সময় অনেকে মাদ্রাসার হুজুরের সম্মতি নিয়ে বাড়ি আসে ৷ কারণ, প্রায় প্রত্যেকেরই মাদ্রাসার কাছাকাছি এলাকায় বাড়ি ৷ আমার ভাইপোও বাড়ি গিয়েছিল ৷ কিছুক্ষণ বাড়িতে থেকে ফের মাদ্রাসা ফিরে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে যায় ৷ আমরা জানি, ও মাদ্রাসায় চলে গিয়েছে ৷ পরদিন সকালে মাদ্রাসা থেকে ফোন করে জানায় ভাইপো নিখোঁজ ৷ আমরা সব জায়গায় খুঁজেছি ৷ শুধু আমরা নই, নিখোঁজ চার জনের বাড়ির লোকজনই খোঁজাখুঁজি করতে ব্যস্ত ৷ কিন্তু কোথাও তাদের সন্ধান মেলেনি ৷ তাই শেষ পর্যন্ত থানার দ্বারস্থ হয়েছি ৷ এরা একটি সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র হলেও এই খারিজি মাদ্রাসায় থাকে ৷"

আরেক পড়ুয়ার দিদি ফারহানা পারভিনের কথায়, "বুধবার সকালে হুজুরদের ফোন পেয়ে চিন্তায় পড়ে যাই ৷ পাঁচজনের মধ্যে দুটো ছেলে বাড়ি গেলেও আমার ভাই বাড়ি যায়নি ৷ সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি ৷ কোথাও ভাইয়ের সন্ধান পাইনি ৷ ও কোথায় গেল বুঝতে পারছি না ৷ তাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি ৷" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিয়াচক থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, "এই ঘটনায় চার নাবালকের পরিবারের তরফে থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে ৷ তাদের খোঁজ চলছে ৷ মাদ্রাসাটি ইন্দো-বাংলা সীমান্ত থেকে সামান্য দূরে ৷ এতেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে পুলিশের ৷"

স্থানীয় মানুষজনের উদ্বেগ, নিখোঁজ পড়ুয়ারা যদি কোনওভাবে বাংলাদেশি মৌলবাদী সংগঠনের শিকার হয়ে যায় তবে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাবে কিনা বলা যায় না ৷ কারণ, মোসিমপুর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে নয় ৷ তাছাড়া খারিজি মাদ্রাসাগুলির কাজকর্ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে ৷ রাজ্যে এমন মাদ্রাসার সংখ্যা 614টি ৷ তার মধ্যে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকেই প্রায় 100টি খারিজি মাদ্রাসা রয়েছে ৷ এবার সেখান থেকেই নিখোঁজ হল 5 পড়ুয়া ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.