ETV Bharat / state

হিমঘরে আলু রেখেও নিস্তার নেই, মালদার বাজারে জাল বন্ড; গ্রেফতার 5 - FAKE POTATO BOND

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 4, 2024, 7:57 PM IST

Fake Bond in Malda: জাল বন্ড নিয়ে আলু নিতে এসেছিলেন হিমঘরে ৷ ম্যানেজারের সন্দেহ হওয়াতেই তা পরীক্ষা করেন ৷ তারপরই বেরিয়ে আসে আসল সত্য ৷

Malda News
জাল বন্ড দিয়ে আলু নিতে এসে গ্রেফতার (ইটিভি ভারত)

মালদা, 4 জুলাই: হিমঘরে সংরক্ষিত আলুর বন্ড নিয়ে জালয়াতি চক্র মালদায় ৷ ইতিমধ্যে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ শুধু মালদাতেই, নাকি রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও এমন চক্র ছড়িয়ে পড়েছে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ৷ এমন ঘটনায় মালদা জেলায় প্রথমবার ঘটল বলে জানাচ্ছেন আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ৷

জাল বন্ড পাওয়ার ঘটনায় ধৃত ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বক্তব্য (নিজস্ব ভিডিয়ো)

মালদা জেলায় সবচেয়ে বেশি আলু উৎপন্ন হয় পুরাতন মালদা ব্লকে ৷ এই ব্লকে হিমঘরের সংখ্যাও বেশি ৷ গত রবিবার সেখানকার একাধিক হিমঘরে আলুর জাল বন্ডের হদিশ মিলেছে ৷ সেখানকার একটি হিমঘরের ম্যানেজার দীপক রাজবংশী বলেন, "একটি ছেলে আমাদের হিমঘরে আসে ৷ সে দুটি আলুর বন্ড সঙ্গে নিয়ে এসেছিল ৷ দুটি বন্ডে 200টি আলুর প্যাকেট হিমঘর থেকে বের করার জন্য এখানে এসেছিল ৷ আমরা বন্ড দুটি মেশিনে পরীক্ষা করি ৷ কারণ, প্রতিটি বন্ডে আমাদের বারকোড রয়েছে ৷ পরীক্ষায় দেখা যায়, দুটি বন্ডই জাল ৷ ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, স্থানীয় চেচু মোড়ের উপেন রাজবংশী নামে এক ব্যক্তি তাকে ওই দুটি বন্ড দিয়ে আলুর বস্তা হিমঘর থেকে বের করে নিয়ে যেতে বলেছে ৷ আমি তাকে বলি, তার সঙ্গে থাকা দুটি বন্ডই জাল ৷ সে যেন তার মালিককে বিষয়টি জানায় ৷ আমরাও উপেনবাবুর সঙ্গে কথা বলি ৷ তাঁকে হিমঘরে ডেকে পাঠাই ৷"

তিনি আরও বলেন, "ভিলেজ পুলিশকেও গোটা বিষয়টি জানাই ৷ উপেনবাবু আরও একটি বন্ড নিয়ে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ৷ পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটিও জাল ৷ তিনি নাকি কারও কাছে তিনটি বন্ডে 300 প্যাকেট আলু কিনেছেন বলে জানান ৷ আমরা মালদা থানায় খবর দিই ৷ পুলিশ তাঁদের দু'জনকেই থানায় নিয়ে গিয়েছে ৷ সাধারণ মানুষ এই জাল বন্ড চিনতে পারবেন না ৷ এক দেখায় হুবহু আসল বন্ডের মতোই দেখতে ৷ তাতে সিল-সই, সবই রয়েছে ৷ তবে জাল বন্ডের বারকোড আলাদা ৷ পরে জানতে পারি, গাজোলের রাজাদিঘি এলাকায় সঞ্জয় ভগত নামে একজন এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ৷"

মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় প্রথমে উপেন রাজবংশী ও অভিজিৎ রাজবংশীকে গ্রেফতার করা হয় ৷ অভিজিৎ ভুটভুটিচালক ৷ সে'ই হিমঘর থেকে আলু বের করতে গিয়েছিল ৷ জেলা আদালতের অনুমতিতে তাদের তিনদিনের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয় ৷ উঠে আসে আরও তিনজনের নাম ৷ তারা হল সঞ্জয়প্রসাদ ভগত, সুফল স্বর্ণকার ও দুলাল সরকার ৷ তিনজনই গাজোল থানা এলাকার বাসিন্দা ৷ বুধবার তাদের পাঁচজনকেই জেলা আদালতে পেশ করা হয় ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত জারি রয়েছে ৷

এই ঘটনায় চিন্তিত মালদা কোল্ড স্টোরেজ ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা ৷ তিনি বলেন, "মালদা জেলায় আলুর জাল বন্ডের একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে ৷ ক'দিন আগে আদিনা সমবায় হিমঘরে প্রথম এমন জাল বন্ডের হদিশ মেলে ৷ তারপর আরও একটি হিমঘরে একই ঘটনা ঘটে ৷ ওই হিমঘরের তরফে বিষয়টি পুলিশে জানানো হয় ৷ পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করে ৷ জাল বন্ডের এই চক্রকে অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে ৷ কারণ, কৃষকদের ফসল রক্ষার দায়িত্ব আমাদের ৷ পুলিশ এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব ৷"

আদালতে যাওয়ার পথে ধৃত উপেন রাজবংশী বলেন, "সঞ্জয় আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে ৷ আমার কাছে তিনটি বন্ড বন্ধক ছিল ৷ সেই বন্ডগুলি দিয়ে আলু তুলতে গিয়ে জানা যায়, সেসব জাল ৷ সঞ্জয়ই বন্ড জাল করেছে ৷" অভিযোগ মেনে নিয়ে সঞ্জয় ভগত বলেন, "টাকা উপার্জনের জন্য এই কাজ করেছি ৷ জানি, এই কাজ অন্যায় ৷ এই কাজে আমার সঙ্গে কেউ ছিল না ৷ আমি একাই করেছি ৷" যদিও পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের একাংশের অনুমান, এই কাজ করা একজনের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ এর পিছনে নিশ্চিতভাবেই আরও মাথা রয়েছে ৷

মালদা, 4 জুলাই: হিমঘরে সংরক্ষিত আলুর বন্ড নিয়ে জালয়াতি চক্র মালদায় ৷ ইতিমধ্যে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ শুধু মালদাতেই, নাকি রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও এমন চক্র ছড়িয়ে পড়েছে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ৷ এমন ঘটনায় মালদা জেলায় প্রথমবার ঘটল বলে জানাচ্ছেন আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ৷

জাল বন্ড পাওয়ার ঘটনায় ধৃত ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বক্তব্য (নিজস্ব ভিডিয়ো)

মালদা জেলায় সবচেয়ে বেশি আলু উৎপন্ন হয় পুরাতন মালদা ব্লকে ৷ এই ব্লকে হিমঘরের সংখ্যাও বেশি ৷ গত রবিবার সেখানকার একাধিক হিমঘরে আলুর জাল বন্ডের হদিশ মিলেছে ৷ সেখানকার একটি হিমঘরের ম্যানেজার দীপক রাজবংশী বলেন, "একটি ছেলে আমাদের হিমঘরে আসে ৷ সে দুটি আলুর বন্ড সঙ্গে নিয়ে এসেছিল ৷ দুটি বন্ডে 200টি আলুর প্যাকেট হিমঘর থেকে বের করার জন্য এখানে এসেছিল ৷ আমরা বন্ড দুটি মেশিনে পরীক্ষা করি ৷ কারণ, প্রতিটি বন্ডে আমাদের বারকোড রয়েছে ৷ পরীক্ষায় দেখা যায়, দুটি বন্ডই জাল ৷ ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, স্থানীয় চেচু মোড়ের উপেন রাজবংশী নামে এক ব্যক্তি তাকে ওই দুটি বন্ড দিয়ে আলুর বস্তা হিমঘর থেকে বের করে নিয়ে যেতে বলেছে ৷ আমি তাকে বলি, তার সঙ্গে থাকা দুটি বন্ডই জাল ৷ সে যেন তার মালিককে বিষয়টি জানায় ৷ আমরাও উপেনবাবুর সঙ্গে কথা বলি ৷ তাঁকে হিমঘরে ডেকে পাঠাই ৷"

তিনি আরও বলেন, "ভিলেজ পুলিশকেও গোটা বিষয়টি জানাই ৷ উপেনবাবু আরও একটি বন্ড নিয়ে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ৷ পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটিও জাল ৷ তিনি নাকি কারও কাছে তিনটি বন্ডে 300 প্যাকেট আলু কিনেছেন বলে জানান ৷ আমরা মালদা থানায় খবর দিই ৷ পুলিশ তাঁদের দু'জনকেই থানায় নিয়ে গিয়েছে ৷ সাধারণ মানুষ এই জাল বন্ড চিনতে পারবেন না ৷ এক দেখায় হুবহু আসল বন্ডের মতোই দেখতে ৷ তাতে সিল-সই, সবই রয়েছে ৷ তবে জাল বন্ডের বারকোড আলাদা ৷ পরে জানতে পারি, গাজোলের রাজাদিঘি এলাকায় সঞ্জয় ভগত নামে একজন এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ৷"

মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় প্রথমে উপেন রাজবংশী ও অভিজিৎ রাজবংশীকে গ্রেফতার করা হয় ৷ অভিজিৎ ভুটভুটিচালক ৷ সে'ই হিমঘর থেকে আলু বের করতে গিয়েছিল ৷ জেলা আদালতের অনুমতিতে তাদের তিনদিনের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয় ৷ উঠে আসে আরও তিনজনের নাম ৷ তারা হল সঞ্জয়প্রসাদ ভগত, সুফল স্বর্ণকার ও দুলাল সরকার ৷ তিনজনই গাজোল থানা এলাকার বাসিন্দা ৷ বুধবার তাদের পাঁচজনকেই জেলা আদালতে পেশ করা হয় ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত জারি রয়েছে ৷

এই ঘটনায় চিন্তিত মালদা কোল্ড স্টোরেজ ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা ৷ তিনি বলেন, "মালদা জেলায় আলুর জাল বন্ডের একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে ৷ ক'দিন আগে আদিনা সমবায় হিমঘরে প্রথম এমন জাল বন্ডের হদিশ মেলে ৷ তারপর আরও একটি হিমঘরে একই ঘটনা ঘটে ৷ ওই হিমঘরের তরফে বিষয়টি পুলিশে জানানো হয় ৷ পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করে ৷ জাল বন্ডের এই চক্রকে অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে ৷ কারণ, কৃষকদের ফসল রক্ষার দায়িত্ব আমাদের ৷ পুলিশ এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব ৷"

আদালতে যাওয়ার পথে ধৃত উপেন রাজবংশী বলেন, "সঞ্জয় আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে ৷ আমার কাছে তিনটি বন্ড বন্ধক ছিল ৷ সেই বন্ডগুলি দিয়ে আলু তুলতে গিয়ে জানা যায়, সেসব জাল ৷ সঞ্জয়ই বন্ড জাল করেছে ৷" অভিযোগ মেনে নিয়ে সঞ্জয় ভগত বলেন, "টাকা উপার্জনের জন্য এই কাজ করেছি ৷ জানি, এই কাজ অন্যায় ৷ এই কাজে আমার সঙ্গে কেউ ছিল না ৷ আমি একাই করেছি ৷" যদিও পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের একাংশের অনুমান, এই কাজ করা একজনের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ এর পিছনে নিশ্চিতভাবেই আরও মাথা রয়েছে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.